বীরপাড়া কলেজে জখম বিজেপি নেতা।
বিরোধী ছাত্র সংগঠনের সদস্যদের ভয় দেখিয়ে কোচবিহারের ৯ টি কলেজে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছাত্র সংসদ দখল করার অভিযোগ উঠল তৃণমূল ছাত্র পরিষদের বিরুদ্ধে।
জেলার ১২টি কলেজের মধ্যে ২টি কলেজে বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলি প্রার্থী দিতে পেরেছে। ১টি কলেজে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর প্রার্থীদের মধ্যে লড়াই হচ্ছে। বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলির অভিযোগ, পুলিশের মদতে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সদস্যরা বাইরের দুষ্কৃতীদের কলেজের সামনে জড়ো করে রাখে। অভিযোগ, তাঁদের প্রার্থী ছাড়া অন্য কাউকে কলেজের কাছেই ঘেঁষতে দেয়নি টিএমসিপি। কয়েকটি ক্ষেত্রে বিরোধী সংগঠনের ছাত্রদের মারধর করার অভিযোগও উঠেছে।
একই কায়দায় শিলিগুড়িতে এখনও পর্যন্ত ৪টি কলেজের ছাত্র সংসদ-ও কার্যত দখল করার অভিযোগ উঠেছে টিএমসিপি-র বিরুদ্ধে। মুন্সি প্রেমচন্দ কলেজে বিরোধী এসএফআই ছাত্র সংগঠনের কেউ টিএমসিপি-র বাধায় মনোনয়ন পত্র তুলতেই পারেননি বলে অভিযোগ। সূর্য সেন কলেজেও প্রথম দিন কাউকে মনোনয়নপত্র তুলতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ ওঠে। যদিও বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিন টিএমসিপি ৭ জন এসএফআই সদস্যকে গেট পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে মনোনয়ন তুলতে সাহায্য করে বলে দাবি করেছে। ৫৭টি আসনের মধ্যে বাকি আসনে টিএমসিপি ছাড়া আর কেউ মনোনয়ন তুলতে না পারায় ওই ছাত্র সংসদ দখল করেছে টিএমসিপি।
শিলিগুড়ি মহিলা কলেজে ২৪টি আসনের মধ্যে এ দিন ৩টিতে মনোনয়ন জমা করে এসএফআই। টিএমসিপি-র বাধার পরেও তারা ১১টি মনোনয়ন তুলতে পেরেছেন বলে দাবি করলেও এ দিন পর্যন্ত জমা করতে পারেননি। একমাত্র টিএমসিপি সমস্ত আসনে মনোনয়ন তুলেছে। এ দিন তারা তা জমাও করে। শিলিগুড়ি কলেজে ৫১টি আসনের মধ্যে ছাত্র পরিষদ সর্বাধিক ১৫টি আসনে এবং এসএফআই ১২টি আসনে মনোনয়ন তুলতে পেরেছে। সমস্ত আসনে মনোনয়ন তুলেছে একমাত্র টিএমসিপি। এই কলেজটিও তারা নিজেদের দখলে রেখেছে। টিএমসিপি-র জেলা সভাপতি নির্ণয় রায় বলেন, “অধিকাংশ কলেজে বিরোধী ছাত্র সংগঠনে কোনও সদস্যই নেই। তাই এই পরিস্থিতি।”
কোচবিহারে বিরোধী ছাত্র সংগঠনের সদস্যদের মারধরের অভিযোগ মানতে চায়নি টিএমসিপি’র রাজ্য সহসভাপতি রাহুল রায়ও। তিনি বলেন, “বিরোধী ছাত্র সংগঠনের অস্তিত্ব অধিকাংশ কলেজে নেই। তাই তারা প্রার্থী দিতে পারেনি। যেখানে সংগঠন রয়েছে সেখানে তো ওরা প্রার্থী দিয়েছে। তাই মিথ্যে অভিযোগ করার কোনও মানে হয় না।” সংগঠনের জেলা সভাপতি সাবির সাহা চৌধুরীর দাবি, ১০টি কলেজে তাঁরা জিতেছেন। ১টি কলেজে তাঁদের কিছু বেশি প্রার্থী রয়েছে। আলোচনা করে তা মিটিয়ে নেওয়া হবে।
প্রশাসন সূত্রের খবর, কোচবিহার জেলায় ১২টি কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হচ্ছে। বুধবার ছিল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করার শেষ দিন। দেখা যায়, এবিএন শীল কলেজ, কোচবিহার কলেজ, পলিটেকনিক কলেজ, দেওয়ানহাট কলেজ, দিনহাটা কলেজ, মাথাভাঙা কলেজ, তুফানগঞ্জ কলেজ, শীতলখুচি কলেজ, বক্সিরহাট কলেজে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছে টিএমসিপি। কোচবিহার শহরের বিটি অ্যান্ড ইভিনিং কলেজে টিএমসিপি-র দুটি গোষ্ঠীর প্রার্থীরা মুখোমুখি লড়াইয়ে নেমেছে। সেখানে বিরোধী ছাত্র সংগঠনের কোনও প্রার্থী নেই।
মেখলিগঞ্জ মহকুমার মেখলিগঞ্জ কলেজ এবং হলদিবাড়ি কলেজে অবশ্য প্রায় সমস্ত ছাত্র সংগঠন লড়াইয়ে নেমেছে। শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের পাশাপাশি এসএফআই, এবিভিপি এবং ডিএসও তরফে ওই কলেজ দুটিতে প্রার্থী দেওয়া হয়েছে। মেখলিগঞ্জে শাসক দলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সংগঠন শক্তিশালী করেছে বিজেপি। মহকুমাতে বামেদের শক্তি বরাবর রয়েছে। বিরোধীদের অভিযোগ, দিনহাটা, দেওয়ানহাট, মাথাভাঙা, তুফানগঞ্জ-সহ যে কলেজগুলিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছে টিএমসিপি, সেখানে সন্ত্রাস তৈরি করা হয়েছে মনোনয়ন তোলার দিন থেকে। কলেজগুলির সামনে লাঠি, লোহার রড নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল শাসক দলের দুষ্কৃতীরা।
ডিএসও-র কোচবিহার জেলা সম্পাদক স্বপন বর্মন অভিযোগ করেন, মাথাভাঙা, দিনহাটা কলেজে শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের হামলায় তাঁদের ১১ জনের বেশি ছাত্র জখম হয়েছেন। প্রতিবাদ করতে গেলে পুলিশ আক্রান্ত ছাত্রদের থানায় নিয়ে গিয়ে আটকে রাখে। সে কারণে মেখলিগঞ্জ, হলদিবাড়ি বাদে বাকি কলেজে ভোট বয়কটের ডাক দিয়েছে তারা। শাসক দলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ করেন এসএফআইয়ের কোচবিহার জেলা সম্পাদক দেবজ্যোতি রায়ও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy