Advertisement
E-Paper

মহানন্দার চরে মিলল নিখোঁজ ছাত্রের দেহ

ছটপুজোর দিন থেকে নিখোঁজ সপ্তম শ্রেণির ছাত্রের দেহ উদ্ধার হল মহানন্দার চর থেকে। শনিবার ভোরে শিলিগুড়ি থানার মহানন্দা সেতুর নীচে নদীর চর থেকে ওই বালকের দেহটি উদ্ধার হয়। মৃতের নাম সম্রাট মুখোপাধ্যায় ওরফে আকাশ (১২)। বাড়ি পুরসভার ৪ নম্বর ওর্য়াডের আর্দশনগরে। গত বুধবার ছট পুজোর দিন, বেলা দু’টো নাগাদ বন্ধুর বাড়ি থেকে মাসির বাড়ি যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল সম্রাট। তার পর থেকেই সে নিখোঁজ ছিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০১৪ ০১:০৩
ছাত্রের মায়ের সঙ্গে কথা বলছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।

ছাত্রের মায়ের সঙ্গে কথা বলছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।

ছটপুজোর দিন থেকে নিখোঁজ সপ্তম শ্রেণির ছাত্রের দেহ উদ্ধার হল মহানন্দার চর থেকে। শনিবার ভোরে শিলিগুড়ি থানার মহানন্দা সেতুর নীচে নদীর চর থেকে ওই বালকের দেহটি উদ্ধার হয়। মৃতের নাম সম্রাট মুখোপাধ্যায় ওরফে আকাশ (১২)। বাড়ি পুরসভার ৪ নম্বর ওর্য়াডের আর্দশনগরে।

গত বুধবার ছট পুজোর দিন, বেলা দু’টো নাগাদ বন্ধুর বাড়ি থেকে মাসির বাড়ি যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল সম্রাট। তার পর থেকেই সে নিখোঁজ ছিল। এদিন সকালে নদীর ধারের বস্তি এলাকার লোকজন চরে এক বালকের দেহ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ এসে সেখানে সম্রাটের কাদামাখা দেহ উদ্ধার করে। পুলিশ সূত্রের খবর, যখন দেহটি উদ্ধার হয়, তখন সম্রাটের মুখ ফুলে গিয়েছিল। তার কোমরে একটি পাটের দড়ি বাঁধা ছিল। পরনে ছিল জিনসের প্যান্ট ও গেঞ্জি। হাতের বালা, পৈতে ও কোমরে পুজোর সুতোও বাঁধা ছিল। এ দিনই দেহটি ময়নাতদন্তের জন্য উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। শিলিগুড়ি থানার পুলিশ অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে। শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার জগমোহন বলেন, “আমরা ময়নাতদন্তের রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছি। পরিবারের তরফে সুস্পষ্টভাবে অভিযোগ পেলেই তা দেখেও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তিনি জানান, মৃতের পরিবারের তরফে সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনও খুনের অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। বালকের বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন এবং পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে। সম্রাটের বাবা তপনবাবুর বক্তব্য, “পড়াশুনা, কম্পিউটার, ভিডিও গেম নিয়েই থাকত। বাড়ি, স্কুল বা অন্য কোথাও গোলমাল হয়েছিল বলে জানি না। তবে যেভাবে দেহটি পড়েছিল, তাতে মনে হচ্ছে ওকে খুন করা হয়েছে।” তবে সম্রাটের পরিবারের তরফে সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনও খুনের অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। মৃতের মামা বিশ্বব্রত সান্যাল বলেন, “সমস্ত কাজ শেষ হলে আমরা খুনের অভিযোগ জানাব। মনে হচ্ছে অন্য কোথাও থেকে এনে দেহটি ওই এলাকায় ফেলা হয়েছে।”

সকাল থেকেই ঘটনার খোঁজখবর নেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব। তিনি পুলিশের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত তদন্ত করে প্রকৃত ঘটনা সামনে আনার নির্দেশ দেন। দুপুরে আদর্শনগরে সম্রাটের বাড়িতে গিয়ে পরিবারের লোকজনের সঙ্গে দেখা করে তাঁদের সমবেদনাও জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, “দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। এর পিছনে কী রহস্য রয়েছে, তা বের করতেই হবে। কে বা কারা রয়েছে, তা খুঁজে বার করতে পুলিশ কমিশনারকে বলেছি। গোয়েন্দা বিভাগের সাহায্য নেওয়া হবে।” ওই বাড়িতে যান সদ্য প্রাক্তন কংগ্রেস কাউন্সিলর স্বপন চন্দও। তিনিও দ্রুত পুলিশি ব্যবস্থার দাবি জানান।

সম্রাট মুখোপাধ্যায়।

তপনবাবুর দাবি, “প্রধাননগরের গুরুঙ্গবস্তিতে যে বন্ধুর বাড়িতে সম্রাট গিয়েছিল, তাঁরা অসংলগ্ন কথা বলেছেন। তা নিয়ে আমাদের সন্দেহ বেড়েছে। পুলিশকে বলেছি, ওই পরিবারের লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে।” সম্রাটের ছোট মাসি দেবারতি ভাদুড়ি বলেন, “ওই পরিবারের লোকজন একবার বলেছেন, সম্রাট সামান্য কিছুক্ষণ তাঁদের ওখানে থেকে বাড়ি চলে যায়। পরে বলেন, সে নদীর বাঁশের অস্থায়ী সেতু এলাকায় ছিল। আবার কখনও পাকা নদীর সেতুর নীচে কাদায় দেখতে বলছেন। এসব শুনে আমাদের সন্দেহ বাড়ছে।” তবে প্রাথমিকভাবে ওই ছাত্রটির পরিবারের লোকজন পুলিশকে জানিয়েছেন, সন্ধ্যা নাগাদ সম্রাটকে ওর বন্ধু বাঁশের সেতু অবধি পৌঁছে দেয়। মাসির বাড়ি যাবে বলে ও চলে যায়। সম্রাটের মাসি পাপিয়া ভট্টাচার্য বলেন, “আমাদের বাড়িতে ছটপুজোর দিন আসবে বলেছিল। কিন্তু আসেনি। পরে শুনি ওকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।” তদন্তকারী অফিসারেরা জেনেছেন, প্রধাননগরের ওই বন্ধুর সঙ্গে সম্রাট ছোটবেলায় একসঙ্গে স্কুল পড়ত। পরে ওই ছাত্রটি প্রধানগরের একটি স্কুলে ভর্তি হয়। সম্রাট নীলনলিনী স্কুলে পড়ত। দু’জনের বন্ধুত্ব ছিল।

তপনবাবু পেশায় অটোচালক। তাঁর বড় মেয়ে রিয়া শহরের একটি স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী। সম্রাট ছোট ছেলে। মা সোমাদেবী ছেলের শোকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এ দিন কাঁদতে কাঁদতে রিয়া বলেন, “বন্ধুর বাড়ি হয়ে মাসির কাছে যাবে বলে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল। যদি ছটপুজোর ঘাটে নদীতে পড়ে গিয়ে থাকে তা হলে এত লোক ছিল কেউ দেখেনি? আর ও তো সাঁতারও জানত।”

samrat mukhopadhyay samrat siliguri missing student body recovered
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy