Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

মন্ত্রীকে হেনস্থায় গ্রেফতার, ক্ষোভ শিলিগুড়িতে

উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেবকে হেনস্থার অভিযোগের জেরে এক ব্যক্তির গ্রেফতারের ঘটনার জেরে তেতে উঠেছে শিলিগুড়ি। ঘটনার প্রতিবাদে ও পুলিশি জুলুমের অভিযোগ তুলে শহরে লাগাতার আন্দোলনে নামার হুমকি দিয়েছে একাধিক রাজনৈতিক দল। কংগ্রেসের পক্ষ থেকে আজ, বুধবার দুপুর ১২টায় শিলিগুড়ি এডিসিপি-র অফিস ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখানোর কথা ঘোষণা করা হয়েছে।

মহানন্দ মণ্ডলকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে শিলিগুড়ি থানায় বিক্ষোভ।

মহানন্দ মণ্ডলকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে শিলিগুড়ি থানায় বিক্ষোভ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০১৪ ০২:০৪
Share: Save:

উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেবকে হেনস্থার অভিযোগের জেরে এক ব্যক্তির গ্রেফতারের ঘটনার জেরে তেতে উঠেছে শিলিগুড়ি। ঘটনার প্রতিবাদে ও পুলিশি জুলুমের অভিযোগ তুলে শহরে লাগাতার আন্দোলনে নামার হুমকি দিয়েছে একাধিক রাজনৈতিক দল।

কংগ্রেসের পক্ষ থেকে আজ, বুধবার দুপুর ১২টায় শিলিগুড়ি এডিসিপি-র অফিস ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখানোর কথা ঘোষণা করা হয়েছে। বিকেল চারটেয় শিলিগুড়ি থানা ঘেরাও করবে বামফ্রন্ট। বিজেপির তরফে এডিসিপি- কে ডেপুটেশন দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। পাল্টা রাস্তায় নামার কথা ঘোষণা করেছে তৃণমূলও। আগামী শনিবার শিলিগুড়িতে মিছিল করবে তৃণমূল। তৃণমূলের তরফে জানানো হয়েছে, শহরের উন্নয়ন থমকে দেওয়ার চক্রান্ত রুখতেই ওই মিছিল করা হবে।

দার্জিলিং জেলা কংগ্রেস সভাপতি (সমতল) শঙ্কর মালাকারের দাবি, মহানন্দবাবু তাঁদের সমর্থক। তাঁর অভিযোগ, “আমাদের কংগ্রেসের সদস্য রাজেশ যাদব ঘটনাস্থলে ছিলেন না। অথচ পুলিশ তাঁকে খুঁজছে। শুনেছি তাঁর বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু হয়েছে। রোজই তাঁর বাড়িতে পুলিশ গিয়ে হয়রান করছে।” একই ভাবে এলাকার নিরীহ বাসিন্দাদের কয়েকজনকে পুলিশ হেনস্থা করছে বলে অভিযোগ করেছে স্থানীয় বাম নেতৃত্ব। বামেদের তরফে ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা সম্পাদক অনিরুদ্ধ বসু বলেন, “নিরীহ বাসিন্দাদের পুলিশ হেনস্থা করলে তা কোনও অবস্থায় মেনে নেওয়া যায় না। আমরা সব শক্তি দিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াব।” সিপিএম নেতা তথা প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য অভিযোগ করেন, পুলিশকে ঠুঁটো বানিয়ে ফেলা হয়েছে। গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা সমিতির তরফে সহ সভাপতি রণজিত্‌ শূরের অভিযোগ, “এ যেন কাজির বিচারের মতো প্রহসন হচ্ছে। নাগরিকদের বিক্ষোভ দেখানোর অধিকারকে খর্ব করে তাঁকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অথচ বিক্ষোভকারীকে চড় মারায় অভিযুক্ত মন্ত্রীকে ধরছে না।”

বিজেপি-র দার্জিলিং জেলা সভাপতি রথীন বসু জানান, তাঁরা গোড়া থেকেই মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে সরব হয়েছেন। তিনি বলেন, “পুজোর মরসুমে বাসিন্দাদের যাতে মামলায় জেরবার না করা হয়, সে জন্য বারেবারেই আর্জি জানিয়েছি।” তাঁর অভিযোগ, তৃণমূলের নেতাদের একাংশ ক্ষমতার অপব্যবহার করে পরিস্থিতি তাতিয়ে তুলছেন।

প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে শিলিগুড়ি থানার আইসিকে।

তবে তৃণমূল নেতারা কিন্তু দাবি করছেন, মন্ত্রীকে হেনস্থার মতো মামলায় অভিযুক্তকে আড়াল করে রাজনৈতিক সুবিধা তুলতে আসরে নেমেছেন বিরোধী দলের নেতাদের একাংশ। শিলিগুড়ির রামঘাট এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত তৃণমূল নেতা মিলন দত্ত বলেন, “ধৃতের স্ত্রী দাবি করেছেন উনি তৃণমূলের নেত্রী। তাতে কী! কেউ তৃণমূল করলেই তাঁর ইচ্ছে মতো চলার অধিকার জন্মায় না। উন্নয়নের কাজে কেউ বাধা দিতে পারে না। দল এমন কাউকে সমর্থন করবে না। পাশে দাঁড়ানোর প্রশ্নই নেই। কেউ ওঁদের ভুল বুঝিয়েছে।” সেই ভুল ভাঙাতে শীঘ্রই তাঁরা উদ্যোগী হবেন বলে জানিয়েছেন।

এই ঘটনাকে ঘিরে রামঘাট এলাকাতেও চলছে তুমুল আলোচনা। জলপাইমোড় এলাকার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা পেশায় চালের ব্যবসায়ী সঞ্জয় সিংহ বলেন, “আমরা মহানন্দবাবুকে মারার ঘটনায় ক্ষুব্ধ। তার চেয়ে বেশি ক্ষুব্ধ তাঁকে গ্রেফতার করায়। বুধবার তাঁর জামিন না হলে, আমরা অরাজনৈতিকভাবে নাগরিক মঞ্চ গড়ে আন্দোলনে নামব।” ওয়ার্ডেরই অন্য এক বাসিন্দা মহেশ সাহানি বলেন, “শিলিগুড়ি থানাতে মহানন্দের যাতায়াত ছিল। তিনি আগেও আইসি-র ডাকে থানায় গিয়েছেন। উনি যদি মন্ত্রীকে মেরেই থাকবেন, তাহলে এত বার থানায় যাওয়ার পর তাঁকে গ্রেফতার করা হল কেন?”

২৮ সেপ্টেম্বর শিলিগুড়ির জলপাইমোড় লাগোয়া রামঘাটে শ্মশানে বৈদুতিক চুল্লির শিল্যানস করতে যান গৌতমবাবু। সেই সময়ে এলাকার ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রাক্তন কাউন্সিলর অমরনাথ সিংহ ও কংগ্রেসের কয়েকজন নেতার নেতৃত্বে বিক্ষোভ দেখানো হয়। ওই সময়ে মহানন্দবাবু মন্ত্রীর সামনে গিয়ে আঙুল উঁচিয়ে ‘আমরাই এখানে শেষ কথা’ বলে হুঁশিয়ারি দিলে পরিস্থিতি তেতে ওঠে। মহানন্দবাবুর অভিযোগ, তাঁকে তখন মন্ত্রী চড় মারেন। মন্ত্রীর সঙ্গী কয়েকজন মহানন্দবাবুকে লাথি-ঘুষি মেরে জামা ছিঁড়ে দেন বলেও অভিযোগ। তবে সরকারি অফিসাররা জানান, মন্ত্রী বিরক্ত হলেও নিজেকে সামলে নিয়েছিলেন। এর পরে এলাকায় তুমুল বিক্ষোভ হলে মন্ত্রীকে অন্য দিক দিয়ে বার করে নিয়ে যান পুলিশ কমিশনার। ওই ঘটনার পরে মন্ত্রীর দফতরের পক্ষে একটি অভিযোগ দায়ের হয়। ঘণ্টা তিনেক পরে মহানন্দবাবুরা থানায় যান। তাঁরা মন্ত্রীর বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ দায়ের করেন। দুটি মামলা রুজু করে পুলিশ। ওই ঘটনার ১০ দিনের মাথায় এদিন মহানন্দবাবু গ্রেফতার হন। তাঁকে আদালতে হাজির করা হলে আইনজীবী পার্থ চৌধুরী, অনিরুদ্ধ বসু সহ ৪ জন তাঁর হয়ে সওয়াল করেন।

৫ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর অমরনাথ সিংহের অভিযোগ, “মন্ত্রীই ডেকে নিয়ে গিয়েছিলেন। কথাবার্তার মধ্যে হঠাত্‌ উনি উত্তেজিত হয়ে গায়ে হাত তোলেন। মন্ত্রীদের মেজাজ হারালে চলে না।” সমালোচনায় সরব হয়েছে এপিডিআরও। সংগঠনের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক ধীরাজ সেনগুপ্ত বলেন, “উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রীর কাছে আমরা এটা আশা করিনি। যিনি মার খাচ্ছেন, তিনিই জেল খাটছেন। এটাই এখন রাজ্যের পরিচিত ছবি। আমরা দ্রুত এ বিষয়ে বিভিন্ন মহলের সঙ্গে কথা বলে পদক্ষেপ করার কথা ভাবছি।”

গৌতমবাবু অবশ্য মনে করেন, পুলিশ আইন মেনেই পদক্ষেপ করেছে। তাঁর যুক্তি, “একটা এলাকায় বেসরকারি পরিচালনায় শ্মশান চলছিল। সেখানে ডেথ সার্টিফিকেট ছাড়া শবদাহ হচ্ছিল বলে অভিযোগ কম মেলেনি। সরকারি সেই শ্মশানের আধুনিকীকরণ করতে নেমেছে। বৈদ্যুতিক চুল্লির শিনস করেছে। দূষণের অছিলায় সেই কাজে বাধা দিয়ে শহরের উন্নয়নকে রোখার চেষ্টা কখনও কাম্য নয়। এখন যাঁরা গ্রেফতারের ঘটনাকে সামনে রেখে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে চাইছে তাঁদের শহরবাসী চেনে ও জানেন। আমরাও রাজনৈতিক মোকাবিলা করব।”

ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE