টানা ২৪ ঘণ্টার ও বেশি। বুধবার বিকাল থেকে বৃহস্পতিবার রাত। বিনোদন পার্ক থেকে রেঁস্তোরা, শপিং মল থেকে পানশালা। বাদ নেই কোথাও। শুধু ছোট-বড় মাথার অগুনতি সারি। বেশির ভাগ জায়গায় তিল ধারণের জায়গা নেই। বর্ষবরণ বিকাল থেকে নতুন বছরের প্রথম দিন এই ভাবেই কাটল বৃহত্তর শিলিগুড়ি শহরের।
আর আনন্দ উত্সবে সামিল হওয়া বেপরোয়া বাসিন্দাদের সামলাতে ‘হিমশিম’ খেলেন পুলিশ কর্মীরা। বিশেষ করে বাইক বাহিনীর ‘তান্ডবে’ বহু এলাকায় বাসিন্দারা সমস্যা পড়ে যান। শেষে রাস্তা নেমে ট্রাফিক সামলান পুলিশ কর্তারাও।
কোথাও বেশি গতিতে গাড়ি চালানো, কোথাও বা মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি নিয়ে ঘোরাঘুরির বিস্তর অভিযোগও সামনে আসে মামলাও হল প্রচুর। পুলিশের হিসাব অনুসারে, বর্ষবরণের দিনই রাত অবধি ১৪২ টি মামলা করা হয়েছে। বহু চালককে সতর্ক করা হলেও ৮ জনকে ‘বেশি’ মদ্যপ অবস্থায় থাকায় মামলা করে জরিমানাও করা হয়। শুধুমাত্র ভক্তিনগর ট্রাফিক গার্ড এলাকায় ৩৬টি মামলা হয়েছে। হিলকার্ট রোড, দাগাপুর, মাটিগাড়া, সেবক রোডে ওই রাতে রাস্তা গাড়ি নিয়ে ‘গড়াগড়ি’ খেতেও দেখা গিয়েছে যুবকদের। ট্রাফিক লাইট ব্যবস্থা চালু থাকলেও তা না মানার অভিযোগও ওঠে। আবার বিভিন্ন দিক দিয়ে ওভারটেকিং প্রবণতায় নাজেহাল হল পথচারীরা। গভীর রাত তিনটে অবধি ওই অবস্থাই চলে।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে নতুন বছরে শান্ত শহরে মানুষের ‘ঢল’ নামে দুপুর হতেই। বুধবার যেখানে গাড়ি চালকদের সামলাতে নাজেহাল হতে হয় পুলিশ কর্মীদের, সেখানে বৃহস্পতিবার দেখা দেয় তীব্র যানজট। পুলিশ সূত্রের খবর, বছরের শেষে রাতে প্রায় ৪টা অবধি ডিউটি করতে হয়েছে পুলিশ কর্মীদের। এ দিন সেক্ষেত্রে কিছু পুলিশ কর্মী কম থাকা এবং কিছু বিশ্রামে থাকায় দুপুরেই শহরের কিছু এলাকায় চলাফেরা করার সমস্যা দেখা দেয়।
সমস্যার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার জগমোহনও। তিনি বলেন, “বর্ষবরণের রাত নিয়ে আমরা বেশি চিন্তায় থাকি। সকলেই আনন্দে সামিল হন। সেখানে আমরাও খুব কড়াকড়ি করার পক্ষপাতী না। তবে কিছু ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেওয়া ছাড়া উপায় ছিল না।” তিনি জানান, গভীর রাত অবধি পুলিশ কর্মীরা রাস্তা থাকায় এ দিন কিছু পুলিশ কর্মী বেলা অবধি কম ছিলেন। তাই যানজট, পার্কিং সমস্যা সামনে আসে। তবে অভিযোগ বা খবর পাওয়া মাত্র ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এ দিন উত্তরারয়ণ উপনগরী এবং দুই মাইল এলাকার শপিং মলের ভিতরে এবং বাইরে ঠিকঠাক দাঁড়ানোর জায়গা পাওয়া মুশকিল হয়। মহানন্দা নদী লাগোয়া শিলিগুড়ি পুরসভারও সূর্যসেন পার্কেরও একই হাল ছিল। ওই এলাকাগুলিতে যাওয়া বাসিন্দাদের অনেকেই জানিয়েছেন, নিউ ইয়ার নাইটে পুলিশ অনুষ্ঠানস্থলগুলির পার্কিং, আইন শৃঙ্খলা’র মত বিষয়গুলি নিয়ে আগে থেকেই পরিকল্পনা করে। সেই মত কিছু কিছু বিধি নিষেধও থাকে। কিন্তু নতুন বছরের প্রথম দিন (সরকারি ছুটিও ছিল) তেমন কিছু না থাকায় পার্কিং, যানজটের মত সমস্যা হয়। কচিকাঁচাদের নিয়ে নাজাহাল হন অভিভাবকেরা। যদিও বিকালের পর ডিসি (সদর) ওজি পাল এবং এসিপি (ট্রাফিক) বিশ্বনাথ হালদারের হস্তক্ষেপে কিছুটা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
বড়দিন, ইংরেজি নববর্ষকে সামনে রেখে শহরের বিভিন্ন এলাকা আলোয় সাজিয়ে তোলা হয়েছিল। আলোয় সাজানো হয়েছিল বিভিন্ন পার্ক, রাস্তা। বসানো হয়েছিল আলোর তোরণ। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবে’র নির্দেশে রাজ্য পর্যটন দফতর ৯ লক্ষ টাকা খরচ করে ওই ব্যবস্থা করেছিল। এদিনই ছিল শহরের আলোর মালার শেষ দিন। পর্যটন দফতরের জয়েন্ট ডাইরেক্টর (নর্থ) সুনীল অগ্রবাল জানান, গত দুই বছর আমরা এই ব্যবস্থা করলাম। পরবর্তীতে আবার সরকারি নির্দেশ পেলে একইভাবে শহর সাজানো হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy