Advertisement
E-Paper

শ্রম আইনের সুবিধা পান না চা শ্রমিকেরা

চা শ্রমিকদের মজুরি পুনর্বিন্যাসের তৃতীয় দফার বৈঠকের আগে উত্তরবঙ্গের চা বাগানগুলির পরিকাঠামো নিয়ে সমীক্ষা রিপোর্ট প্রকাশ করল শ্রম দফতর। ওই সমীক্ষা রিপোর্টে মজুরি চুক্তি নিয়ে আলোচনার টেবিলে মালিক পক্ষের উপর চাপ তৈরি হবে বলে মনে হচ্ছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০১৪ ০১:৪১

চা শ্রমিকদের মজুরি পুনর্বিন্যাসের তৃতীয় দফার বৈঠকের আগে উত্তরবঙ্গের চা বাগানগুলির পরিকাঠামো নিয়ে সমীক্ষা রিপোর্ট প্রকাশ করল শ্রম দফতর। ওই সমীক্ষা রিপোর্টে মজুরি চুক্তি নিয়ে আলোচনার টেবিলে মালিক পক্ষের উপর চাপ তৈরি হবে বলে মনে হচ্ছে। বৃহস্পতিবার শিলিগুড়িতে ওই রিপোর্ট প্রকাশ করে শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু বলেছেন, “সিংহভাগ চা বাগানে পরিকাঠামো যথাযথ নয়। এখনও পর্যন্ত অনেক ক্ষেত্রে শ্রমিকদের মধ্যযুগীয় জীবনযাপন করতে হয়। চা শ্রমিক মজুরি চুক্তি নিয়ে আলোচনার সময় বিভিন্ন বাগানের পরিকাঠামো নিয়ে মালিকপক্ষকে জানানো হবে।”

বৃহস্পতিবার শিলিগুড়ির একটি ‘শপিং মলের’ হলে রাজ্য শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদের তরফে শ্রমিক দিবস উদযাপন হয়। নির্বাচনী বিধিনিষেধের কারণে ১ মে শ্রমিক দিবস উপলক্ষ্যে কোনও অনুষ্ঠান আয়োজন করা সম্ভব হয়নি বলে শ্রম দফতর জানিয়েছে। এ দিন শিলিগুড়িতে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে শ্রমিক কল্যাণ পর্ষদ। অনুষ্ঠানেই সমীক্ষা রিপোর্ট প্রকাশ করেন শ্রমমন্ত্রী। রাজ্যে পালাবদলের পরে ২০১২ সালে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন চা বাগানের হালহকিকত জানতে সমীক্ষা শুরু করে শ্রম দফতর। শ্রমমন্ত্রীর কথায়, “একটি বইতে উত্তরবঙ্গের সব চা বাগানের তথ্য একত্রিত ছিল না। এমনকী অনেক বাগানের শ্রমিকরা রেশন পান কিনা, বাগানে স্বাস্থ্য পরিষেবা কেমন রয়েছে, শিক্ষা বা বাসস্থানের সুযোগ কতটা তার তথ্যই ছিল না।”

এ দিন প্রকাশিত সমীক্ষা রিপোর্টে উল্লেখ্য করা হয়েছে, উত্তরবঙ্গের ২৭৩টির মধ্যে ৯০ শতাংশের বেশি চা বাগানে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বাসস্থান নিয়ে পরিকাঠামোগত ক্রুটি রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই শ্রম আইন মেনে চা শ্রমিকরা সুযোগ সুবিধে পান না বলে সমীক্ষা রিপোর্টে উল্লেখ্য করা হয়েছে। বস্তুত এ দিন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে শ্রমমন্ত্রী বলেন, “এখানে যদি কোনও চা বাগান মালিক সংগঠনের প্রতিনিধি থেকে থাকেন, তবে তাঁদের সামনেই বলছি, অনেক চা বাগানে শ্রমিকদের হাল মধ্যযুগীয়। বাগানের ম্যানেজার রয়েছে, অথচ দিনের পর দিন পিএফ বাকি, রেশন বকেয়া রয়েছে, বাগানের স্বাস্থ্য কেন্দ্রে প্রশিক্ষিত চিকিৎসক নেই। শিশুদের থাকার ক্রেশের যা অবস্থা তাতে গরু-ছাগলও থাকতে পারে না। এটা অন্যায়।”

সরকারি সমীক্ষাতেই চা বাগানের যে পরিকাঠামো গত ত্রুটির কথা উঠে এসেছে কী পদক্ষেপ করবে রাজ্য সরকার? বিষয়টি নিয়ে মালিকপক্ষের উপরে মজুরি চুক্তির সময়ে রাজ্য সরকার যে চাপ তৈরি করতে চাইছে তার স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছেন শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দুবাবু। তিনি জানিয়েছেন, তৃতীয় দফার আলোচনার সময়ে মালিকপক্ষকে সমীক্ষার রিপোর্ট দিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের নিদের্শ দেওয়া হবে। মজুরি চুক্তি নিয়ে আলোচনার আগে সমীক্ষা রিপোর্ট প্রকাশ করায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন অনেক শ্রমিক সংগঠনও। চা শ্রমিক সংগঠনগুলির কো অর্ডিনেশন কমিটির আহ্বায়ক চিত্ত দে বলেন, “সমীক্ষায় সত্যি কথা উঠে তুলে ধরা হলে তাকে স্বাগত জানাই। তবে শুধু মালিকপক্ষের উপরে চাপ তৈরি করার কথা বলে সরকার হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারে না। চা শ্রমিকরা কী সুবিধে পাবেন তা আইনেই বলা রয়েছে। আইন মানা না হলে সরকার ব্যবস্থা নিতে পারে।”

জানুয়ারি মাসে প্রথম বার মজুরি চুক্তি নিয়ে আলোচনা হয়। বর্তমানে ৯৫ টাকা করে সাধারণ চা শ্রমিকরা মজুরি পান। চা বাগানদের মালিক সংগঠন টি আস্যোসিয়েশিয়নের-এর মহাসচিব প্রবীর ভট্টাচার্য বলেন, “সমীক্ষা রিপোর্ট এখনও পাইনি। সব বাগানেই যে একশো শতাংশ পরিষেবা বা পরিকাঠামো রয়েছে তা নয়। আমরা সবসময়েই পরিকাঠামো বৃদ্ধিতে চেষ্টা চালাচ্ছি। সরকারেরও সাহায্য চাই।” অনুষ্ঠানে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় সরকার বদ্ধপরিকর। মুখ্যমন্ত্রী নিজেও চা নিয়ে উদ্যোগী হয়েছেন।”

labour law tea graden
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy