Advertisement
E-Paper

হাতে গোলাপ, দেখা হবে মহানন্দার বাঁধে

গৌড়-আদিনা ঘুরে গঙ্গায় নৌকাবিহার, নাকি শহরেরই নিভৃত রেস্তোরাঁয় বসে খানিক আলাপচারিতা! বাড়ির বড়দের না বলে লুকিয়ে চুরিয়ে মনের মানুষের সঙ্গে বেরিয়ে পড়া, নাকি ফেসবুকে প্রিয়জনের সঙ্গে সম্পর্কের কথা ঘোষণা করে প্রেমের সোচ্চার উদযাপন!

সায়নী মুন্সি

শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:৫৫

গৌড়-আদিনা ঘুরে গঙ্গায় নৌকাবিহার, নাকি শহরেরই নিভৃত রেস্তোরাঁয় বসে খানিক আলাপচারিতা!

বাড়ির বড়দের না বলে লুকিয়ে চুরিয়ে মনের মানুষের সঙ্গে বেরিয়ে পড়া, নাকি ফেসবুকে প্রিয়জনের সঙ্গে সম্পর্কের কথা ঘোষণা করে প্রেমের সোচ্চার উদযাপন!

পছন্দ যাই হোক না কেন, সুতোটা সেই প্রেমের টানে বাঁধা। শহরের বদলটার সঙ্গে সঙ্গে বদলে গিয়েছে প্রেমের ধরন। মাঠ হারিয়ে গিয়ে উঠেছে ফ্ল্যাটবাড়ি। নীলখামের জায়গা নিয়েছে হোয়াটসঅ্যাপ-বার্তা। মহানন্দার বাঁধের পাশের রাস্তার সঙ্গেই প্রেমের জায়গা হিসেবে যোগ হয়েছে শহরের উড়ালপুল। এই বদলেও প্রেমের অনুভব নিখাদ। আজ, ভ্যালেন্টাইন্স ডে-র দিনে মালদহ যেন সেই কথাই বলছে।

‘কুছ কুছ হোতা হ্যায়’-এর রাহুল বলেছিল, “প্যায়ার দোস্তি হ্যায়!” সবে তিরিশে পা দেওয়া দীপান্বিতা চক্রবর্তীর কাছেও ভ্যালেন্টাইন্স ডে খানিকটা ফ্রেন্ডশিপ ডে-র মতোই। তাঁর স্মৃতি অনুযায়ী, “এই দিনটিতে স্কুল-কলেজে পড়ার সময় প্রাইভেট টিউশন বা ক্লাস বাঙ্ক করে অনেকে মিলে সিনেমায় গিয়েছি। মনে মনে একটা প্রস্তুতি থাকতই। পড়ার ব্যাগে অন্য জামা, কসমেটিকস্ সবই থাকত। প্রয়োজন মতো সেগুলো ব্যবহার ফেলতাম। তবে কার্ড বা উপহার দেওয়ার চেয়েও বেশি আনন্দের ছিল সব জোড়ায়-জোড়ায় মিলে কোথাও ঘুরতে যাওয়া। সে এক আলাদা অনুভূতি! এখন অবশ্য সেই উত্তেজনা আর নেই।”

এখন ভ্যালেন্টাইন্স ডে-র আগে পুরো সপ্তাহ জুড়েই চলে প্রেমের উদযাপন। সেই সপ্তাহে রয়েছে ‘গোলাপ দিবস’, ‘চকোলেট দিবস’, ‘আলিঙ্গন দিবসে’র মতো দিন। তবে দীপান্বিতাদের স্কুল জীবনে এগুলো ছিল না। তাই ওই একটা দিনের জন্যই অপেক্ষায় থাকতেন তাঁরা। তাঁর কথায়, “তবে সবই করতাম লুকিয়ে। ফলে রোমাঞ্চের মাত্রাটা আলাদা ছিল।”

তবে সেই লুকোছাপার দিন গিয়েছে। বাড়ির বড়দের লুকিয়ে আর শুভঙ্কর শিশু উদ্যানে যেতে হয় না। বাড়িতে না বলে লুকিয়ে চুরিয়ে ভ্যালেন্টাইন্স ডে উদযাপনে মেতে ওঠার জমানা আর নেই বলে জানিয়ে দিল মালদহের একাধিক ছাত্রছাত্রী। সকলেই কার্ড কিনতে গিয়েছিল। ঝকঝকে মুখে একঝাঁক ছাত্রীদের জবাব, “লুকোছাপার কী আছে! কাউকে ভালবেসে কার্ড দেওয়ায় অন্যায় কোথায়! একটু ঘুরতে গেলেই বা ক্ষতি কী?” তাদের সংযোজন, “কোনও অশালীন, অশোভন কিছু না করলেই হল। বাবা-মা তা-ই বলে দিয়েছেন।”

সবার অবশ্য প্রিয়জনের সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ হয়নি। যেমন ঋক। বান্ধবী থাকেন কলকাতায়। তাই গৌড় এক্সপ্রেস ধরে মালদহ থেকে সটান শিয়ালদহ গিয়ে ফুলের তোড়া দেওয়ার ইচ্ছে ঘুরপাক খাচ্ছিল। কিন্তু, কলকাতায় ঘোরাঘুরির হ্যাপা তো কম নয়। তাই বান্ধবীকে অনুরোধ করে মালদহেই টেনে আনার চেষ্টা চালিয়েছিলেন তিনি। জানিয়েছিলেন, গোটা দিনটা গৌড়-আদিনায় বেড়িয়ে কোনও রেস্তোরাঁয় বসে খেয়ে ফিরবেন। কিন্তু, বান্ধবী সটান না-করে দিয়েছেন। কারণ, পরদিনই তাঁর ইন্টারভিউ আছে। অগত্যা ছোটবেলার একদল বন্ধু-বান্ধবীর সঙ্গেই গঙ্গায় বেড়ানোর পরিকল্পনা করেছেন ঋক। তবে শহরের স্কুল পড়ুয়া একদল উচ্চ-মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী অবশ্য জানাল, পড়াশুনো সামলেই ওই দিনটি তারা উদযাপন করবে। তাদের বক্তব্য, “যদিও সামনে উচ্চ-মাধ্যমিক পরীক্ষা, তবুও ওই দিনটি ‘সেলিব্রেট’ করতেই হবে। কার্ডও দেব প্রিয়জনকে।”

আমের শহরে কার্ড কেনার সেই হিড়িকেরই দেখা মিলল উপহারের দোকানে। ইংরেজবাজারের দোকানের বিক্রেতা সজল কুণ্ডু বললেন, “মোটামুটিভাবে জানুয়ারির শেষ থেকেই উপহার কেনা শুরু হয়ে যায়। সফট টয়েজ কেনার চলও হয়েছে ইদানীং। দোকানে বিভিন্ন বয়সেরই ক্রেতারা আসেন। তবে ভ্যালেন্টাইন্স ডে-র জন্য স্কুল-পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীদের ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হয়।”

শুধুই কি নীলখামের বার্তা? রসনাতৃপ্তি না হলে কি ভালবাসার উদযাপন সম্পূর্ণ হয়? তাই শহর থেকে কিছুটা দূরে গৌড়ের কাছে নামী রেস্তোরাঁয় ভিড় থাকে চোখে পড়ার মতো। সেখানকার কর্ণধার অসীম ভগত জানালেন, “ভ্যালেন্টাইন্স ডে-তে যুগলে ক্রেতার সংখ্যাই বেশি থাকে। প্রায় রাত ১২টা পর্যন্ত ভিড় থাকে।” রবীন্দ্র অ্যাভিনিউর নতুন রেস্তোঁরা অবশ্য বিশেষ দিনের জন্য রেশমি কাবাব কিছুটা অন্যরকমভাবে তৈরি করার কথা জানিয়েছে।

তবে প্রেমের দিনে বাইরে কোথাও নয়, অনেকে বাধ্য হয়ে থাকছেন বাড়িতেই। তেমনই পেশায় ফটোগ্রাফার অভীক সেন মজুমদার। বছর ছাব্বিশের অভীক বললেন, ‘‘ভালবাসার দিনে এখন বাড়িতেই থাকি। যে হেতু বান্ধবী কলকাতায়। তবে কলেজে পড়াকালীন বন্ধুদের সঙ্গে গৌড়, আদিনা হয়ে আশপাশের ধাবায় লাঞ্চ সেরে পরে রেস্তোঁরায় সময় কাটিয়ে একদম রাতে বাড়ি ফিরতাম।” এ বার অন্য বন্ধু-বান্ধবীদের সঙ্গে যাওয়ার প্ল্যান করলেন না কেন? অভীক ম্লান হাসলেন। বললেন, “এটা আমার দ্বারা হবে না। কলেজে পড়ার সময়ে খুব খারাপ লাগতো, যখন অন্য কোন বন্ধু আমার সাহায্য নিয়ে অন্য কোন মেয়েকে আমারই চোখের সামনে ভ্যালেনটাইনস ডে-তে কার্ড বা গিফট্ দিত। আমি বাবা ও সবে আর নেই!”

sayani munchi malda valentine's day
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy