Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

শ্রমিক-মালিক দূরত্ব ঘোচাতে বাগানে ফুটবল প্রতিযোগিতা

শ্রমিক ও কর্তৃপক্ষের পারস্পরিক বিবাদের ঘটনা ডুয়ার্সে হামেশাই ঘটছে। যার জেরে এ বছরই সোনালি চা বাগানের মালিককে যেমন শ্রমিকদের হাতে খুন হতে হয়েছে, বাগানের কাজ দেখভাল করার সময় দলমোড়ের সহকারী ম্যানেজারকে কুপিয়ে খুনের ঘটনাও ঘটেছে।

ফাইনালে জিতল কারবালা চা বাগান। ছবি: রাজকুমার মোদক।

ফাইনালে জিতল কারবালা চা বাগান। ছবি: রাজকুমার মোদক।

নিলয় দাস
বানারহাট শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:২৬
Share: Save:

শ্রমিক ও কর্তৃপক্ষের পারস্পরিক বিবাদের ঘটনা ডুয়ার্সে হামেশাই ঘটছে। যার জেরে এ বছরই সোনালি চা বাগানের মালিককে যেমন শ্রমিকদের হাতে খুন হতে হয়েছে, বাগানের কাজ দেখভাল করার সময় দলমোড়ের সহকারী ম্যানেজারকে কুপিয়ে খুনের ঘটনাও ঘটেছে।

ঠিক সেই সময় ফুটবলকে হাতিয়ার করে শ্রমিক ও কর্তৃপক্ষের দূরত্ব ঘোচাতে অনেকটাই সফল হয়ে উঠেছে একটি বেসরকারি সংস্থা। ওই সংস্থা তাদের চারটি চা বাগানের মধ্যে গত দু’মাস ধরে ফুটবল লিগ প্রতিযোগিতা করেছে। শনিবার ছিল তার চূড়ান্ত পর্যায়ের খেলা। শ্রমিকদের সঙ্গে বাগানের ম্যানেজাররা খেলায় মেতেছিলেন সে দিন।

ডুয়ার্সের চা শিল্পের ইতিহাস প্রায় দেড়শো বছর পুরনো ব্রিটিশ সরকারের আমল থেকে শ্রমিক মালিক দূরত্ব রয়েছে। আজও সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলছে। বাগানগুলিতে শ্রমিকদের দিয়ে কাজ করাতে হলে মালিকপক্ষের সঙ্গে শ্রমিকদের দূরত্ব বজায় রাখার পদ্ধতি মানছেন বেশির ভাগ চা বাগান কর্তৃপক্ষ। মান্ধাতার আমলের এই রীতি থেকে সরে শ্রমিক-মালিক সম্পর্কে অসন্তোষ কমাতে এবং কাজে উত্‌সাহ বাড়াতে ফুটবলকে বেছে নিয়েছে এই গোষ্ঠী। এ বার নিয়ে ছ’বছরে পা দিল এই প্রতিযোগিতা। আগামী বার থেকে বাগানের মহিলা শ্রমিকদের নিয়ে আদিবাসী সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা মূলক অনুষ্ঠান করার কথাও ঘোষণা করেছেন কর্তৃপক্ষ। সেখানে মহিলা শ্রমিকদের সঙ্গে ম্যানেজারদের গিন্নিরা সামিল হবেন বলে ঠিক হয়েছে।

এই সংস্থার চেয়ারম্যান কল্লোল দত্তের কথায়, “মিলেমিশে ফুটবল খেলার ফল আমরা পাচ্ছি। বাগানের শ্রমিকরা উত্‌সাহের সঙ্গে কাজ করছেন। উত্‌পাদন বেড়েছে। আগের তুলনায় বাগানে শ্রমিক অসন্তোষ অনেকটাই ঘুচেছে। বাকি বাগানগুলি এ ধরনের প্রতিযোগিতা করলে সেখানেও অসন্তোষ কমবে।”

বাগান মালিক সংগঠন ডুয়ার্স ব্রাঞ্চ অফ ইন্ডিয়ান টি অ্যাসোসিয়েশনের ডেপুটি সেক্রেটারি সঞ্জয় বাগচি বাগান কর্তৃপক্ষগুলির সঙ্গে বিষয়টি আলোচনা করা হবে বলে জানিয়েছেন।

বানারহাট চা বাগানে চূড়ান্ত পর্যায়ের খেলা দেখতে সংস্থার চারটি বাগান কারবালা, চুনাভাটি, বানারহাট, নিউ ডুয়ার্স-সহ বিভিন্ন বাগানের শ্রমিকরা জড়ো হন। চূড়ান্ত পর্যায়ের খেলা হয় বানারহাট ও কারবালা চা বাগানের মধ্যে। টাই-ব্রেকারে খেলার নিষ্পত্তি হয়। ২-১ গোলে জয়ী হয় কারবালা চা বাগান। বানারহাট বাগানের সহকারী ম্যানেজার যাদব চেটিয়ার কথায়, “গত দু’মাস ধরে খেলা নিয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে মিশেছিলাম। দূরত্ব যে কখন ঘুচে গিয়েছে তা বোঝা যায়নি।” ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট হয়েছেন বানারহাট বাগানের শ্রমিক শ্যাম ওঁরাও। তিনি বলেন, “আমাদের বাগান গুলিতে মালিক-শ্রমিকদের ভেদাভেদ নেই।”

ডুয়ার্সে জন্ম সাহিত্যিক তিলোত্তমা মজুমদারের। তাঁর মন্তব্য, “ খুবই ভাল উদ্যোগ।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

football tournament tea estate niloy das banarhat
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE