Advertisement
E-Paper

শীর্ণ কুমলাই ঢাকা পড়েছে আবর্জনার স্তূপে

রোজ ভোরে প্রাতভ্রমণে পাকা রাস্তা ধরে সিনেমা হল পাড়া থেকে কুমলাই সেতুতে পৌঁছে মেজাজ বিগড়ে যায় প্রাথমিক স্কুল শিক্ষক নিবারণ সরকারের। জলপাইগুড়ি-গয়েরকাটা রোডের কুমলাই নদীর সেতুতে দাঁড়িয়ে ক্ষোভ উগড়ে দেন জানান তিনি। শহরের ‘প্রাণরেখা’ নামে পরিচিত আদরের কুমলাই নদীর শীর্ণ চেহারা দেখে শিশিরভেজা সকালে মন খারাপ হয়ে যায় তাঁর। বিড়বিড় করে বলতে থাকেন, “এটা নদী কে বলবে!”

বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০১:৫৯
কুমলাই নদীর হাল এখন এমনই। ছবি: রাজকুমার মোদক।

কুমলাই নদীর হাল এখন এমনই। ছবি: রাজকুমার মোদক।

রোজ ভোরে প্রাতভ্রমণে পাকা রাস্তা ধরে সিনেমা হল পাড়া থেকে কুমলাই সেতুতে পৌঁছে মেজাজ বিগড়ে যায় প্রাথমিক স্কুল শিক্ষক নিবারণ সরকারের। জলপাইগুড়ি-গয়েরকাটা রোডের কুমলাই নদীর সেতুতে দাঁড়িয়ে ক্ষোভ উগড়ে দেন জানান তিনি। শহরের ‘প্রাণরেখা’ নামে পরিচিত আদরের কুমলাই নদীর শীর্ণ চেহারা দেখে শিশিরভেজা সকালে মন খারাপ হয়ে যায় তাঁর। বিড়বিড় করে বলতে থাকেন, “এটা নদী কে বলবে!”

ছেলেবেলায় দেখা চনমনে কুমলাই এখন কোথায়?

৫৪ বছর আগের স্মৃতি হাতড়ান। ইশারা করে বলেন, “ওই যে বাঁকটা দেখা যায়, ওখানে সাঁতার শিখেছি।”

মাস্টারমশাইয়ের ছেলেবেলার নদীর বাঁকে এখন জমেছে আবর্জনার স্তূপ। সেই ভাগাড়ে দিনভর ডানা ঝাপটায় কাক, চিল। অবলীলায় ঘুরে বেড়ায় কুকুর, বিড়াল আর শুয়োরের দল। মৃত পশুর পচাগলা দেহ থেকে প্লাস্টিক, থার্মোকল- কী নেই? নদীর বুকে বর্জ্য জমে নালার চেহারা নিয়েছে। শহরের ১০, ১৩, ১৪ এবং ১৬ নম্বর ওয়ার্ড ছুঁয়ে বারোঘরিয়া গ্রাম পঞ্চায়েত, দামবাড়ি, খয়েরবাড়ি, ডাংধরি গ্রাম হয়ে কুমলাই জলঢাকা নদীতে মিশেছে। উপরের দিকে রয়েছে মাগুরমারি-১, ঝারআলতা-২, কলাবাড়ি, মোগলকাটা এলাকা। সেচ ছাড়াও গেরস্থালির কাজে নদীর জল ব্যবহার করাই ছিল দস্তুর।

আর এখন?

প্রশ্ন শুনে থমকে যান ১০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা স্বপন দত্ত। বলেন, “কোথায় জল! দু’দশক আগেও সরপুঁটি, খলসের মত সুস্বাদু মাছ পাওয়া যেত নদীতে। এখন কিছুই মেলে না। গোড়ালিও ভেজে না এই জলে। এই ঘোলা জলে স্নান করলে শরীরে ফুসকুড়ির মতো চর্মরোগ হয়।” জলপাইগুড়ি থেকে ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে শহরে ঢুকতে কুমলাইর এমন চেহারা দেখে শুরুতে মন খারাপ হলেও এখন গা সওয়া হয়ে গিয়েছে স্বাস্থ্যকর্মী অমিতাংশু সরকারের মতো অনেক নিত্যযাত্রীর। যদিও শহরের ‘লাইফ লাইন’ ওই নদীর করুণ পরিণতি মেনে নিতে পারছেন না ধূপগুড়ি হাই স্কুলের শিক্ষক গুণময় বন্দ্যোপাধ্যায়। স্কুল গেটের সামনে দাঁড়িয়ে বলেন, “এই নদী শহরের ফুসফুসের মতো। এটা বুজে গেলে বাস্তুতন্ত্রের সমস্যা হবে।”

কিন্তু কে শুনছে ওই কথা?

কুমলাই সেতু সংলগ্ন এলাকায় কয়েকটি হোটেল গড়ে উঠেছিল। এখন নেই। হোটেল মালিকদের অভিযোগ, দূষণের কারণে এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন।

কিন্তু এমনটা তো হওয়ার কথা ছিল না। ২০০১ সালে ধূপগুড়ি পুরসভায় উন্নীত হয়। আয়তন ১৪.৯৯ বর্গ কিলোমিটার। জনসংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার। ২০০৯ সালে সিপিএম পরিচালিত পুরসভার কর্তারা ১৬ নম্বর ওয়ার্ড বর্মনপাড়ায় ডাম্পিং গ্রাউণ্ড তৈরির জন্য ২৩ বিঘা জমি কিনে দেওয়াল দিয়ে ঘিরে ফেলেন। তার পরেও কেন কুমলাই চুরি হচ্ছে? তত্‌কালীন পুরসভার সিপিএম চেয়ারম্যান সত্যরঞ্জন ঘোষের অভিযোগ, “নদী বাঁচাতে ডাম্পিং গ্রাউণ্ড তৈরির জন্য জমি কেনা হয়। সলিডওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট নিয়েও কথা হয়েছিল। কিন্তু তৃণমূলের বিরোধিতায় সেটা চালু করা সম্ভব হয়নি।” সত্যরঞ্জনবাবুর আক্ষেপ, “সেদিন তৃণমূল যে ভুল করেছিল, এখন তার মাসুল দিচ্ছে।”

কী সেই মাসুল?

২০১২ সালে নদী সংস্কারের দাবিতে কুমলাই নদীর পাড়ে তৃণমূলের টানা এক সপ্তাহ অবস্থান আন্দোলনের কথা শহরে কান পাতলে এখনও শোনা যায়। দলের পুরসভার নির্বাচনী ইস্তেহারে ছিল কুমলাই নদী রক্ষার প্রতিশ্রুতি। প্রশ্ন উঠেছে, পুরসভা দখলের পরে তৃণমূল নেতৃত্ব প্রতিশ্রুতি রক্ষার কথা বেমালুম ভুলে গেলেন কেন? পুরসভার চেয়ারম্যান শৈলেনচন্দ্র রায় বলেন, “ভুলে যাওয়ার ব্যাপার নেই। সিপিএম সমর্থকদের বিরোধিতার জন্য পুরসভার কেনা পুরনো জমিতে জঞ্জাল ফেলা সম্ভব হচ্ছে না। ওই কারণে বারোঘরিয়া এলাকায় নতুন জমি দেখা হয়েছে।”

(চলবে)

amar shohor dhupguri biswajyoti bhattacharya kumlai bridge waste
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy