Advertisement
E-Paper

বছর ঘুরলেও অধরা প্রতারণায় অভিযুক্ত

সারদা-কাণ্ড প্রকাশ্যে আসার পরে কাশ্মীরে হোটেলে লুকিয়ে থাকা সুদীপ্ত সেনকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। অথচ বছর ঘুরতে চললেও সাত কোটি টাকার প্রতারণায় অভিযুক্ত ডুয়ার্সের বঙ্কিম দেবনাথ কেন ধরা পড়েনি সেই প্রশ্নে সরব ফালাকাটার জটেশ্বরের বাসিন্দারা। এই ঘটনায় পুলিশ ও সরকারের নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে ইতিমধ্যে লোকসভা নির্বাচনে প্রচারে নেমেছেন বামেরা।

নিলয় দাস

শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০১৪ ০১:৩৮

সারদা-কাণ্ড প্রকাশ্যে আসার পরে কাশ্মীরে হোটেলে লুকিয়ে থাকা সুদীপ্ত সেনকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। অথচ বছর ঘুরতে চললেও সাত কোটি টাকার প্রতারণায় অভিযুক্ত ডুয়ার্সের বঙ্কিম দেবনাথ কেন ধরা পড়েনি সেই প্রশ্নে সরব ফালাকাটার জটেশ্বরের বাসিন্দারা। এই ঘটনায় পুলিশ ও সরকারের নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে ইতিমধ্যে লোকসভা নির্বাচনে প্রচারে নেমেছেন বামেরা। বিরোধীদের ওই প্রচারে অস্বস্তিতে তৃণমূলের নেতারা। তবে পুলিশের নামে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে লোকসভা নির্বাচনের আগে বঙ্কিম দেবনাথকে গ্রেফতারের দাবিতে সরব তৃণমূল নেতৃত্বও।

গত ২০১২ সালের নভেম্বর মাসে শেয়ার বাজারে ১৫ দিনে দ্বিগুণ টাকা পাইয়ে দেওয়ার কারবার শুরু করেছিল ফালাকাটার জটেশ্বরের যুবক বঙ্কিম দেবনাথ। প্রথম দিকে কিছু লোক সামান্য অর্থ তার কাছে জমা দিয়ে নির্ধারিত দিনে দ্বিগুণ টাকা পেয়েও যান। দ্বিগুণ টাকা হাতে পাওয়ার পর জমানো টাকা এবং সোনা গয়না বিক্রি করে ওই সমস্ত লোকজন বঙ্কিমের কাছে টাকা ঢালতে শুরু করে দেন। এ ভাবে কিছু দিন চলার পর মুখে মুখে বঙ্কিমের নাম ছড়াতে থাকে জটেশ্বর-সহ বীরপাড়া, ফালাকাটা, ধূপগুড়ি, শিলিগুড়িতে। অনেকে বঙ্কিমের কাছে টাকা দিতে শুরু করে দেন। নড়চড়ে বসে পুলিশ ও জেলা প্রশাসন।

গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে বঙ্কিমের কাছে টানা না রাখার জন্য আবেদন করে মাইকে প্রচার করলে স্থানীয় আমানতকারীরা খেপে গিয়ে পুলিশের জিপ পুড়িয়ে দেন। ক্ষুব্ধ লোকজনকে বোঝাতে সে সময় এসপি জটেশ্বরে ছুটে আসেন। বঙ্কিমও টাকা ফেরত দেবে বলে আশ্বাস দেয়। সামান্য কিছু টাকা ফেরত দিয়ে মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে পরিবার নিয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায় বঙ্কিম। বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রায় ৭ কোটি টাকা নিয়ে গা ঢাকা দেয় বঙ্কিম। তার বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ জমা পড়ে থানায়। পুলিশ বঙ্কিমের মা সোমা দেবনাথকে ধরতে পারলেও তার কোনও হদিস করতে পারেনি। মোবাইল নম্বরের সূত্রে গত য২৪ মে শেষবার অসমের গোলকগঞ্জ এলাকায় বঙ্কিমের অবস্থান খুঁজে পায় পুলিশ। বঙ্কিমের মামা বাড়ি অসমের গোলকগঞ্জ এলাকায়। সেখানে গিয়ে তদন্তকারী অফিসার জানতে পারেন, বঙ্কিমের মামা নারায়ণ দেবনাথের নামেও রেল দফতরে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নাম করে ২০১২ সালে ৫০ লক্ষ টাকা হাতিয়ে পরিবার নিয়ে গা ঢাকা দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। অসমে গিয়ে তদন্ত করলেও বঙ্কিম বা তার বাবা ও ভাইয়ের হদিস মেলেনি।

এর পরেও পুলিশ বঙ্কিমের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া প্রতারণার মামলার চার্জশিট দেয়নি কেন তা নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠেছে। ফালাকাটা থানার পুলিশকর্মীদের একাংশ জানান, বড় কর্তারা তেমন আগ্রহ না দেখানোয় মামলা আর এগোচ্ছে না। উত্তরবঙ্গের আইজি জাভেদ শামিম অবশ্য বিষয়টি জানেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমি দায়িত্ব নেওয়ার আগের ঘটনা। বিষয়টি আমি জানি না। এর বাইরে আর কিছু বলার নেই।” তবে বঙ্কিম ধরা পড়লেই চার্জশিট দেওয়া হবে বলে ফালাকাটা থানার এক অফিসার জানান।

লোকসভা নির্বাচনের মুখে ফের এই প্রতারণা মামলার বিষয়টি ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। সিপিএম-এর ফালাকাটা জোনাল সম্পাদক তথা ওই গ্রামের বাসিন্দা শ্যামলকলি বসু বলেন, “এই সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। বঙ্কিমের মতো প্রতারককে ধরার কোনও চেষ্টাই পুলিশ করছে না। আমরা তো বিষয়টি প্রচার করছি।”

জটেশ্বরের তৃণমূল নেতা সমর পাল অস্বস্তির সুরে বলেন, “পুলিশ যে কী করছে বুঝতে পারছি না। আমরা বার বার পুলিশকে বঙ্কিমকে ধরার জন্য চাপ দিচ্ছি। ওঁরা গা করছেন না। নির্বাচনে কিছুটা হলেও প্রভাব পড়বে বলে মনে করছি। তবে শীঘ্রই তাকে গ্রেফতারের জন্য যাতে পুলিশকে চাপ দেওয়া হয়, সেই জন্য বিধায়ককে বলব।” ফালাকাটার বিধায়ক অনিল অধিকারীর কথায়, “বিষয়টি পুলিশকে ফের জানানো হবে। তবে এলাকার প্রতারিতরা অবশ্য আজও বঙ্কিম অধরা থাকার বিষয়টি মেনে নিতে পারছেন না।” এক সময় পাটের ব্যবসা করে সংসার চালাতেন জটেশ্বরের বাসিন্দা মদন দত্ত। প্রথমবার এক লক্ষ টাকা বঙ্কিমকে দিয়ে দু’লক্ষ টাকা পাবার পর সঞ্চয়ের সমস্ত অর্থ, সাড়ে সাত লক্ষ টাকা বঙ্কিমকে দেন। ওই টাকা আর ফেরত পাননি তিনি। গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। ধারদেনা করে এখন বাজারে ঠেলা গাড়িতে চায়ের দোকান করে কোনও মতে সংসার চালাচ্ছেন তিনি। তাঁর স্ত্রী গীতাদেবীর কথায়, “আমাদের গোটা পরিবারকে পথে বসিয়েছে বঙ্কিম। স্বামী অসুস্থ হওয়ার পর এক বাসিন্দা তার চিকিৎসা করান। পুলিশ সুদীপ্ত সেন কে ধরতে পারলেও কেন বঙ্কিমকে ধরতে পারছে না তা বুঝতে পারছি না।” সাইকেল ব্যবসায়ী প্রমোদ অগ্রবাল নিজের জমানো চার লক্ষ টাকা ও কলকাতার এক বন্ধুর তিন লক্ষ টাকা বঙ্কিমকে দেন। সে টাকা তিনি ফেরত পাননি। প্রমোদবাবুর কথায়, “এক বছর ধরে একটা ছেলে লুকিয়ে তাঁর হদিস করতে কেন পুলিশ পারছে না তা বুঝতে পারছি না।”

niloy das falakata cheating fraud scams bankim debnath
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy