Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

বাঁধ ভেঙে কালজানির জল ঢুকে বন্দি প্রায় ৫০০ পরিবার

বাঁধ ভেঙে কালজানি নদীর জল ঢুকে কোচবিহার ২ ব্লকের আমবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত ও লাগোয়া বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দারা জলবন্দি হয়ে পড়েছেন। মঙ্গলবার রাতে এই ঘটনা ঘটেছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সন্ধ্যের পর কালজানি ভয়াল হয়ে ওঠে।

কালজানির জলে বন্দি। কোচবিহারে।

কালজানির জলে বন্দি। কোচবিহারে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কোচবিহার শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০১৪ ০২:২৩
Share: Save:

বাঁধ ভেঙে কালজানি নদীর জল ঢুকে কোচবিহার ২ ব্লকের আমবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত ও লাগোয়া বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দারা জলবন্দি হয়ে পড়েছেন। মঙ্গলবার রাতে এই ঘটনা ঘটেছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সন্ধ্যের পর কালজানি ভয়াল হয়ে ওঠে। কয়েকঘণ্টার মধ্যে দক্ষিণ আমবাড়ির গদাধর মন্দির লাগোয়া এলাকায় সেচ দফতরের তৈরি মাটির বাঁধ ভেঙে বসতি এলাকায় হু হু জল ঢুকতে শুরু করে। রাতেই জলবন্দি হয়ে পড়েন দক্ষিণ আমবাড়ি, শিকারিটারি, নামতলা, ধারেয়া, উত্তর আমবাড়ির বিস্তীর্ণ এলাকার প্রায় পাঁচ শতাধিক পরিবারের আড়াই হাজারের বেশি মানুষ।

রাতেই এলাকায় চারটি ত্রাণ শিবির খোলা হয়। ৪০০ বেশি মানুষ ওই সব শিবিরের বুধবারেও আশ্রয় নিয়েছেন। এছাড়াও অতিবৃষ্টি ও বাঁধ উপচে জল ঢুকে যাওয়ায় প্লাবিত হয়ে পড়ে কোচবিহার সদর ও তুফানগঞ্জ মহকুমার আরও অন্তত ১৫টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা। সবমিলিয়ে জেলায় ৩৭ হাজারের বেশি মানুষ জলবন্দি হয়ে পড়েছেন। ইতিমধ্যে ২০টি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। জেলার তুফানগঞ্জে রায়ডাক ১, মাথাভাঙায় মানসাই নদীর জল হলুদ সংকেতের ওপর দিয়ে বইছে। দোমহনীতে তোর্সায় লাল, আলিপুরদুয়ারে কালজানি নদীতে হলুদ সংকেত রয়েছে।

কোচবিহারের জেলাশাসক পি উল্গানাথন বুধবার বলেন, “পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নেওয়া বাসিন্দাদের মধ্যে শুকনো খাবার ও জলের পাউচ প্যাকেট দেওয়া হচ্ছে। সেচ কর্তাদের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত নদীবাঁধ মেরামতের বন্দোবস্ত করা হচ্ছে।”

ঘটনার দায় নিয়ে প্রশাসন ও সেচ দফতরের তরজাও প্রকাশ্যে এসেছে। সদরের মহকুমা শাসক বিকাশ সাহা বলেন, “প্রায় ৫০ মিটার এলাকায় কালজানির বাঁধ ভেঙে আমবাড়িতে জল ঢুকেছে। পাতলাখাওয়া, মধুপুরের মত কিছু এলাকা তোর্সার জলে প্লাবিত হয়েছে। বাঁধ মেরামতের ব্যাপারে সেচ দফতরে আগাম জানিয়েও লাভ হয়নি।” সেচ দফতরের কর্তারা অবশ্য বাঁধ ভাঙার কথা মানতে চাননি। এমনকি বাঁধ রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে উদাসীনতার অভিযোগও উড়িয়ে দিয়েছেন। সেচ দফতরের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়র সঞ্জীব সরকার বলেন, “কোথাও বাঁধ ভাঙেনি। কালজানির বাঁধের কিছু অংশের মাটি ধসে গিয়েছে। মাত্র দ্রুত মেরামতের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।”

এই পরিস্থিতিতে দুর্গতদের ক্ষোভ বেড়েছে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, দক্ষিণ আমবাড়ি ও লাগোয়া এলাকায় সেচ দফতরের তৈরি প্রায় এক কিমি তৈরি মাটির বাঁধ থাকলেও তা দেখভাল হয় না। যার জেরেই ওই বাঁধের দুটি অংশ মিলিয়ে অন্তত ৩০০ মিটার ভেঙে এবং ধসে গিয়েছে। বুধবার দুপুরেও প্রায় এক কোমর জল দাঁড়িয়ে দক্ষিণ আমবাড়ির বিস্তীর্ণ এলাকায়। নামতলা, শিকারিটারি জুড়েও জল থৈ থৈ অবস্থা। বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, পানীয় জলের কল থেকে বিঘের পর বিঘে ধান, সব্জির খেত জলে ডুবে রয়েছে। ফের পাহাড়ে বৃষ্টি হলে কালজানির বাঁধের ভেঙে যাওয়া অংশ দিয়ে জল ঢোকা নিয়ে শঙ্কিত বাসিন্দারা।

দক্ষিণ আমবাড়ির বাসিন্দা প্রমোদ মহন্ত বলেন, “বাঁধ ভেঙে জল ঢোকাতেই গোটা এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়েছে।” এলাকার বাসিন্দা মৃণাল কার্জি বলেন, “দুটি জায়গায় বাঁধ ভেঙেছে। এছাড়া রাতে বাঁধ উপচেও জল ঢোকে। এখন বাঁধের ভাঙা অংশ মেরামত হচ্ছে না।” নাটাবাড়ির বিধায়ক ও রাজ্যের পরিষদীয় সচিব রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “সেচমন্ত্রীর সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা হয়েছে। দ্রুত বাঁধ মেরামত শুরু হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

500 family kaljani coochbehar flood dam
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE