ফাইল চিত্র।
মুখ্যসচিবের সেই নির্দেশিকা।
কেন্দ্র চিঠি পাঠাতেই পারে। কিন্তু তার ভিত্তিতে রাজ্যের কোনও দফতরের সচিব বা আধিকারিকেরা সরাসরি পদক্ষেপ করবেন না। একান্তই করতে হলে বিষয়টি রাজ্যের মুখ্যসচিবের গোচরে আনতে হবে। মুখ্যমন্ত্রীর অনুমোদনক্রমে তিনি-ই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।
কেন্দ্র-রাজ্য বিরোধের আবহে মুখ্যসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়ের জারি করা ওই নির্দেশই আপাতত মেনে চলছেন দফতরের সচিবেরা। প্রসঙ্গত, ক’দিন আগে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ডব্লিউবিসিএসদের এক সভায় আমলাদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা আদতে রাজ্যের অফিসার। তাই দিল্লির নির্দেশ পেলেও কাজ করেন যেন রাজ্যের মন বুঝে।
মুখ্যসচিবের নির্দেশে কার্যত সেই বক্তব্যেরই প্রতিফলন। তাতে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় বিভিন্ন মন্ত্রক থেকে বহু চিঠি আসে। অধিকাংশ মুখ্যসচিবের উদ্দেশে, যিনি সংশ্লিষ্ট দফতরকে উপযুক্ত পদক্ষেপ করতে বলেন। কিন্তু কখনও দিল্লি সরাসরি রাজ্যের বিভিন্ন দফতর ও ডিরেক্টরেটের আধিকারিক, এমনকী নিচুতলার অফিসারদের চিঠি দিয়ে তথ্য জানতে চায়। অথবা নানা নির্দেশ পাঠায়। মুখ্যসচিবের পরামর্শ— রুটিন চিঠির বাইরে দিল্লি কিছু পাঠালে তা ফাইল করে মুখ্যসচিবের অফিসকে দিন। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে মুখ্যসচিবই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।
প্রশাসনের একাংশের মতে, ব্যাপারটা একেবারে নতুন। এতে সিদ্ধান্ত নিতে সময়ও বেশি লাগছে। আগে দিল্লি নীতি প্রণয়ন কিংবা আইন সংশোধন সংক্রান্ত নির্দেশিকা পাঠালে মুখ্যসচিবের অনুমোদনক্রমে রাজ্য জবাব দিত। তবে চালু প্রকল্প সম্পর্কে প্রশ্নের উত্তর দফতরের সচিবেরাই পাঠিয়ে দিতেন, নবান্নকে ছোঁয়ানোর বাধ্যবাধকতা ছিল না।
এখন গোটা প্রক্রিয়াটা বদলে যাওয়ায় আমলাদের অনেকে বিভ্রান্ত। ‘‘মুখ্যসচিব বলেছেন, রুটিন চিঠি নবান্নে পাঠানোর দরকার নেই। কিন্তু কোনটা রুটিন, কোনটা নয়, কে ঠিক করবে?’’— প্রশ্ন এক সচিবের। তাঁর কথায়, ‘‘ঝুঁকি নিচ্ছি না। দিল্লির চিঠি দেখলেই সটান নবান্নে পাঠাচ্ছি।’’
আর তাতেই সময় নষ্ট হচ্ছে। নবান্নের খবর: মুখ্যসচিবের থেকে ফাইল পেলে প্রথমে মুখ্যমন্ত্রীর অফিসের আধিকারিকেরা তার আগাপাস্তলা খতিয়ে দেখছেন। গুরুত্ব অনুযায়ী তা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে যাচ্ছে। ফাইল মুখ্যসচিবের হাত ঘুরে দফতরের সচিব মারফত সংশ্লিষ্ট আধিকারিকের কাছে পৌঁছচ্ছে। ‘‘যথেষ্ট সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া সন্দেহ নেই।’’— মন্তব্য এক আমলার।
বস্তুত প্রশাসনের বড় অংশ পরিস্থিতির নেপথ্যে দেখতে পাচ্ছেন কেন্দ্র-রাজ্য দ্বৈরথেরই ছায়া, যা কিনা প্রধানমন্ত্রীর নোট বাতিল ঘোষণার পরে তুঙ্গে উঠেছে। সংঘাতের সলতে পাকানো অবশ্য আগেই শুরু হয়েছিল। কী রকম?
নবান্ন সূত্রের খবর: গত জুলাইয়ে কর্মিবর্গ ও প্রশিক্ষণ মন্ত্রক জনা ছয়েক কেন্দ্রীয় অফিসারকে ক্যাডার প্রশিক্ষণের জন্য পশ্চিমবঙ্গে পাঠানোর প্রস্তাব দেয়। কয়েক দিন বাদে অর্থ মন্ত্রক জানায়, ‘পাবলিক ফিনান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’-এর প্রকল্পে রাজ্যকে সাহায্য করতে তারা দু’জন অফিসার পাঠাবে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দু’টি প্রস্তাবই পত্রপাঠ নাকচ করে দেন। তার পরে অক্টোবরের মাঝামাঝি মুখ্যসচিবের এই নির্দেশ।
মুখ্যমন্ত্রী যে নানা ভাবে দিল্লির ‘ছোঁয়াচ’ এড়িয়ে থাকতে চাইছেন, প্রশাসনের অন্দরেও সে বার্তা চুঁইয়েছে। দিল্লি থেকে তালিম নিয়ে ফেরা আট নব্য আইএএসকে প্রশাসনিক দায়িত্ব না-দিয়ে সচিবালয়ে বসিয়ে রাখা হয়েছে। আমলামহলের জল্পনা, কেন্দ্রীয় ‘মগজ ধোলাইয়ের’ প্রভাব কাটাতেই এ হেন বন্দোবস্ত। আবার প্রধানমন্ত্রীর ‘দক্ষতা ইনামের’ প্রার্থী হয়ে নবান্নের কোপে পড়েছেন দুই জেলাশাসক।
পাশাপাশি নবান্নের আদেশে কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকরের ভিডিও কনফারেন্সে যোগ দেননি রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যেরা।
সম্প্রতি জেলাশাসকদের নীতি আয়োগের বৈঠক বয়কটে সেই ধারাই অব্যাহত রয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy