শুধু পুরুষেরা নন। বাণিজ্যিক তাগিদে মোটরবাইক চালকের পেশায় মহিলাদেরও দেখতে চায় রাজ্য। ‘মোটরবাইক-ট্যাক্সি’ পথে নামানোর আগে পরিবহণ দফতরের বিজ্ঞপ্তিতেও সেটা বলা হয়েছে। আর তাতে সাড়া দিয়ে যে দুই সংস্থা সরকারি টেন্ডার মারফত বাইক-ট্যাক্সি নামাতে চলেছে, তারা ইতিমধ্যে মহিলা চালক জোগাড় করে তালিমও শুরু করে দিয়েছে।
পরিবহণ দফতর জানাচ্ছে, দীপাবলির পরেই দেখা যাবে, ‘বাইক ট্যাক্সি’ লেখা ফ্লুরোসেন্ট ইউনিফর্ম পরিহিত মহিলারা সওয়ারি নিয়ে দু’চাকা ছোটাচ্ছেন। পশ্চিমবঙ্গে পরিষেবাটি প্রথম চালু হচ্ছে নিউটাউনে। নিউটাউন-ই কেন?
এক পরিবহণ-কর্তার ব্যাখ্যা: বহু আইটি কোম্পানি ছাড়াও রাজারহাট-নিউটাউনে (নিউ কলকাতা ডেভেলপমেন্ট অথরিটি এলাকা) অনেক সরকারি-বেসরকারি সংস্থা অফিস খুলেছে। ওই তল্লাটে বাইক-ট্যাক্সির ভাল চাহিদা থাকার আশা। প্রথম দফায় লাভজনক হলে পরে অন্যত্র তা চালু হবে। কর্তাটির কথায়, ‘‘বছর দুয়েক আগে রাজ্যের দু’-একটা জেলা সদরে টোটো চলত। এখন কলকাতা শহরতলি-সহ বিরাট অঞ্চলে টোটোর রমরমা। বাইক-ট্যাক্সিও তেমন মাত্রা পেতে পারে।’’
সে ক্ষেত্রে রাজ্যে গণ-পরিবহণের মুকুটে আর একটা পালক জুড়বে বলে সরকারের দাবি। নবান্নের এক কর্তা বলেন, ‘‘দিল্লি-বেঙ্গালুরুতে বেসরকারি উদ্যোগে বাইক-ট্যাক্সি চালু হয়েছিল। কিন্তু সরকারি রাশ না থাকায় নানা জটিলতায় ক্রমে তা অনিয়মিত হয়ে পড়েছে। দেখা হচ্ছে, এখানেও যেন তা না হয়।’’ কী ভাবে?
নবান্নের খবর: হরিয়ানা সরকার যেমন বেসরকারি সংস্থাকে নিয়ন্ত্রণে এনে গুরুগ্রামে বাইক-ট্যাক্সি নামানোর অনুমতি দিয়েছে, তেমন এ রাজ্যেও সরকারি বিধি-নিয়মের বেড়ায় বেঁধে পরিষেবাটি চালু হচ্ছে। কিন্তু সবচেয়ে বড় প্রশ্ন নিরাপত্তার। যেখানে কলকাতার রাজপথে ওলা-উবেরের মতো অ্যাপনির্ভর চার চাকা ট্যাক্সিতে হামেশা মহিলা আরোহীদের লাঞ্ছনার অভিযোগ, সেখানে দু’চাকা ট্যাক্সির মহিলা চালক বা সওয়ারির নিরাপত্তা কতটা সুনিশ্চিত? মহিলা চালককে মহিলা সওয়ারিই নিতে হবে, কিংবা পুরুষ চালকের পিছনে মহিলা আরোহী উঠতে পারবেন না— এমন বাধ্যবাধকতা তো রাখা হয়নি!
বিষয়টির গুরুত্ব কর্তারা মানছেন। অনেকের বক্তব্য, চার চাকায় তুলনায় দু’চাকায় চালক-আরোহীর শারীরিক নৈকট্য অনেক বেশি। তাই নিরাপত্তা ও সম্ভ্রমরক্ষার প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়া যায় না। তবে সরকারি দাবি: এ দিকে যথাযথ নজর দেওয়া হচ্ছে। কী রকম?
এক অফিসার বলেন, ‘‘বাইক চালকের নাম, ঠিকানা, সচিত্র পরিচয়পত্র-সহ খুঁটিনাটি পুলিশের কাছে জমা রাখা আবশ্যিক করা হয়েছে। তথ্য থানায় পেশ করার আগে সংশ্লিষ্ট সংস্থাকেই চালকের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে সেগুলো যাচাই করতে হবে।’’ উপরন্তু জিপিএস মারফত নজরদারি চালাবে সংস্থা। এতে মহিলা চালকদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত হবে। কোন চালক কোন সওয়ারি নিয়ে কোথায় গিয়েছেন, রোজ লগবুকে তুলে রাখতে হবে। গন্তব্যে পৌঁছে আরোহী লগবুক সই করবেন।
স্থির হয়েছে, ওলা-উবেরের মতো বাইক-ট্যাক্সিও ভাড়া করতে হবে নির্দিষ্ট অ্যাপে, সুরক্ষার স্বার্থে যাতে আপৎকালীন নম্বর মজুত রাখা আব্যশিক। বিপদ আঁচ করলে সওয়ারি বা চালক যাতে সংস্থার অফিসে ও পুলিশকে সতর্ক করতে পারেন, সে বন্দোবস্ত রাখতে হবে। বাইকে ওঠার আগে সওয়ারিকে সুযোগ দিতে হবে দু’জনকে অবস্থান জানিয়ে রাখার।
এই সমস্ত শর্ত পূরণ করলে তবেই বাইক-ট্যাক্সি চালানোর অনুমতি মিলবে। বিধাননগর কমিশনারেটের খবর: বেশ কিছু চালকের ঠিকুজি-কুষ্টি ইতিমধ্যে জমা পড়েছে। নিউটাউনে ছাড়পত্র পাওয়া দুই সংস্থার একটির কর্মকর্তা রাঘব রান্ডার বলেন, ‘‘নিরাপত্তাই অগ্রাধিকার। আমাদের কারবারের মূলমন্ত্র— বাইক-ট্যাক্সি টু দ্য উয়োমেন, ফর দ্য উয়োমেন, বাই দ্য উয়োমেন।’’ অন্যটির কর্তা ইমরান মুস্তাফা জানাচ্ছেন, গোড়ায় তাঁরা পঁচিশটি মহিলাচালিত বাইক-ট্যাক্সি নামাচ্ছেন। চালকদের আদব-কায়দা শেখানো হচ্ছে।
রাঘব ও ইমরান যা তথ্য দিচ্ছেন, তাতে প্রথমেই শ’দুয়েক বাইক-ট্যাক্সি নামবে বলে পরিবহণ-কর্তাদের আশা। তাঁদের দাবি, ভিন্ রাজ্যের বহু সংস্থাও কলকাতায় বাইক-ট্যাক্সি চালাতে চেয়ে দরবার শুরু করেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy