এফআইআর দায়ের করার তিন মাসের মাথায় একটি অর্থলগ্নি সংস্থা রয়্যাল ইন্টারন্যাশনাল-এর চিফ ম্যানেজিং ডিরেক্টর অর্চনা সরকার ও তার বোন নীলিমা দে (সরকার)-কে গ্রেফতার করল পুলিশ। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পাশকুঁড়া এলাকা থেকে বৃহস্পতিবার পুলিশ তাদের গ্রেফতার করেছে। শুক্রবার ধৃতদের তমলুক আদালতে তোলা হয়। কোচবিহার জেলা পুলিশের তরফে ধৃতদের ট্রানজিট রিমান্ডের আবেদন জানানো হলে তা মঞ্জুর করে আদালত। এই নিয়ে ওই সংস্থার সাত কর্তাকে গ্রেফতার করল পুলিশ।
অভিযোগ, গত বছরের সেপ্টেম্বর মাস থেকে গা ঢাকা দিয়েছিলেন অর্চনা সরকার। কোচবিহারের পুলিশ সুপার রাজেশ যাদব বলেন, “গোপন সূত্রে পাওয়া খবরের ভিত্তিতে মেদিনীপুর জেলা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। দু’জনকেই দ্রুত ট্রানজিট রিমান্ডে কোচবিহারে আনা হচ্ছে। ওই দুই জন গ্রেফতার হওয়ায় আরও অনেক তথ্য পাওয়া যাবে।” কোচবিহারের সদর মহকুমা শাসক বিকাশ সাহা জানান, লগ্নিসংস্থার শীর্ষকর্তা ও তার বোন সহ ২২ জনের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল।
পুলিশ জানিয়েছে, অর্চনা দেবী ও তাঁর বোন ওড়িশা পালানোর ছক কষে ছিলেন। রয়্যাল আমানতকারী বাঁচাও সমিতি সম্পাদক নিখিল রঞ্জন ভট্টাচার্য অভিযোগ, “সংস্থাটি আর্থিক প্রলোভন দেখিয়ে দেড় লক্ষাধিক আমানতকারীর কাছ থেকে অন্তত পাঁচশো কোটি টাকা তুলে নিয়েছে।” মূল দুই অভিযুক্ত ধরা পড়ায় টাকা ফেরত পাওয়ার জন্য তাঁরা আন্দোলনে নামবেন আমানতকারীরা।
২০১০-এ কোচবিহারে চান্দামারির বাসিন্দা মৃত্যুঞ্জয় সরকার রয়্যাল গ্রুপ নামে ওই সংস্থা গড়ে তোলেন। প্রথমে জেলায় ব্যবসা শুরু করলেও পরে তারা উত্তরবঙ্গে বিস্তীর্ণ এলাকায় জাল ছড়িয়ে দেন। বিভিন্ন লোভনীয় প্রকল্পের মধ্যে দেড় বছরের ব্যবধানে দ্বিগুণ টাকা ফেরানোর টোপ দিয়ে পাঁচশো কোটির টাকার বেশি বাজার থেকে তোলে সংস্থাটি। তদন্তে নেমে পুলিশ রয়্যাল ইন্টারন্যাশনাল ট্রেডিং প্রাইভেট লিমিটেডের নামে চান্দামারিতে ১০০ বিঘা জমি, জল প্রকল্পের জন্য ওই এলাকাতে ২২ কাঠা জমি, একটি ট্রাক কেনার হদিস পায়। সংস্থার অন্যতম ম্যানেজিং ডিরেক্টর তথা চিফ ম্যানেজিং ডিরেক্টরের বোন নীলিমা দে ( সরকার) এর নামে ঘুঘুমারি এলাকায় জমি, বাড়ি কেনার তথ্যও পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে। পুলিশ জানিয়েছে, গত বছর সংস্থার তরফে মৃত্যুঞ্জয় সরকারের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়ে তাঁর স্ত্রী অর্চনা সরকার কর্ণধার হয়ে ওঠেন। বোনকে নিয়ে তিনি কারবার চালাতে থাকেন। তবে গত বছরের এপ্রিল থেকে রয়্যাল আমানতকারীদের টাকা ফেরানো বন্ধ করে দেয় বলে অভিযোগ। পুলিশের কাছে এরকম অন্তত দশটি অভিযোগও জমা পড়ে। প্রশাসনের তরফে অবশ্য গত মে মাসে এফআইআর করা হয়। দেরিতে কেন এফআইআর হয়েছে তা নিয়ে আমানতকারী অনেকেই নানা সন্দেহ প্রকাশ করেন। গত বছর এপ্রিল থেকে সংস্থার বিরুদ্ধে আমানতকারীদের টাকা না ফেরানোর অভিযোগ হলেও কেন প্রায় এক বছরের মাথায় মহকুমা শাসক এই ব্যাপারে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করলেন তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন আমানতকারীদের একাংশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy