গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সঙ্গে তৃণমূলের দূরত্ব বাড়তেই তৎপরতা বেড়েছে জিএনএলএফ প্রধান সুবাস ঘিসিঙ্গের। জিএনএলএফ সূত্রের খবর, লোকসভা ভোটে তৃণমূলের সঙ্গে হাত মেলানোর বিষয়েও দলের মধ্যে আলোচনা চাইছেন ঘিসিঙ্গ। সব ঠিক থাকলে আজ, বুধবার তাঁর মাটিগাড়ার ভাড়াবাড়িতে দলের বাছাই কয়েকজন নেতার সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি। ইতিমধ্যে তৃণমূলের পাহাড় শাখার পক্ষ থেকেও ঘিসিঙ্গের সঙ্গে যোগাযোগের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
দলীয় সূত্রে খবর, ভোটের আগে তো বটেই, ভোটের পরেও ঘিসিঙ্গ ও তাঁর দলের নেতা-কর্মীদের নিরাপত্তার ব্যাপারে স্পষ্ট আশ্বাস পেলে তৃণমূল প্রার্থীকে সমর্থনের কথা ভাবতে পারেন জিএনএলএফ প্রধান। জিএনএলএফের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তথা কার্শিয়াং শাখার আহ্বায়ক নিমা লামা বলেছেন, “তৃণমূলের প্রতিনিধিরা আমাদের দলের সভাপতির সঙ্গে দেখা করতে আগ্রহী। কিন্তু দলের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা না করে সভাপতি কোনও সিদ্ধান্ত নেবেন না। গোটা বিষয়টি চিন্তাভাবনার স্তরে রয়েছে।”
তৃণমূলের পাহাড় শাখার নেতাদের কয়েকজন জানান, মোর্চাকে বেকায়দায় ফেলতেই ঘিসিঙ্গের সঙ্গে দূরত্ব ঘোচাতে সচেষ্ট হয়েছেন তাঁরা। সেই জন্য ঘিসিঙ্গের সঙ্গে বৈঠকের দিনক্ষণ ঠিক করার চেষ্টা হচ্ছে। তৃণমূলের দার্জিলিং লোকসভা আসনের প্রার্থী ভাইচুং ভুটিয়াও বিপক্ষকে কাবু করতে সব রকম সাহায্যের জন্য চেষ্টা করার পক্ষপাতী।
ভাইচুংয়ের স্পষ্ট বক্তব্য, “আমরা পাহাড়ের উন্নয়নের জন্য সকলের সহযোগিতা চাই। কেউ আমাদের কাছে ব্রাত্য নয়।” উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী তথা তৃণমূলের উত্তরবঙ্গের কোর কমিটির চেয়ারম্যান গৌতম দেবও জানান, ভোট-যুদ্ধে কেউ সমর্থন করতে চাইলে অবশ্যই স্বাগত জানানো হবে। তিনি বলেন, “নীতি-আদর্শ ও উন্নয়নের লড়াইয়ে আমাদের কেউ সমর্থন করলে অবশ্যই তাঁদের স্বাগত জানাব।”
মোর্চার উত্থানের পরে দার্জিলিং পাহাড় ছাড়তে বাধ্য হন ঘিসিঙ্গ। অনেক চেষ্টা করেও পাহাড়ে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে পারেননি তিনি। ২০১১ সালে বিধানসভা ভোট প্রক্রিয়া শুরু হলে ঘিসিঙ্গ দার্জিলিঙের বাড়িতে যান। ভোটগণনার পরে জিএনএলএফ সমর্থকেরা নানা এলাকায় আক্রান্ত হলে ফের পাহাড় থেকে নেমে যান ঘিসিঙ্গ। তাতে পাহাড়ে জিএনএলএফের সংগঠন অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়ে।
কিন্তু গত জুলাইয়ে কেন্দ্র তেলঙ্গানা গঠনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে পাহাড়ে মোর্চা আন্দোলনে নামলে কড়া হাতে রাশ ধরে পুলিশ-প্রশাসন। সিআরপি মোতায়েন হয়। সেই সময়েই পাহাড়ে ধীরে ধীরে সংগঠনকে জোরদার করতে আসরে নামেন ঘিসিঙ্গ।
তখন কয়েকটি এলাকায় জিএনএলএফের সভায় ভিড় উপচে পড়ে। জিএনএলএফের কেন্দ্রীয় কমিটির একাধিক নেতা জানান, পাহাড়ের ৮৬৯টি বুথের সিংহভাগে এখনও তাঁদের সংগঠন রয়েছে। সব মিলিয়ে অন্তত ৭০ হাজার ভোট তাঁরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন বলে জিএনএলএফ নেতাদের দাবি। গত বিধানসভা ভোটে পাহাড়ের তিনটি আসনে জিএনএলএফ প্রার্থীরা সব মিলিয়ে প্রায় ৫০ হাজার ভোট পেয়েছিলেন। সে জন্য পাহাড়ে জিএনএলএফের প্রাসঙ্গিকতা এখনও রয়েছে বলে নিমা লামার মতো নেতারা মনে করছেন।
এই হিসেব অজানা নয় তৃণমূলেরও। সেই সঙ্গে, পুলিশ-প্রশাসনের তথ্য বলছে, মোর্চা নানাভাবে বিরোধিতার চেষ্টা করলেও গত ৬ মাসের মধ্যে জিএনএলএফকে একাধিক সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ঘিসিঙ্গ পাহাড়ে ফিরে সক্রিয় রাজনীতিতে নামলে সমস্যা বাড়তে পারে ভেবেই মোর্চা নেতারা তাঁকে ঠেকাতে মরিয়া, এই অভিযোগও উঠেছে। এই ব্যাপারে মোর্চার প্রচার সচিব হরকাবাহাদুর ছেত্রী বলেন, “পাহাড়ে জিএনএলএফ এখন অতীত। তবুও তাদের সঙ্গে কেউ হাত মেলালে আমাদের কিছু বলার থাকতে পারে না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy