প্রশাসনের হস্তক্ষেপে আলু ব্যবসায়ীরা ধর্মঘট তুললেও, বাজারে তার সুফল মিলছে না বলে ক্রেতাদের অভিযোগ। ধর্মঘট প্রত্যাহারের পরে দু’দিন পেরিয়ে গিয়ে রবিবারও উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন বাজারে ন্যূনতম ২৪ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি হয়েছে। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন হিমঘর মিলিয়ে পর্যাপ্ত আলু মজুত রয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রে দাবি করা হলেও, কেন আলুর দাম কমছে না, তা নিয়ে পাইকারি এবং খুচরো ব্যবসায়ীদের মধ্যে অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ শুরু হয়েছে। উত্তরবঙ্গের বাজারে আলুর দাম নিয়ন্ত্রণ করতে চলতি সপ্তাহে উত্তরকন্যায় কৃষি বিপণন মন্ত্রী বৈঠক করতে আসবেন বলে জানা গিয়েছে।
খুচরো ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, সম্প্রতি উত্তরকন্যায় প্রশাসনিক বৈঠকে পাইকারি বাজারে আলুর জোগান বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও কিছু ব্যবসায়ী তা মানছেন না। ফলে পাইকারি বাজার চড়া থাকায় খুচরো বাজারেও আলুর দাম বাড়ছে। আলুর পাইকারি ব্যবসায়ীদের পাল্টা অভিযোগ, খুচরো ব্যবসায়ীরা পাইকারি বাজার থেকে আলু না কিনে নিজেদের মজুত করে রাখা আলু বেশি দামে বিক্রি করছেন। ব্যবসায়ীদের নিজেদের মধ্যে টানাপোড়েনে আলুর দাম কমছে না অভিযোগ উঠলেও প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ক্রেতা এবং ব্যবসায়ীদের একাংশ।
কৃষি বিপণন মন্ত্রী অরূপ রায় অবশ্য উত্তরবঙ্গের বাজারে আলুর দাম নিয়ে খোঁজখবর শুরু করেছেন বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “ইতিমধ্যে প্রশাসনের সঙ্গে আলু ব্যবসায়ীদের আলোচনা হয়েছে। আমি নিজে চলতি সপ্তাহে উত্তরবঙ্গে গিয়ে বৈঠকে বসব। দ্রুত আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে পদক্ষেপ হবে।”
এই পরিস্থিতিতে হিমঘরে নজরদারি করার দাবি তুলেছে ধূপগুড়ি পটেটো মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনের সদস্য স্বপন দত্ত বলেন, “পাইকারি বাজার সহ হিমঘরগুলি থেকে প্রতিদিন কী পরিমাণ আলুর জোগান হচ্ছে, তাতে নজরদারি করা হলেই দাম কমবে। এ বিষয়ে সরকারের উদ্যোগী হতে হবে।” উত্তরবঙ্গ আলু ব্যবসায়ী সমিতির দাবি, যে পরিমাণ আলু হিমঘরে মজুত রয়েছে, তার অর্ধেক পরিমাণ আলুর চাহিদা স্থানীয় বাজারে রয়েছে। ফলে চাহিদার থেকে বেশি পরিমাণে আলু বাজারে আনা হলে সরকারি নির্ধারিত আলুর দাম খুচরো বাজারে ১৪ টাকায় নেমে আসবে বলে তাঁরা দাবি করেন। সেই উদ্বৃত্ত আলু ভিন রাজ্যে পাঠানোর ছাড়পত্র দিতে হবে বলেও পাল্টা দাবি তুলেছে সমিতি। শনিবার থেকে ধূপগুড়ি এলাকায় ৩টি স্টল খুলে সরকারি দরে আলু বিক্রি করছেন সমিতির সদস্যরা। যদিও, তা চাহিদার তুলনায় সিকিভাগও নয় বলে অভিযোগ। দাম কমাতে হিমঘর থেকেই বেশি পরিমাণে আলু বের করার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
উত্তরবঙ্গ আলু ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক কার্তিকবাবু অবশ্য বলেন, “দু’এক দিন পর থেকেই আলুর দাম কমতে শুরু করবে বলে আশা করছি। এ দিন রবিবার হিমঘর বন্ধ ছিল। সোমবার থেকে ফের আলু বের হবে।” এ দিনই ন্যায্য মূলে আলু বিক্রির ব্যবস্থার জন্য আলু ব্যবসায়ী ও হিমঘর মালিকদের সঙ্গে আলোচনায় বসে টাক্সফোর্সের প্রতিনিধিরা। রবিবার বিকেলে আলিপুরদুয়ারের তপসিখাতা এলাকায় একটি হিমঘরের অফিসে ওই বৈঠক হয়। জেলা টাক্স ফোর্সের সদস্য তথা আলিপুরদুয়ার জেলার সহকারী কৃষি অধিকর্তা অরূপ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ক্রেতাদের কাছে ন্যায্য মূল ১৪ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি করতে বলা হয়েছে।” পশ্চিমবঙ্গ হিমঘর মালিক সংগঠনের আলিপুরদুয়ার শাখার সম্পাদক শিশির দাসও ভিন রাজ্যে আলু পাঠানোর ছাড়পত্রের দাবি তুলেছেন।
শনিবার আলিপুরদুয়ারের একটি বাসস্ট্যান্ড থেকে ৭২ বস্তা আলু উদ্ধার করেছিল পুলিশের দুর্নীতি দমন শাখা। প্রাথমিক তদন্তের শাখার অফিসারদের দাবি, আলুর বস্তাগুলি কোচবিহারের এক ব্যবসায়ীর। ওই ব্যবসায়ী এক বাস কর্মীকে আলুগুলি পাঠিয়েছিলেন। এই ঘটনায় আরও বেশ কয়েকজন জড়িত রয়েছে বলে অফিসাররা জানিয়েছেন। আরও কিছু সূত্র মিলবে বলে তাঁদের আশা। তারপরেই আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ হবে বলে জানানো হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy