Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

হোটেলে ছিলই না আগুন রোধের ব্যবস্থা

প্রধাননগরের হোটেলে আগুন প্রতিরোধের নূন্যতম ব্যবস্থা ছিল না বলে পরীক্ষায় জানতে পারল ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ দল। গত ৩০ ডিসেম্বর গভীর রাতে আগুন লেগে হোটেলে থাকা ২ তরুণ-তরুণীর মৃত্যু হয়। জখম হন অন্তত ৫ জন পর্যটক। বুধবার কলকাতা থেকে আসা ফরেন্সিক দল হোটেলের বিভিন্ন ঘর থেকে পোড়া অংশের নমুনা সংগ্রহ করেছেন।

শিলিগুড়ি জংশন পুড়ে যাওয়া হোটেলে নমুনা সংগ্রহে ফরেন্সিক দল। বুধবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

শিলিগুড়ি জংশন পুড়ে যাওয়া হোটেলে নমুনা সংগ্রহে ফরেন্সিক দল। বুধবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:০৪
Share: Save:

প্রধাননগরের হোটেলে আগুন প্রতিরোধের নূন্যতম ব্যবস্থা ছিল না বলে পরীক্ষায় জানতে পারল ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ দল। গত ৩০ ডিসেম্বর গভীর রাতে আগুন লেগে হোটেলে থাকা ২ তরুণ-তরুণীর মৃত্যু হয়। জখম হন অন্তত ৫ জন পর্যটক। বুধবার কলকাতা থেকে আসা ফরেন্সিক দল হোটেলের বিভিন্ন ঘর থেকে পোড়া অংশের নমুনা সংগ্রহ করেছেন। সরেজমিনে হোটেল পরিদর্শনের পরে ফরেন্সিক দলটি জানিয়েছে, আগুন ঠেকাতে ‘স্প্রিং কলার’, ‘জলাধার’ কিছুই ছিল না। ফায়ার অ্যালার্ম ছিল কিনা তাও এ দিন জানা যায়নি। আগুন নেভানোর ফোমের বেশ কয়েকটি সিলিন্ডারের ছবিও তুলেছে দলটি। সেগুলি আদৌও কার্যকর ছিল না বলে প্রাথমিক ভাবে মনে করছে দলের একাংশ সদস্য। হোটেলে যে নূন্যতম আগুন প্রতিরোধের ব্যবস্থা ছিল না তা এ দিন পুলিশকে জানিয়েও দিয়েছে দলটি। সেই সঙ্গে আগুন কী ভাবে ছড়িয়ে পড়ল তা নিয়েও ধন্ধ প্রকাশ করেছে ফরেন্সিক দল।

চিত্রাক্ষ্য সরকারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের দলটি বুধবার সকালে ঘণ্টাখানেক ধরে হোটেলের বিভিন্ন ঘর থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছে। একটি ঘরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিয়ারের ক্যানও থেকে বিয়ারের নমুনাও সংগ্রহ করেছে দলটি। দলনেতা চিত্রাক্ষ্যবাবু বলেন, “আমরা সব সম্ভবনাই খতিয়ে দেখছি। তাই সবরকম নমুনাই সংগ্রহ করেছি। কম্পিউটারের যন্ত্রাংশের নমুনাও সংগ্রহ করা হয়েছে। তবে নমুনা সংগ্রহের পরে প্রাথমিক ভাবে আমাদের মনে হয়েছে, হোটেলে আগুন প্রতিরোধের নূন্যতম কোনও ব্যবস্থা ছিল না।”

প্রধাননগরের হোটেলের কোন ঘর থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়ল, তা নিয়ে সংশয় না থাকলেও, কী ভাবে আগুন ছড়াল তা নিয়ে ধন্ধের কথা পুলিশকে জানিয়েছে বিশেষজ্ঞ দল। অগ্নিকাণ্ডের পরেই দমকলের তরফে প্রাথমিক ভাবে জানানো হয়েছিল, রিসেপশন থেকে আগুন ছড়ায়। শর্টসার্টিটের কারণেই আগুন লেগে যায় বলে জানানো হয়েছিল। এ দিন হোটেলের বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করার পরে রিসেপশন থেকেই যে আগুন ছড়িয়েছে তা নিয়ে ফরেন্সিক দলটি নিশ্চিত হলেও, শর্টসার্কিটই যে আগুন লাগার কারণ তা নিয়ে সন্দিহান ৩ সদস্যের দলটি। রিসেপশনে থাকা বিদ্যুতের প্যানেল বোর্ড থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়েছে বলে প্রাথমিক সন্দেহের কথাও জানানো হয়েছিল। যদিও এ দিন রিসেপশন থেকে নমুনা সংগ্রহ করার পরে দলের সদস্যরা মনে করছেন, আগুন লাগার কারণ অন্য কিছুও হতে পারে।

কেন সন্দিহান ফরেন্সিক দলটি?

সূত্রের খবর রিসেপশনের প্যানেল বোর্ডের পাশেই টেবিল রয়েছে। সেই টেবিলে থাকা হোটেলের রেজিস্টার খাতা খুলে এ দিন দলের সদস্যরা দেখিয়েছেন, ভিতরের পৃষ্ঠার কিছুটা অংশ পুড়ে যায়নি। দলের একাংশ সদস্য দাবি করেছেন, সাধারণত যে জায়গা থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে তার আশেপাশে থাকা সবকিছুই পুরোপুরি দগ্ধ হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে তা না হওয়ায় সংশয় তৈরি হয়েছে। একইভাবে রিসেপশনের টেবিলের নীচে থাকা কম্পিউটারের একটি যন্ত্রাংশও অক্ষত ছিল বলে জানা গিয়েছে। প্যানেল বোর্ড থেকে আগুন ছড়ালে, পাশের টেবিলের নীচে আগুন পৌঁছল না কী ভাবে সেই প্রশ্নই ধন্ধে ফেলেছে দলের সদস্যদের। দলের নেতৃত্বে থাকা চিত্রাক্ষ্যবাবু অবশ্য বলেন, “নমুনা পরীক্ষার পরে আগুন লাগার বিস্তারিত তথ্য জানা যাবে। তার আগে কিছু বলা সম্ভব নয়। রিপোর্ট দ্রুত পুলিশকে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।”

অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পরেই কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগে প্রধাননগরের হোটেল মালিককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ দিন ফরেন্সিক দলের সঙ্গে ছিলেন শিলিগুড়ি কমিশনারেটের পুলিশ অফিসারেরা। এসিপি (পশ্চিম) মানবেন্দ্র দাস বলেন, “ঘটনার পরেই আইন মেনে পদক্ষেপ করা হয়েছে। ফরেন্সিক রিপোর্ট পেলে সে অনুযায়ী তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

siliguri hotel fire
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE