অর্থলগ্নি সংস্থা রয়্যাল ইন্টারন্যাশনালের বিরুদ্ধে আর্থিক প্রতারণার অভিযোগে রুজু একটি মামলা সিবিআইকে হস্তান্তর করল পুলিশ।
সম্প্রতি ওই মামলার নথিতে কোচবিহার জেলা পুলিশের তরফে সিবিআই দফতরে পাঠানো হয়েছে। ওই অর্থলগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে রুজু অন্য একটি মামলার চার্জশিট আদালতে জমা পড়েছে। ফলে, সরাসরি তা হস্তান্তরে আইনি সমস্যা রয়েছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর। তবে পুলিশ সূত্রেই দাবি করা হয়েছে, ওই লগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে রুজু আরও একটি মামলা আদালতে বিচারাধীন অবস্থায় রয়েছে। সিবিআই কর্তৃপক্ষকে আদালতে পুনর্তদন্তের জন্য আবেদন জানিয়ে ওই মামলার দায়িত্ব নিতে হবে। বিষয়টি সিবিআই কর্তাদের ইতিমধ্যে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। কোচবিহারের পুলিশ সুপার রাজেশ যাদব বলেন, “গত সপ্তাহে রয়্যালের বিরুদ্ধে রুজু একটি মামলার যাবতীয় তথ্যাদি সিবিআইকে পাঠানো হয়েছে। অন্য একটি মামলায় চার্জশিট জমা পড়ে যাওয়ায় তা আদালতে আবেদনের ভিত্তিতে সিবিআইকে নিতে হবে বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওই লগ্নি সংস্থার দুই কর্ত্রী সহ ৭ জনকে তদন্তে নেমে গ্রেফতার করা হয়েছিল।’’ কোচবিহারের জেলাশাসককে একাধিকবার ফোন করা হলেও তাঁর বক্তব্য জানা যায়নি। মোবাইল বেজে গিয়েছে।
পুলিশ সূত্রেই জানা গিয়েছে, গত নভেম্বরে সিবিআইয়ের তরফে রয়্যাল ইন্টারন্যাশনালের বিরুদ্ধে রুজু মামলার তদন্তের দায়িত্বভার নিতে চেয়ে কোচবিহারের পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাদের চিঠি পাঠান হয়। ২০১৩ সালে ওই সংস্থার এক এজেন্টের করা অভিযোগের ভিত্তিতে রুজু মামলাটি হস্তান্তরের তোড়জোড় শুরু হয়। গত সপ্তাহে ওই মামলার নথিপত্র সিবিআইকে হস্তান্তর করা হয়। সংস্থার অন্য এক এজেন্ট ঝুমা দে’র রুজু অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ আরও একটি মামলা রুজু করে। ওই মামলায় সংস্থায় চিফ ম্যানেজিং ডিরেক্টর অর্চনা সরকার, তাঁর বোন সংস্থার অন্যতম ম্যানেজিং ডিরেক্টর নীলিমা দে (সরকার) সহ ৭ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ৩০ সেপ্টেম্বর ওই মামলার তদন্ত সম্পূর্ণ করে পুলিশ আদালতে চার্জশিট জমা দেয়। ওই চার্জশিটে কয়েকজনকে গ্রেফতার করা যায়নি উল্লেখ করে তাঁদের ফেরার বলে দাবি করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী সেই মামলাটি ফের তদন্তের জন্য আদালতের অনুমতি নিয়ে সিবিআইকে পদক্ষেপ করতে হবে।
এই ঘটনায় কোচবিহার তো বটেই, উত্তরবঙ্গ জুড়ে নানা মহলে আলোড়ন পড়েছে। কোচবিহার নাগরিক অধিকার সুরক্ষা মঞ্চের সভাপতি রাজু রায় বলেন, “অন্য লগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগও খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশ সুপারকে আর্জি জানাব।”
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১০ সালে চান্দামারির বাসিন্দা মৃত্যুঞ্জয় সরকার রয়্যাল ইন্টারন্যাশনাল সংস্থা গড়ে তোলেন। কম সময়ে দ্বিগুণের বেশি টাকা ফেরানোর প্রলোভন দিয়ে কোচবিহার জেলা ছাড়াও উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকা, নিম্ন অসমে জাল বিস্তার করে সংস্থাটি কয়েক বছরের মধ্যে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা বাজার থেকে তুলে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ। গত বছর সংস্থাটির বিরুদ্ধে আমানতকারীদের টাকা ফেরাচ্ছে না বলে অভিযোগ তুলে প্রশাসনের দ্বারস্থ হন ভুক্তভোগীরা।
কোচবিহারের সদর মহকুমা শাসক বিকাশ সাহা নিজেও ওই সংস্থার বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ জানান। যদিও শুরুতেই সংস্থার শীর্ষ কর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গড়িমসির অভিযোগ ওঠে। বেশ কয়েকজন নেতা-কর্তার নামও ওই প্রতারণার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বলে ফরওয়ার্ড ব্লক জেলা সম্পাদক উদয়ন গুহের অভিযোগ। ২০১৩ সালে মৃত্যুঞ্জয়বাবুর মৃত্যু হয়েছে বলে সংস্থাটি দাবি করে। স্ত্রী অর্চনা সরকারকে পরে পুলিশ গ্রেফতার করে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy