জলাশয়ে পদ্ম।—নিজস্ব চিত্র।
এ বার পুজোয় পদ্মচাষির মাথায় হাত।
কখনও প্রখর রোদ, কখনও টানা বৃষ্টির জেরে সবুজ পাতা ঝলসে কলিতেই কুঁকড়ে গিয়েছে। ঝরে পড়েছে পাঁপড়ি। তাই পুজোর সময়ে বাজারে ফুল সরবরাহের কথা ভাবতে পারছেন না তাঁরা। অন্য দিকে, পুজো উদ্যোক্তারাও বুঝতে পারছেন না পদ্ম মিলবে কোথায়?
শুধু জলপাইগুড়ি নয়, দেবী পক্ষের শুরু থেকেই শিলিগুড়ি, ইসলামপুর এমনকি নমনি অসমের পুজো উদ্যোক্তা ও ফুলবিক্রেতারা ভিড় করেন গজলডোবার মিলনপল্লি, মোহিতনগর, ময়নাগুড়ির দোমহানি, চারের বাড়ি, জোরপাকড়ি এলাকার পদ্মপুকুরের পাড়ে। ফুলের কলির দরদাম ঠিক হলে বায়না দিয়ে ফিরে যান তাঁরা। চতুর্থীতে এসে পদ্মকলি বা পদ্মপাতা নিয়ে যান।
এবারেও অনেকে এসেছেন। কিন্তু কোন পুকুরে পদ্ম মিলবে সেটা খুঁজে পেতেই নাকাল হয়ে যাচ্ছেন তাঁরা।
আগের বছর যে পুকুরের পদ্ম বাজারে চড়া দামে বিক্রি হয়েছে, এ বার সেখানে পদ্মপাতা বা পদ্মকলি প্রায় কিছুই মেলেনি। সমস্যায় পড়েছেন পুজো উদ্যোক্তারাও। পুজোর কয়েকটা দিন বাজারে পদ্মকলির দাম চড়া থাকায় গ্রামে গ্রামে ঘুরেই পদ্মপুকুর থেকে কলি সংগ্রহ করেন তাঁরা। এ বার সেই সুযোগও নেই। জলপাইগুড়ি শহরের এক পুজো কমিটির কর্তা শঙ্কর মিত্র গজলডোবার রাস্তায় দাঁড়িয়ে বলেন, “প্রতি বছর মিলনপল্লির পুকুর থেকে পদ্মকলি নিয়ে যাই। ফুলের জন্য চিন্তা করতে হয় না। এ বারও সেভাবে এসেছিলাম। কিন্তু কোথাও ফুলের কলি নেই।”
গজলডোবার মিলনপল্লি জুড়ে পুকুর। মাছ চাষের পাশাপাশি পদ্ম চাষ হয় এখানে। ময়নাগুড়ির দোমহনি গ্রামের কালুয়া ডাঙি জলাশয় শ্বেত পদ্মের জন্য বিখ্যাত। চারেরবাড়ি গ্রামের পাঁচটি পরিবার মিলে পদ্মের চাষ করেন প্রায় তিন একর আয়তনের জলাশয়ে মিলনপল্লির বিমল সরকার জানান, প্রতি বছর আষাঢ়-শ্রাবণে পদ্ম ফুল ও পাতায় পুকুর ভরে যায়। আশ্বিন পর্যন্ত চলে তা। এ বার একটানা রোদে প্রথমে পাতা ঝলসে কুঁকড়ে গিয়েছে। পরে কলি ঝরে পড়েছে। পুজোর আগে তাই ফুলের আকাল।
পদ্মচাষি ঝর্ণা সরকার বলেন, “মহালয়ার পর থেকে পদ্মকলি বিক্রি করে রোজগার শুরু হয়ে যায়। পুজোর খরচ উঠে আসে। এবার কিছুই নেই।”
গত বছর একটি কলি দু’টাকা দরে বিক্রি করেছেন চারেরবাড়ি গ্রামের নিরেন রায়, হরেন বর্মনেরা। তাঁদের কথায়, “অন্তত ২০ হাজার কলি মিলেছে। ওই টাকা ভাগ করে পুজোর বাজার হয়েছে। এ বার ফুল বিক্রেতাদের ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy