লোকসভা ভোটের জন্য আসা কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের যাতায়াতের জন্য উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের ১৭৫টি বাস তুলেছে পরিবহণ দফতর। ফলে, অসম, বিহার, ঝাড়খন্ডের মত ভিন্ন রাজ্যের বিভিন্ন রুটের পরিষেবায় বিঘ্ন ঘটছে। কোচবিহার সহ উত্তরের ৬ জেলার নানা রুটেও যাত্রীরা ভোগান্তির মুখে বলে অভিযোগ। উত্তরবঙ্গে রাজ্যের প্রথম দফা নির্বাচনের মুখে এপ্রিলের তৃতীয় সপ্তাহের শুরুতে ওই বাসগুলি তুলে নেওয়া হয় মে মাসের প্রথম সপ্তাহ পেরোতে চললেও ওই সব বাসের একটিও ফেরেনি। রাজ্যে লোকসভা নির্বাচনের পর ভোট গণনা পর্ব পুরোপুরি না মেটা পর্যন্ত ওই সব বাসের ফেরার সম্ভাবনা নেই। এই পরিস্থিতিততে দুই সপ্তাহ ভোগান্তির আশঙ্কায় উদ্বেগে নিত্যযাত্রীরা।
উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর জয়দেব ঠাকুর যাত্রী ভোগান্তির কথা মানতে চাননি। তার দাবি, “নির্বাচনের কাজে সংস্থার ১৭৫ বাস ভিন জেলায় আছে। আগাম আমরা কিছু বিকল বাস মেরামত করে রেখেছিলাম। তা ছাড়া ভোটের সময় সাধারণ মানুষের যাতায়াতের প্রবণতা এমনিতেই কমে যায়। তাই সাধারণ মানুষের সমস্যা হচ্ছে না। কেউ আমার কাছে এ নিয়ে অভিযোগ করেননি।” সমস্যার কথা স্বীকার করে নিগমের পরিচালন বোর্ডের এক সদস্য আবদুল জলিল আহমেদ অবশ্য বলেছেন, “ভোটের কাজে প্রায় অর্ধেক বাস তুলে নেওয়া হয়েছে বলে পরিষেবার ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা হচ্ছে। যে সব বাস চালু আছে সেগুলির ‘ট্রিপ’ বাড়িয়ে সাধ্যমতো পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে।”
নিগম সূত্রেই জানা গিয়েছে, এনবিএসটিসিতে গড়ে ৪০০টি বাস বিভিন্ন রুটে যাতায়াত করে। লোকসভা ভোটের জন্য বাস তুলে নেওয়ার সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে পরিষেবা স্বাভাবিক রাখতে ৫০টি বিকল বাস মেরামত করা হয়। ওই সব বাসের মধ্যে এপ্রিলে প্রথম দফার ভোটের মুখে তার মধ্যে ১৭৫টি বাস পরিবহণ দফতরের নির্দেশিকা মেনে তুলে নেওয়া হয়। নিগমের ‘অন রুট’ বাসের সংখ্যা ২৭৫টিতে দাঁড়িয়েছে। ভোটের কাজে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন রেল স্টেশন থেকে জেলায় যাতায়াতের ক্ষেত্রে নিগমের বাস কাজে লাগানো হয়। পরে ওই সব বাসে জওয়ানদের মালদহ, বীরভূম, পুরুলিয়া নিয়ে যাওয়া হয়। কলকাতায় ভোট পর্ব মেটার পরেও গণনা পর্ব পর্যন্ত বাসগুলি নির্বাচন কমিশনের তদারকিতে থাকছে। নিগম সূত্রে খবর, গণনা মেটার অন্তত দুই দিন পর কেন্দ্রীয় বাহিনী ফেরত পাঠানো হবে। নির্দিষ্ট স্টেশনে জওয়ানদের পৌঁছে দিয়ে ২০ মের আগে সংস্থার ডিপোয় বাস গুলির ফেরার সম্ভবনা কম।
এই পরিস্থিতিতে নিত্যযাত্রীরা চরম ভোগান্তির মুখে পড়েছেন। যাত্রীদের একাংশ জানিয়েছেন, অসমের ধুবুরি, বিহারের মোতিহারি, ঝাড়খন্ডের রাঁচির মতো ভিন রাজ্যের রুটের সঙ্গে কোচবিহার-কলকাতা বাস পরিষেবা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কোচবিহার থেকে তুফানগঞ্জ, দিনহাটা, মাথাভাঙার মতো রুটেও নিগমের বাসের জন্য অপেক্ষা করতে গিয়ে হয়রান হতে হচ্ছে। এই প্রসঙ্গে দিনহাটা নাগরিক মঞ্চের আহ্বায়ক জয়গোপাল ভৌমিক বলেন, “দিনহাটার ক্ষেত্রে ১৮টি বাসের মধ্যে এক তৃতীয়াংশ বাস ভোটের জন্য তুলে নেওয়া হয়েছে। এর ফলে কোচবিহার ছাড়াও মহকুমার একাধিক রুটে যাতায়াতের ভোগান্তি বেড়েছে।”
রুট বন্ধে দুর্ভোগ বালুরঘাটে
নিজস্ব সংবাদদাতা • বালুরঘাট
ডিপোর ২৩ রুটের মধ্যে ১২টি রুটে বাস চলাচল দীর্ঘদিন বন্ধ। লোকসভা ভোটের জন্য তুলে নেওয়া হয়েছে ১১টি বাস। ফলে দক্ষিণ দিনাজপুরে উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের বালুরঘাট ডিপো থেকে দুরপাল্লার দুটি ও লোকাল রুট মিলিয়ে সর্বসাকুল্যে বাস চলছে মাত্র ৭টি। আর বাসগুলিকে রাস্তায় পরিদর্শন ও টিকিট পরীক্ষার জন্য কোচবিহার থেকে বুনিয়াদপুর চেকিং অফিসে ১৭ জন ইন্সপেক্টার ও অফিসারকে পাঠানো হয়েছে। বাস নেই অথচ এত অফিসার, কর্মীকে রাখা নিয়ে সংস্থায় প্রশ্ন উঠেছে। এনবিএসটিসি-র বোর্ড ডিরেক্টর তথা দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি বিপ্লব খাঁ বলেন, “উত্তরবঙ্গে ৫০০-র কাছাকাছি বাস চলছে। ২০১৪ সালের মধ্যে উত্তরবঙ্গ জুড়ে ৭০২টি রুটেই বাস চালানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ডিপো পিছু ১০টি নতুন বাস দেওয়া হবে। চালানো হবে বন্ধ থাকা লোকাল ও দূরপাল্লার রুটে। অতিরিক্ত কর্মীর বদলির ব্যবস্থা করা হচ্ছে।” তৃণমূল শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের বালুরঘাট ডিপো সভাপতি জাকারিয়াস সুরিন বলেন, “স্থায়ী মেকানিক্যাল কর্মীর অভাবে মেরামতি করতে সমস্যা হচ্ছে। তা ছাড়া নতুন বাসের অভাবে যাত্রী পরিষেবা ব্যাহত হচ্ছে। কর্মী ও ডিপোর সমস্যার কথা আমরা নিগম কর্তাদের জানিয়েছি।” গত কয়েক বছর ধরে বালুরঘাট থেকে রাতে ৩টি কলকাতা বাস সার্ভিস বন্ধ। হিলি-কলকাতা, হরিরামপুর-কলকাতা, তপন-কলকাতা বাস চলাচলও বন্ধ। রাতে বালুরঘাট থেকে কলকাতা মাত্র ১টি বাস চলছে। রাতের শিলিগুড়ি বাস সার্ভিস বন্ধ দীর্ঘদিন যাবৎ বন্ধ। কোচবিহার, আসানসোল, হরিশ্চন্দ্রপুর ও চাঁচল রুটের বাস বালুরঘাট থেকে বন্ধ। বাস কম থাকায় চিঙ্গিশপুর, সমজিয়া, প্রাণসাগর, তপন, হিলিতে লোকাল রুটে যাত্রী-ভোগান্তি বাড়ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy