সবে মাত্র স্ট্যান্ডে এসে বাস দাঁড়িয়েছে। ঝাঁ চকচকে সরকারি বাসের স্বয়ংক্রিয় দু’টি দরজা খুলতেই, অপেক্ষা করে থাকা যাত্রীরা উঠতে শুরু করেছেন। পাশে দাঁড়ানো বেসরকারি বাস থেকে কয়েকজন যাত্রীও নেমে সরকারি বাসে উঠে পড়লেন। হঠাত্ই কয়েকজন এসে ক্রমাগত সরকারি বাসের গায়ে ধাক্কাধাক্কি শুরু করলেন। সরকারি বাসের চালক এবং কন্ডাক্টরকে উদ্দেশ্য করে শুরু হল তেড়ে গালিগালাজ। বাধ্য হয়ে বাসটি স্ট্যান্ড ছেড়ে চলে গেল। তখনও বাস ছাড়ার সময় হতে ৫ মিনিট দেরি রয়েছে।
পরের বাসটি এল মিনিট ২০ পরে। স্ট্যান্ডে এসে সবেমাত্র থেমেছে সরকারি বাসটি। দরজা খোলার আগেই পেছনে এসে দাঁড়াল একটি বেসরকারি বাস। টানা হর্ন বাজাতে শুরু করলেন বেসরকারি বাসের চালক। এবারও সরকারি বাসটির সামনে এসে দাঁড়ালেন কয়েকজন। তারা সকলেই বেসরকারি বাসের কর্মী বলে অভিযোগ। বেসরকারি বাস যেতে পারছে না বলে দাবি করে, সরকারি বাসটিকে পাঠিয়ে দেওয়া হল স্ট্যান্ডের অনেকটাই দূরে। সরকারি বাসের চালক এবং কনডাক্টর প্রতিবাদ করতেই মারমুখি হয়ে উঠলেন বেসরকারি বাস কর্মীরা। তাঁদের মধ্যে কয়েকজন বাস মালিক ছিলেন বলেও অভিযোগ। দু’টি ঘটনাই মঙ্গলবার সকালে জলপাইগুড়ির কদমতলা বাস স্ট্যান্ডে। জওহর লাল নেহেরু জাতীয় নগরায়ণ প্রকল্পের সরকারি বাস জলপাইগুড়ি-শিলিগুড়ি রুটে চালু হতে এমনটাই চলছে বলে অভিযোগ।
শুধু একদিন নয়, প্রতিদিনই বেসরকারি বাস কর্মীদের একাংশের হুমকির মুখে পড়ে, নির্ধারিত সময়ের আগেই উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের (এনবিএসটিসি) কর্মীরা বাস চালাতে বাধ্য হচ্ছেন বলে অভিযোগ। বিষয়টি জানার পরেও কর্তৃপক্ষ উদাসীন থাকায় এই প্রবণতা বেড়ে চলেছে বলে সরকারি কর্মীদের অভিযোগ। যার জেরে সময়েও এসেও যাত্রীদের অনেকেই স্ট্যান্ড থেকে সরকারি বাস পাচ্ছেন না বলে দাবি করেছেন।
ফাইবারের তৈরি আরামদায়ক সিট। পা রাখার মতো অনেকটা জায়গা। সিটের কিছুটা নীচ থেকে শুরু হওয়া লম্বা জানালা। বাসের দেওয়ালের সিংহভাগই স্বচ্ছ কাঁচের। ভিতরে এলইডি আলো। প্রতিটি স্টপেজে থামার আগে সাউন্ডবক্সে সেই স্টপেজের নাম ঘোষণা। সেই সঙ্গে আধুনিক ‘সকারে’র কারণে ভাঙা রাস্তাতেও কম ঝাকুনি। যাত্রীদের পছন্দ হয়ে উঠলেও, কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাবে সাধারণ যাত্রীদের অনেকেই পরিষেবা পাচ্ছে না বলে অভিযোগ। সময়ে বাস না পেয়ে অনেকেই বেসরকারি বাসে উঠতে বাধ্য হচ্ছেন বলে দাবি। যার জেরে সংস্থার আয়ও কম হচ্ছে বলে দাবি। জলপাইগুড়ি থেকে শিলিগুড়ির নিত্যযাত্রী শিক্ষক প্রসেনজিত্ দত্ত বলেন, “বাসের যে সময় জানানো হয়েছে। অথচ প্রতিদিনই স্ট্যান্ডে এসে দেখছি, আগেই বাস ছেড়ে দিয়েছে।”
সমস্যার কথা শুনেছেন বলে দাবি করেছেন নিগমের চেয়ারম্যান তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। তিনি বলেন, “জলপাইগুড়িতেই এই সমস্যা বেশি হচ্ছে। সরকারি বাসগুলি যাতে কোনভাবেই সময়ের আগে না চলে, তার জন্য প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে হবে। জেলা প্রশাসনের সঙ্গে এ বিষয়ে বৈঠক করব। সেই সঙ্গে নিগমের আধিকারিকদেরও কোন বাস কখন চলছে, তা নিয়মিত দেখতে হবে।” সরকারি বাসের কর্মীদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করলেও, বাসগুলির চলাচল নিয়ে নালিশ করেছে বেসরকারি বাস সংগঠন। জলপাইগুড়ি শিলিগুড়ি সুপার বাস মালিক সংগঠনের সম্পাদক শিবু দে’র অভিযোগ, “পনেরো মিনিট পরপর সরকারি বাস চলার কথা থাকলেও, তার আগেই বাস স্ট্যান্ড চলে আসছে। সে কারণেই অনেকসময় হয়ত আমাদের কর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে ফেলেন। তবে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন।” জেলাশাসককে স্মারকলিপি দেওয়ার কথা জানিয়েছেন বেসরকারি বাস মালিকদের সংগঠনও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy