বাম-বিজেপি জোট করে কুমারগঞ্জ ব্লকের সমজিয়া পঞ্চায়েত থেকে ক্ষমতাচ্যুত করল তৃণমূলকে। সোমবর বামেদের সমর্থনে ওই গ্রাম পঞ্চায়েতে ক্ষমতা দখল করল বিজেপি। সোমবার ব্লক প্রশাসনের উদ্যোগে পঞ্চায়েত কার্যালয়ে আয়োজিত ভোটাভুটিতে ১১ জন সদস্যের সমর্থন পেয়ে প্রধান নির্বাচিত হন বিজেপির ধরিত্রী রায়। উপপ্রধান হন বিজেপির নমিতা হেমব্রম। সমজিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতে মোট ১৭টি আসনের মধ্যে তৃণমূলের সমর্থনে ভোট পড়ে ৬টি।
এদিন নির্বাচনের পর বিডিও-র দফতর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিজেপির প্রধান ধরিত্রী দেবীকে দায়িত্ব হস্তান্তর করা হয়। ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের ক্ষমতা থেকে তৃণমূলকে হটাতে বিজেপি তাদের সমর্থন তুলে নিয়ে তৃণমূল প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা এনেছিল। বাম সদস্যরাও বিজেপিকে সমর্থন করে কুমারগঞ্জের বিডিও ভাস্কর মজুমদার বলেন, “এই পঞ্চায়েতে মোট ১৭টি আসনের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠরা ১১টি ভোট পান। ধরিত্রী রায়কে প্রধান নির্বাচন করা হয়েছে।”
গত ২১ অক্টোবর পঞ্চায়েতের সংখ্যাগরিষ্ঠ বাম-বিজেপি সদস্যরা লিখিতভাবে বিডিও-র কাছে তৃণমূল প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা পেশ করেছিলেন। ফলে অনাস্থা প্রস্তাব নথিভুক্ত হওয়ার পরে বর্তমান প্রধানকে অপসারণের মাধ্যমে নতুন প্রধান নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু করে বিডিও-র দফতর। এদিন ওই গ্রামপঞ্চায়েতে সভা ডাকা হয়েছিল।
গত ২০১৩ সালে পঞ্চায়েত ভোটের পর দক্ষিণ দিনাজপুরে ৬৫টি গ্রাম পঞ্চায়েতের অধিকাংশই তৃণমূল দখল করে। বিরোধীদেরও অনেকে তৃণমূলে চলে যান। ১৪ মাসের মধ্যে জেলায় এই প্রথম উল্টো হাওয়া টেনে আস্ত একটি গ্রাম পঞ্চায়েতের ক্ষমতা থেকে তৃণমূলকে সরিয়ে বিরোধীরা দখল করে নেওয়ায় রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে আলোড়ন পড়েছে।
তৃণমূলের জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্র অভিযোগ করে বলেন, “বামেদের মানুষ পরিত্যাগ করেছেন। তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই করতে বামেদের বিজেপির সঙ্গ নিতে হচ্ছে, সব জায়গাতেই ওরা এটা করছে।” সিপিএমের জেলা সম্পাদক মানবেশ চৌধুরীর দাবি, “স্থানীয় ভাবে ওই জোট হয়েছে। তাতে আমাদের অনুমোদন নেই। তা ছাড়া এর আগে বিজেপির হাত ধরে তৃণমূল ওই পঞ্চায়েতের ক্ষমতা দখল করেছিল।”
সমজিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতে মোট ১৭টি আসনের মধ্যে তৃণমূল ৫, বিজেপি ৪, সিপিএম ৫, আরএসপি ২ এবং পিডিসিআইয়ের ১টি আসন রয়েছে। তৃণমূল, বিজেপি এবং পিডিসিআই মিলে ১০ সদস্য জোট করে ওই পঞ্চায়েত দখল করেছিল। তৃণমূলের প্রধান এবং বিজেপির উপপ্রধান পদটি ভাগ করে নিয়ে পঞ্চায়েতের বোর্ড পরিচালিত হচ্ছিল। বিরোধী আসনে ছিল সিপিএম-আরএসপির বামজোট।
কিন্তু মাত্র ১৪ মাস কাটতেই কী এমন হল, যাতে তৃণমূলের সঙ্গ ছেড়ে বামেদের দিকে বিজেপিকে ঝুঁকতে হল? বিজেপির কুমারগঞ্জ ব্লক সভাপতি সঞ্জীব রায়ের দাবি, “দুর্নীতিমুক্ত পঞ্চায়েত গঠনের লক্ষ নিয়েই আমরা তৃণমূলের সঙ্গে জোট বেঁধেছিলাম। কিন্তু গত ১৪ মাসেই গ্রাম উন্নয়নের নামে ব্যাপক অনিয়মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন তৃণমূল সদস্যরা। বিনা টেন্ডারে রাস্তা, কালভার্ট থেকে গ্রাম উন্নয়নের নামে নয়ছয় চলতে থাকে।” ঠিকাদারের কাছে তোলাবাজি এবং ইন্দিরা আবাসের ঘর দেওয়ার নামে উপভোক্তা গরিব মানুষের কাছে টাকা আদায় করা হয় বলেও অভিযোগ তাঁর।
বিজেপির বিরুদ্ধে পাল্টা অনিয়মের অভিযোগ করেছেন কুমারগঞ্জের তৃণমূল ব্লক সভাপতি শুকলাল হাঁসদা। তিনি বলেন, “বামেদের ঠেকাতে বিজেপির সঙ্গে জোট বেঁধে সমজিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন করেছিলাম। আমাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ মিথ্যা। বরং আমরা বিজেপিকে উপপ্রধান পদ দিয়ে বাকি সদস্যদের উন্নয়ন কাজের ক্ষেত্রে যতটা গুরুত্ব দিয়েছিলাম, এখন সিপিএমের হাত ধরে অচিরেই বিজেপি তা টের পেয়ে যাবে। আমরা সবই নজরে রাখব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy