Advertisement
E-Paper

সমতলে কেন বিপর্যয়, প্রশ্নের মুখে গৌতম দেব

দার্জিলিং পাহাড়ে আগের তুলনায় অনেকটাই শক্তি বেড়েছে তৃণমূলের। কিন্তু, দার্জিলিং আসনের সমতলের সিংহভাগ এলাকাতেই বিজেপির কাছে পর্যুদস্ত হয়েছে তৃণমূল। দল সূত্রের খবর, শিলিগুড়ি, ফাঁসিদেওয়া ও মাটিগাড়া-নকশালবাড়িতে শোচনীয় ফল হওয়ার পরে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব দলের মধ্যেই সমালোচনার মুখে পড়েছেন।

কিশোর সাহা

শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০১৪ ০২:৪৬

দার্জিলিং পাহাড়ে আগের তুলনায় অনেকটাই শক্তি বেড়েছে তৃণমূলের। কিন্তু, দার্জিলিং আসনের সমতলের সিংহভাগ এলাকাতেই বিজেপির কাছে পর্যুদস্ত হয়েছে তৃণমূল। দল সূত্রের খবর, শিলিগুড়ি, ফাঁসিদেওয়া ও মাটিগাড়া-নকশালবাড়িতে শোচনীয় ফল হওয়ার পরে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব দলের মধ্যেই সমালোচনার মুখে পড়েছেন।

ভোটের ফল অনুযায়ী, শিলিগুড়ি, ফাঁসিদেওয়া, এবং মাটিগাড়া-নকশালবাড়ি, এই তিনটি বিধানসভায় তৃণমূলকে টেক্কা দিয়ে বিজেপি এক নম্বরে রয়েছে। খোদ উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী যেখানকার বাসিন্দা, সেই শিলিগুড়িতে তৃণমূলের চেয়ে বিজেপি প্রায় সাড়ে সাত হাজার ভোটে এগিয়েছে। ফাঁসিদেওয়া ও মাটিগাড়া-নকশালবাড়িতে বিজেপি তৃণমূলের চেয়ে যথাক্রমে প্রায় ৫ হাজার এবং প্রায় ১০ হাজার ভোটে। শুধু চোপড়ায় তৃণমূল এক নম্বরে। গোটা রাজ্যে যেখানে দলের বিপুল জয়, সেখানে শিলিগুড়িতে ফল হল কেন, সেই প্রশ্ন উঠেছে তৃণমূল শিবিরে।

নানা উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড, উত্তরকন্যা চালু করা, ফি বছর ঘটা করে উত্তরবঙ্গ উৎসব, ক্লাবগুলিকে টাকা বিলি করার পরেও কেন সমতলে বিজেপি এক নম্বরে পৌঁছল, সেই প্রশ্ন তুলেছেন দলের অনেকেই। অন্য দলের সদস্যদের দলে টেনে শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদ দখল করলেও, গ্রামাঞ্চলে জনসমর্থন বাড়ানো যায়নি কেন, সে কথা নিয়েও আলোচনা হচ্ছে। এমনকী, দার্জিলিং লোকসভা আসনের আওতায় থাকা চোপড়া যদি এক নম্বরে থাকতে পারে, তা হলে শিলিগুড়ি কেন পারল না সেই প্রশ্নের জবাব খুঁজছেন তৃণমূলের অনেকেই।

এই অবস্থায়, মালদহের সাবিত্রী মিত্রের মতো গৌতমবাবু নিজেই জেলা সভাপতির দায়িত্ব থেকে সরতে চান বলেও দলের মধ্যে খবর চাউর হয়ে যায়। কিন্তু, গৌতমবাবু ইস্তফা দিতে চাওয়ার খবর ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দেন। শনিবার তিনি বলেন, “আমি কেন জেলা সভাপতির পদ থেকে সরতে চাইব? এটা কেউ রটিয়েছে। দার্জিলিঙে আমাদের ফল অতটা খারাপ হয়নি।” তাঁর দাবি, তৃণমূল প্রার্থী ভাইচুং ভুটিয়া পাহাড়ে ভাল লড়াই করেছেন বলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই তাঁকে জানিয়েছেন। প্রাথমিক বিশ্লেষণের পরে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীর দাবি, “সিপিএমের ভোটের একটা বড় অংশ বিজেপি-র দিকে ঝুঁকেছে। তাতেই শিলিগুড়ি মহকুমার অনেক জায়গায় বিজেপি ভাল ভোট পেয়ে এগিয়ে গিয়েছে। তা ছাড়া অবাঙালি ভোটের বড় অংশ পেয়েছে তারা। কেন এমন হল তা খতিয়ে দেখছি।”

বস্তুত, পাহাড়ে তৃণমূলের ফল ২০০৯ সালের তুলনায় অনেক ভাল। সে যাত্রায় কংগ্রেস-তৃণমূল জোট মিলে পাহাড়ের তিন মহকুমায় সাকুল্যে ১০ হাজার ভোট পায় তৃণমূল। এবার ভাইচুং প্রায় ৯০ হাজার ভোট পেয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রীর বারবার পাহাড়ে সফর, জিএনএলএফের বড় অংশকে পাশে পাওয়ায় তৃণমূল শক্তি বাড়াতে পেরেছে। উপরন্তু, পাহাড়ে যথেচ্ছ বন্ধ বন্ধ করে জনতার একাংশের সমর্থনও আদায় করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।

অথচ যেখানে আগে থেকেই তৃণমূলের প্রভাব রয়েছে, সেই শিলিগুড়ি ও লাগোয়া এলাকায় তৃণমূল শক্তি বাড়াতে পারেনি। শিলিগুড়ি পুর এলাকার ৪৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে অন্তত ১৭ টি ওয়ার্ডেই বিজেপি এগিয়ে। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর, এসজেডিএ কিছুদিন পুরসভা চালানোর কোনও ফল কেন মেলেনি, সেই প্রশ্নও উঠেছে।

তৃণমূল শিবিরের একাধিক নেতাই একান্তে স্বীকার করেছেন, শিলিগুড়ি মহকুমার নেতাদের একাংশ ও তাঁদের অনুগামীদের ব্যবহার, আচরণে সাধারণ মানুষের বড় অংশ বিরক্ত। সেবক রোড এলাকায় অতীতে এক ডাকসাইটে সিপিএম নেতার বিরুদ্ধে জমির কারবার ও টাকা আদায়ের অভিযোগের জেরে বামেরা চরম বিব্রত হয়। সেই নেতাকে বহিষ্কার করেও শেষ রক্ষা হয়নি বামেদের।

সেবক রোডের বিস্তীর্ণ এলাকা যে বিধানসভার আওতায়, সেই ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ির বিধায়ক এখন তৃণমূল নেতা গৌতমবাবু। অভিযোগ, সেখানে অতীতের সেই সিপিএম নেতার মতোই কাজকারবার চালাচ্ছেন এলাকার এক তৃণমূল নেতা। প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্যের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, “তৃণমূলের দিক থেকে মানুষ যে মুখ ফেরাচ্ছেন তা স্পষ্ট। তবে তাঁদের সকলে আমাদের দিকে আসছেন না। তৃণমূল বিরোধী সেই ভোট বিজেপির দিকে ঝুঁকছে।” সেবক রোড এলাকায় বামেদের যে সব ত্রুটি-বিচ্যুতির জন্য মানুষ একটা সময়ে মুখ ফিরিয়েছিলেন, তৃণমূল সে পথে হাঁটছে বলেই যে একই ফল পাচ্ছে সে কথা অনেক বাম নেতা মানছেন।

এই পরিস্থিতিতে তৃণমূলের শীর্ষ নেতারা কী পদক্ষেপ করেন, তারই অপেক্ষায় রয়েছেন উত্তরবঙ্গের তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা।

সহ প্রতিবেদন: সৌমিত্র কুণ্ডু

kishore saha siliguri
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy