Advertisement
০৮ মে ২০২৪

বৃষ্টিই নেই, উৎপাদন মার খাবে মাছ চাষে

বৃষ্টির অভাবে মাছের উৎপাদনে মার খাওয়ার আশঙ্কা কোচবিহারে। মরসুম শুরু হয়ে গেলেও জেলার কোথাও জলের অভাবে মাছ চাষ শুরু হতে পারেনি। যে দু-একটি পুকুরে মাছ রয়েছে সেগুলিও তুলে অল্প দামে বিক্রি করে দিতে হচ্ছে বলে কৃষকরা জানিয়েছেন। শুধু তাই নয়, সরকারের তরফে ৫০ লক্ষ টাকার মাছ চাষিদের মধ্যে বিলি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও তা বাস্তবায়িত করতে পারছেন না মৎস্য দফতরের কর্তারা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কোচবিহার শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০১৪ ০১:৪৫
Share: Save:

বৃষ্টির অভাবে মাছের উৎপাদনে মার খাওয়ার আশঙ্কা কোচবিহারে। মরসুম শুরু হয়ে গেলেও জেলার কোথাও জলের অভাবে মাছ চাষ শুরু হতে পারেনি। যে দু-একটি পুকুরে মাছ রয়েছে সেগুলিও তুলে অল্প দামে বিক্রি করে দিতে হচ্ছে বলে কৃষকরা জানিয়েছেন। শুধু তাই নয়, সরকারের তরফে ৫০ লক্ষ টাকার মাছ চাষিদের মধ্যে বিলি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও তা বাস্তবায়িত করতে পারছেন না মৎস্য দফতরের কর্তারা। মাছের জন্যে হন্যে হয়ে ঘুরলেও চারা পোনা মিলছে না কোথাও। এই অবস্থায়, বৃষ্টির অপেক্ষায় রয়েছেন মাছ চাষি থেকে দফতরের আধিকারিক সকলে। জেলা মৎস্য দফতরের আধিকারিক অলোক প্রহরাজ বলেছেন, “বৃষ্টি না হওয়ায় মাছ চাষে চরম সঙ্কট তৈরি হয়েছে। চাষিরা বিপাকে পড়েছেন। পোনা মাছ না মেলায় আমরাও বিলি করতে পারছি না। কোথাও পুকুর অথবা খালে যেটুকু জল রয়েছে তাতে কাজ হচ্ছে না। এ বারে কতটা উৎপাদন হবে তা বুঝতে পারছি না।” মৎস্য দফতর সূত্রে খবর, জেলায় এক লক্ষেরও বেশি বাসিন্দা মাছ চাষে নির্ভরশীল। এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় থেকে প্রায় তিন ধরে জেলার বেশ কয়েকটি জায়গায় মাছের পোনা চাষ শুরু হয়। বিভিন্ন খামারগুলিতে ডিম থেকে পোনা তৈরি করার পর তা বিক্রি করা হয়। সদর মহকুমার কলাকাটা সহ বেশ কয়েকটি জায়গায় পোনা মাছ বিক্রির হাট বসে যায়। এপ্রিল মাছ শেষ হতে চললেও পোনা বিক্রির হাট বসেনি। কোথাও চাষিরা ছোট ছোট খাল তৈরি করে বসে রয়েছেন। বৃষ্টির অপেক্ষায় কলাকাটায় প্রায় ২০০ জন বাসিন্দা পোনা মাছ বিক্রির সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। গোটা মরসুমে সেখানে এক কোটি টাকার উপরে ব্যবসা হয়। এ বারে সকলের মাথায় হাত পড়েছে। এলাকার এক মাছ ব্যবসায়ী তরুণ দত্ত বলেছেন, “অন্য বার এই সময় ডিম থেকে পোনা তৈরি হয়ে যায়। বিক্রিও শুরু হয়ে যায়। এ বারে জলের অভাবে ডিম ফোটাতে পারিনি। এ রকম আর কিছু দিন থাকলে আমাদের বহু টাকা ক্ষতি হয়ে যাবে।” ওই ব্যবসায়ীদের অনেকে জানান, মূলত নৈহাটি থেকে ডিম এনে কোচবিহারে মাছ চাষ হয়। অনেকে আবার মালদহ, মুর্শিদাবাদ থেকে ডিম নিয়ে আসেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আবার স্থানীয় চাষিরাও মাছের ডিম তৈরির ব্যবস্থা করেন। ওই ডিম থেকে পোনা তৈরি হয়। আলিপুর দুয়ার, দাসপুর সহ ডুয়ার্সের বিভিন্ন জায়গা থেকেও বেশ কিছু পোনা মাছ কোচবিহার জেলায় আসে বলে জানা গিয়েছে। এ বারে সর্বত্র বৃষ্টির অভাবে একই অবস্থা। বেশ কিছু পুকুরে সামান্য জল রয়েছে। মাস সাতেক আগে সেগুলিতে মাছ ছাড়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। জলের অভাবে সেই মাছ পরিণত হওয়ার আগেই পুকুর থেকে তুলে বিক্রি করে দিতে হচ্ছে। মাছ চাষ ও ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন বাবু নন্দী। বাবুবাবু বলেন, “আমার বেশ কয়েকটি পুকুরে জল তলানিতে নেমেছে। জলে অক্সিজেন না পেয়ে মাছ ভেসে উঠছে। বেশ কিছু মাছ মরে গিয়েছে। তাই পরিণত হওয়ার আগেই সেগুলি তুলে বিক্রি করে দিয়েছি। তাতে ব্যবসায় ক্ষতি হচ্ছে।” জেলা মৎস্য আধিকারিক অলোকবাবু জানিয়েছেন, গত বছর জেলায় প্রায় ১৮ হাজার টন মাছ চাষ হয়। এ বারে লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছিল ২১ হাজার টন। তবে এখন বৃষ্টি হচ্ছে না। এমন চললে উৎপাদন কোথায় দাঁড়াবে তা বোঝা যাচ্ছে না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

pisciculture
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE