এই গেট পেরিয়েই যেতে হয় ভুটানে।—নিজস্ব চিত্র।
কিছুদিন আগের ঘটনা। মুম্বই থেকে কলকাতা হয়ে বিকেলে বাগডোগরা বিমানবন্দরে পৌঁছন এক সোনা ব্যবসায়ীর পরিবার। যাওয়ার কথা ভুটান। বিমানের সময়সূচি পরিবর্তনের জন্য শিলিগুড়ি পৌঁছতেই দুপুরের বদলে বিকেল হয়ে যায়। তার পরে গাড়ি নিয়ে ছ’জনের পরিবারটি যখন ভারত-ভুটান সীমান্তের জয়গাঁ পৌঁছন তখন সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে। ‘এন্ট্রি পারমিট’ নেওয়ার জন্য ভুটানের ফুন্টশেলিং-এর অভিবাসন দফতরও বন্ধ। পারমিট না মেলায় বাড়তি টাকা খরচ হয়ে পরিবারটিকে একদিন জয়গাঁ শহরেই থাকতে হয়।
কলকাতা থেকে এক সরকারি অফিসার স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে ট্রেনে এসেছিলেন শিলিগুড়ি। তাঁরও ট্রেন লেটের জন্য জয়গাঁ পৌঁছাতে প্রায় বিকেল সাড়ে ৫টা বেজে যায়। যথারীতি বন্ধ হয়ে যায় ভুটানের ওই দফতর। সরকারি অফিসার হওয়ায় এক পরিচিতের মাধ্যমে তিনি যোগাযোগ করেন ভুটানের ভারতীয় দূতাবাসের এক অফিসারের সঙ্গে। শেষে রাতে মেলে ‘এন্ট্রি পারমিট’। পরিবারটি যখন ভুটানের রাজধানী থিম্পু পৌঁছয় তখন প্রায় মাঝরাত।
‘এন্ট্রি পারমিট’ নিয়ে ভারতীয় পর্যটকদের এই সব সমস্যা মেটাতেই উদ্যোগী হয়েছে ইন্দো ভুটান ফ্রেন্ডশিপ অ্যাসোসিয়েশন (আইবিএফএ)। সোমবার ভুটান থেকে আইবিএফএ-এর সেক্রেটারি জেনারেল রাজ বসুকে ভারতীয় পর্যটকদের জন্য নতুন কিছু ব্যবস্থা চালুর কথা জানানো হয়েছে। ভুটানের তরফে জানানো হয়েছে, নতুন ব্যবস্থায় কয়েকদিন ধরে কেবলমাত্র পর্যটকদের জন্যই আলাদা তিনটি কাউন্টার চালু হয়েছে। এতে লাইনে দাঁড়িয়ে অন্যদের সঙ্গে পারমিট সংগ্রহের ঝামেলা থাকছে না। ভিআইপি থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের জন্য বিশেষ বিশ্রামাগারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাগডোগরা বা এনজেপি থেকে দেরি আসা পর্যটকদের জন্য ফুন্টশেলিং-এর ভুটান গেটের অফিস থেকে বিশেষ পারমিটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অভিবাসন দফতরে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা অবধি পারমিট দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে দ্রুত ভুটান গেটে লাগোয়া এলাকায় নতুন ভবনের কাজ শেষ হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে, তাতে পর্যটকদের জন্যই আলাদা আটটি কাউন্টার করা হচ্ছে। ভুটানের অভিবাসন দফতরের তরফে কয়েকজন অফিসার শুধু বলেছেন, “সরকারিভাবে যা যা ব্যবস্থা হয়েছে সবই ভারতের বিভিন্ন দফতর ও সংগঠনকে জানানো হয়েছে।”
সড়ক পথে ভুটানে যেতে ফুন্টশেলিং থেকে পর্যটকদের ভারতীয় সচিত্র পরিচয়পত্র দেখিয়ে থিম্পু ও পারোর জন্য পারমিট নিতে হয়। সচিত্র পরিচয়পত্র না থাকলে ভারতীয় দূতাবাস থেকে বিশেষ আইডেনটিফেকেশন স্লিপ নিয়ে পারমিট করতে হয়। থিম্পু বা পারো ছাড়াও পুনাখা, ওয়াংদি, বুমথাং, মঙ্গার, হা ভ্যালি ঘোরার জন্য থিম্পু অভিবাসন দফতর থেকে স্পেশাল এরিয়া পারমিট নিতে হয়। বিমানে ভুটানে গেলে পারো বিমানবন্দর থেকেই পারমিট দেওয়া হয়। মূলত ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ নভেম্বর অবধি ভুটানের পর্যটন মরসুম। পারমিট পেতে পর্যটকদের আলাদা কাউন্টার না থাকায় সমস্যা ছিলই। দলবেঁধে ভুটানে কাজ করতে যাওয়া শ্রমিক বা কর্মীদের লাইন থাকলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পারমিট পেতে লেগে যেত পর্যটকদের। রাজবাবু বলেন, “নয়া ব্যবস্থায় পর্যটক হয়রানি কমবে।”
গত জুন মাসেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ভুটান সফরে গিয়েছিলেন। দুই দেশের সম্পর্ক বরাবরের মত মজবুত রাখার উপর প্রধানমন্ত্রী জোর দেন। তার পরেই ভুটানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এই পদক্ষেপে খুশি এদেশের পর্যটনের সঙ্গে জড়িত সংগঠনগুলি। প্যাসেফিক এশিয়া ট্রাভেল অ্যাসোসিয়েশনের ইন্ডাস্ট্রি কাউন্সিল সদস্য সম্রাট সান্যাল বা জয়গাঁ ট্রাভেনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোয়িশনের সভাপতি সুরেশ ঠাকুরি আলাদাভাবে বলেন, “নতুন ব্যবস্থা অনেক বেশি ‘টুরিস্ট ফ্রেন্ডলি’ হয়েছে। আমরা অনেকদিন ধরেই এই দাবি করছিলাম।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy