অনুকূল আবহাওয়ায় এবার আলুর ফলন অনেকটাই বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। তাও স্বস্তিতে নেই কোচবিহার জেলার আলুচাষিরা। আলু মজুত রাখার পর্যাপ্ত হিমঘর না থাকায় এবার বড় লোকসানের মুখে পড়ার আশঙ্কা করছেন তাঁরা
পাইকারি বাজারে এখন আলু প্রতি কেজি ৩ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মার্চের শুরুতে খেত থেকে পুরোমাত্রায় আলু তোলার কাজ শুরু হবে। সে সময় আলুর দাম আরও নেমে যাবে বলে আশঙ্কা উদ্বিগ্ন জেলা কৃষি দফতরের কর্তাদের। কোচবিহার জেলা শস্য সুরক্ষা আধিকারিক বিপ্লব ঘোষ বলেন, “এবারে সাড়ে ৯ লক্ষ মেট্রিক টন আলু উৎপাদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ওই আলু মজুত রাখার জন্য যে পরিমাণ হিমঘর দরকার তা আমাদের জেলায় নেই। সমস্ত রিপোর্ট ঊর্ধবতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।”
দফতর সূত্রের খবর, কোচবিহার জেলায় ১২ টি হিমঘর রয়েছে। তাতে দেড় লক্ষ মেট্রিক টন আলু মজুত রাখা যেতে পারে। জেলায় আলুর ফলন এবার সাড়ে ন’লক্ষ মেট্রিক টন ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। কোচবিহারে যা আলুর চাহিদা তার পরেও অন্তত কয়েক লক্ষ মেট্রিক টন আলু পড়ে থাকবে। সেই আলুর কি হবে তা নিয়েই এখন চিন্তিত কৃষকরা। এবার আবহাওয়া আলুর ফলনের সহায়ক হওয়ায় প্রতি বিঘা জমিতে প্রায় ৭০ থেকে ৮০ মন আলু উৎপাদন হবে বলে আশা করছেন কৃষি আধিকারিকরা। গত বছর ওই পরিমাণ কম ছিল। বেশ কিছু এলাকায় ধসার প্রকোপে আলু নষ্ট হয়েছিল। এবার সেভাবে ধসারোগ দেখা যায়নি।
কৃষি বিপণন দফতর সূত্রের খবর, কোচবিহারের উৎপাদিত আলুর একটা বড় অংশ প্রতি বছর অসমে যায়। এবারে ওই চাহিদা খুব কম। ব্যবসায়ীরা দাবি করেছেন, অসমেও এবার আলুর উৎপাদন ভাল হয়েছে। সেক্ষেত্রে তাদের চাহিদা অনেকটাই কমে গিয়েছে।
কালীগঞ্জের কৃষক বিবেকানন্দ বর্মন জানান, কিষাণ ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে তিনি ৬০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে আলু চাষ করেছেন। উৎপাদন ভাল হয়েছে। তিনি বলেন, “তিন বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছি। প্রায় ৭৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ৩ টাকা দরে আলু বিক্রি করে ভ্যান ভাড়াও উঠবে না।” কোচবিহার জেলা ধান,পাট, আলু চাষি সংগ্রাম কমিটির সম্পাদক নৃপেন কার্জি বলেন, “আলুর দাম ক্রমশ কমে যাচ্ছে। কৃষকরা বিপদে পড়েছেন। অনেকে ঋণ করে আলু চাষ করেছেন। আশঙ্কা করা হচ্ছে চাষের পয়সা উঠে আসবে না ।এই অবস্থায় সরকার কৃষকদের দিকে নজর দিক। আমরা সরকারি ভাবে আলু কেনার দাবিতে আন্দোলনে নামব।”
এই অবস্থায় রাজ্য সরকারের কাছে ধানের মতোই সহায়ক মূল্যে আলু কেনার দাবি তুলেছেন ব্যবসায়ী ও কৃষকরা। দিনহাটা মহকুমা ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষ থেকে রাজ্যের কৃষি বিপনন মন্ত্রীর কাছে ওই দাবি জানানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দিনহাটা মহকুমা ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক রানা গোস্বামী বলেন, “যেভাবে আলুর দাম কমছে তা আশঙ্কার। এখনই লোকসানের মুখ দেখতে হচ্ছে। চাষের খরচ তুলতে পারছেন না কৃষকরা। এই অবস্থায় সরকার পাশে না দাঁড়ালে ক্ষতি হবে। আমরা কৃষি বিপণন মন্ত্রীর কাছে সহায়ক মূল্যে আলু কেনার দাবি জানাব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy