Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

হাজার কোটির হিসাব নেই সর্বশিক্ষায়

কোনও জেলায় ৪২ কোটি টাকা খরচ করার হিসেব পাওয়া যায়নি। আবার কোনও জেলায় ওই টাকার পরিমাণ ১৪৫ কোটি টাকা। গত এক বছরে রাজ্য জুড়ে হিসাব না পাওয়া টাকার অঙ্ক এক হাজার কোটির উপরে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কোচবিহার শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০১৪ ০৭:০৫
Share: Save:

কোনও জেলায় ৪২ কোটি টাকা খরচ করার হিসেব পাওয়া যায়নি। আবার কোনও জেলায় ওই টাকার পরিমাণ ১৪৫ কোটি টাকা। গত এক বছরে রাজ্য জুড়ে হিসাব না পাওয়া টাকার অঙ্ক এক হাজার কোটির উপরে। এ ছাড়াও ২০১১-১২ সাল পর্যন্ত আরও ৪০০ কোটি টাকা খরচের হিসাব পাওয়া যায়নি। পশ্চিমবঙ্গে সর্বশিক্ষা মিশনের চিত্র এটাই। ওই টাকার হিসাব না পাওয়া পর্যন্ত সর্বশিক্ষা মিশনের খাতে কেন্দ্রীয় সরকার আর টাকা বরাদ্দ করবে না জানিয়ে দেওয়ায় বিপাকে পড়েছে শিক্ষা দফতর। প্রত্যেকটি জেলাকে দ্রুততার সঙ্গে ওই টাকার খরচের হিসেব জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য শিক্ষা দফতর।

সর্বশিক্ষা মিশন কর্তৃপক্ষের দাবি, সব টাকা স্কুলগুলিকে দেওয়া হয়েছে। অধিকাংশ টাকা খরচ করেও হিসাব দিতে গড়িমসি করছে অনেকে। আবার অনেকে জমি সহ স্কুলের নানা সমস্যার জন্য ওই টাকা খরচ করে উঠতে পারেনি। রাজ্যের নির্দেশ পাওয়ার পর খরচের হিসাব সংগ্রহের জন্য স্কুল পরিদর্শক থেকে শুরু করে সর্বশিক্ষা মিশনের অধীন সমস্ত কর্মীদের স্কুলে স্কুলে পাঠানো হচ্ছে। আর যে সব স্কুল কর্তৃপক্ষ এখনও ওই টাকা খরচ করতে পারেনি, জেলাশাসকের কথা মতো সেখান থেকে টাকা তুলে নিয়ে অন্য স্কুলে দেওয়া শুরু করা করেছে বিভিন্ন জেলা। কোচবিহার জেলাতেও প্রায় ৮৫টি স্কুল থেকে দুই কোটি টাকা তুলে অন্য স্কুলে দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে সর্বশিক্ষা মিশনের এক আধিকারিক জানান, সর্বশিক্ষা মিশনের টাকার হিসাব দিতে গড়িমসি করেন অনেক স্কুল কর্তৃপক্ষ। যার ফলেই ওই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। মার্চের মধ্যে সমস্ত ওই খাতে টাকা খরচের হিসেব জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মিশনের জেলার প্রকল্প আধিকারিক আমিনুল আহসান বলেন, “আমরা টাকার অধিকাংশের হিসাব এর মধ্যে হাতে পেয়েছি। বাকি হিসাব দেওয়ার জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে।”

সর্বশিক্ষা মিশন সূত্রের খবর, স্কুল ভবন তৈরি ও স্কুলের নানা সামগ্রী কেনার জন্য গত ২০০২ সাল থেকে সর্বশিক্ষা মিশন প্রকল্পে রাজ্যের মাধ্যমে বিভিন্ন জেলাকে টাকা দেওয়া শুরু করে কেন্দ্রীয় সরকার। প্রতি বছর বাজেটে ওই খাতে টাকা বরাদ্দ করা হয়। জেলাগুলির জন্য নিয়ম অনুযায়ী, বরাদ্দ টাকার ৭৫ শতাংশ স্কুলগুলিকে অগ্রিম হিসেবে দেওয়া হয়। সেই কাজের খরচের হিসাব পাওয়ার পর বাকি ২৫ শতাংশ টাকা তাদের দেওয়া হয়। অভিযোগ, দীর্ঘ দিন ধরে ওই টাকার হিসাব পাওয়া যাচ্ছে না।

সর্বশিক্ষা মিশন সূত্রেই জানা গিয়েছে, ২০১১-১২ সাল পর্যন্ত ৪১১ কোটি ৭৫ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকার খরচের কোনও হিসেব পাওয়া যায়নি। এর মধ্যে পুরুলিয়া জেলায় ৮৯ কোটি ৭ লক্ষ ৪৯ হাজার, উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় ৬৬ কোটি ২২ লক্ষ ৩০ হাজার, উত্তর দিনাজপুর জেলায় ৬৪ কোটি ৩৬ লক্ষ ৪৫ হাজার, মুর্শিদাবাদ জেলায় ৫৪ কোটি ১১ লক্ষ ৭৭ হাজার টাকার কোনও হিসাব মেলেনি। তবে এই ব্যাপারে টাকার অঙ্ক সব থেকে কম হুগলি জেলায়। সেখানে হিসাব মেনেলি ১ কোটি ১৫ লক্ষ টাকার।

২০১২-১৩ সালে বরাদ্দ টাকার মধ্যে ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১০৯২ কোটি ৯৮ লক্ষ সাত হাজার টাকার খরচের হিসাব এখনও করে উঠতে পারেনি শিক্ষা দফতর। এর মধ্যে উত্তর ২৪ পরগণা থেকে ১৪৫ কোটি টাকা ৯১ হাজার ৫৩ লক্ষ টাকার, পুরুলিয়ার ১১৯ কোটি ৫৭ লক্ষ ৫৪ হাজার টাকার, দক্ষিণ ২৪ পরগণার ১০৮ কোটি ৪৭ লক্ষ টাকা, পশ্চিম মেদিনীপুরে ৬০ কোটি ৬ লক্ষ ৫৬ হাজার টাকার হিসেব পাওয়া যায়নি। কোচবিহারে প্রায় ৬৪ কোটি টাকার হিসাব এখনও হয়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

education north bengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE