এমন যানজটেই রোজ নাকাল হতে হয় বাসিন্দা ও নিত্যযাত্রীদের। নিজস্ব চিত্র।
সুজাপুর থেকে কালিয়াচক দশ কিলোমিটার রাস্তা। এই রাস্তায় প্রতিদিন কমপক্ষে ২০ থেকে ২৫টি গাড়ি বিকল হয়ে পড়ে থাকে। চাকা গর্তে পড়ায় কোনও গাড়ি রাস্তার পাশে নয়নজুলিতে উল্টে যায়। আর সেই অবস্থাতেই পড়ে থাকে। ফলে বেহাল ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে নিত্যদিন যানজট লেগেই রয়েছে। যাত্রীদের এই দুর্ভোগ নিয়ে প্রশাসনের কোনও হেলদোল নেই বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক সারাইয়ের দাবিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল আন্দোলনে নামার হুমকি দিলেও তা শুধু কাগজে কলমেই থেকে গিয়েছে।
রাস্তা যখন ভাল ছিল তখন মালদহ শহরে থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে কালিয়াচকের মোজমপুর হাইস্কুলে যেতে সময় লাগত বড় জোর ৪০ মিনিট। ওই স্কুলের শিক্ষক রমজান শেখ ও চন্দন মন্ডলরা জানান, এখন বাড়ি থেকে দেড় ঘণ্টা আগে নিজস্ব গাড়িতে বেরিয়েও সময় মতো স্কুলে পৌঁছোতে পারেন না তারা। শুধু মোজমপুর হাইস্কুলের শিক্ষকদেরই নয়, মালদহ থেকে যারা কালিয়াচক ও বৈষ্ণবনগরে স্কুলে কিংবা ব্লক অফিসে চাকরি করতে যান, তাদেরও প্রতিদিন একই দুর্ভোগের মুখে পড়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। বেহাল জাতীয় সড়কে সব থেকে করুণ অবস্থা কালিয়াচক থানার পুলিশকর্মী ও অফিসারদের। কোনও ঘটনার খবর পাওয়ার পরেও বেহাল রাস্তার জন্য সময় মতো ঘটনাস্থলে পৌঁছোতে পারছেন না বলে অভিযোগ পুলিশকর্মীদের। কালিয়াচক থানার আইসি শুভব্রত ঘোষ বলেন, “জাতীয় সড়কের যা হাল, তাতে প্রতিদিই যানজট হচ্ছে। সময় মতো কোথাও যেতে পারছি না। যতদিন যাচ্ছে জাতীয় সড়কের হাল ততই খারাপ হচ্ছে। একবার তল্লাশি করে জাতীয় সড়ক হয়ে থানায় ফিরলে আর জাতীয় সড়কে যেতে ইচ্ছে করে না।”
এমনিতেই বেহাল ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক। তার উপর কালিয়াচকের চৌরঙ্গা মোড়ের যানজটে আটকে পড়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কলকাতা ও শিলিগুড়িগামী গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকছে। চৌরঙ্গীর মোড়ে রাস্তা দখল করে থাকা দোকানঘরগুলি জেলা প্রশাসন সরিয়ে পরিষ্কার করে দিলেও জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ সেখানে চারলেনের কাজ শুরু না করায় ফের জাতীয় সড়ক বেদখল হয়ে গিয়েছে। ফল স্বরূপ কালিয়াচকের ৮০ ফুট চওড়া চৌরঙ্গী মোড় ২০ ফুটে দাঁড়িয়েছে। কালিয়াচকের চৌরঙ্গী মোড়ে চারলেনের কাজ শুরু না হওয়ার জন্য জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ জেলা প্রশাসনকেই দুষছে। তাঁদের অভিযোগ, চৌরঙ্গীতে চারলেনের কাজ শুরু করার জন্য জেলা প্রশাসনকে মাটির তলায় জলের পাইপ ও মাটির উপরে বিদ্যুতের খুঁটি সরানোর জন্য বলা হয়েছিল। কিন্তু চার মাস পেরিয়ে যাওয়ার পরেও জলের পাইপ ও বিদ্যুতের খুঁটি সরেনি। ফলে চৌরঙ্গীতে চারলেনের কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। এ ব্যাপারে জেলাশাসক শরদকুমার দ্বিবেদি বলেন, জলের পাইপ ও বিদ্যুতের খুঁটি সরানোর জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরকে বলা হয়েছে।
কালিয়াচক থেকে মালদহ ২৫ কিলোমিটার বেহাল জাতীয় সড়কের জন্য বাইরের কোনও শিল্পোদ্যোগী মালদহে আসতে চাইছেন না বলে জানিয়েছেন মালদহ মার্চেন্ট চেম্বার অফ কমার্সের সম্পাদক উজ্বল সাহা। বেহাল জাতীয় সড়ক মেরামত ও দ্রুত সম্প্রসারণের দাবিতে সোমবার জেলাশাসককে স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন সংগঠনের সম্পাদক। তিনি বলেন, “রাজ্যের বাইরের বহু শিল্পপতি মালদহে আম ও রেশম কারখানা গড়ে তোলায় আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। কিন্তু জাতীয় সড়কের বেহাল অবস্থা দেখে পিছু হটেছেন। বেহাল জাতীয় সড়কের জন্য জেলার শিল্প মার খাচ্ছে। এমনকী বাইরে থেকে পণ্য নিয়ে ট্রাক মালদহে আসতে চাইছে না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy