ফাইল চিত্র।
জিডি বিড়লা সেন্টার ফর এডুকেশনের সাম্প্রতিক ঘটনাক্রম থেকে শিক্ষা নিয়ে এ বার কড়া হচ্ছে রাজ্য সরকার। সরকারি সাহায্যপুষ্ট, সরকার পোষিত, সরকারি ও বেসরকারি— সব ধরনের স্কুল সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সর্বশিক্ষা মিশন। সেই তথ্য জোগাড়ের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে সরকারি ও বেসরকারি সব স্কুলেরই নিজস্ব কোড নম্বর রাখা বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে।
নিজস্ব পরিচয়ের খাতিরে কোড নম্বর রাখা সব স্কুলেরই নিয়মের মধ্যে পড়ে। অথচ অনেক নামী স্কুলও তার ধার ধারছে না। সরকারি ও বেসরকারি স্কুল গড়তে গেলে যে-নিয়ম মানতে হয়, বহু স্কুল-কর্তৃপক্ষ তা মানছেন না বলে অভিযোগ। এই পরিস্থিতিতেই ফের জানাতে হচ্ছে, কোড আবশ্যিক। স্কুল তথ্য দিতে অস্বীকার করলে সংশ্লিষ্ট বোর্ডকে চিঠি পাঠিয়ে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান বিকাশ ভবনের এক কর্তা।
স্কুলশিক্ষা দফতরের এক কর্তা জানান, জিডি বিড়লা স্কুলে ব্যাপক গোলমালের পরে তাদের তথ্য যাচাইয়ের প্রয়োজন দেখা দেয়। দেখা যায়, ওই স্কুলের অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্যই সরকারের হাতে নেই। প্রতিটি স্কুলের নিজস্ব যে-কোড নম্বর থাকার কথা, সেটাও নেই জিডি বিড়লার।
শুধু জিডি বিড়লা নয়, এ রাজ্যের বহু বেসরকারি স্কুলেরই ১১ সংখ্যার ইউ-ডাইস (ইউনিফায়েড ডিসট্রিক্ট ইনফর্মেশন সিস্টেম অব এডুকেশন) কোড নেই। এর ফলে ওই সব স্কুল সম্পর্কে সরকার সম্পূর্ণ অন্ধকারে।
সিবিএসই বা আইসিএসই বোর্ডের অধীনে থাকা স্কুলগুলিকে সর্বশিক্ষা মিশনের জেলা দফতরে একটি ফর্ম পূরণ করতে হয়। স্কুলের পরিকাঠামো থেকে শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের যাবতীয় বিবরণ-সহ খুঁটিনাটি তথ্য দাখিল করতে হয় তাতে। সেই ফর্ম পূরণের পরে প্রতিটি স্কুলকে ১১ সংখ্যার একটি কোড দেওয়া হয়। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, অধিকাংশ স্কুল সেই ফর্মই পূরণ করেনি।
সব জেলার সর্বশিক্ষার প্রজেক্ট অফিসারদের সম্প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, প্রতিটি স্কুলকে একটি নিজস্ব ফোল্ডার তৈরি করতে হবে। সেখানে প্রথমেই উল্লেখ করতে হবে ইউ-ডাইস কোড নম্বর। তার পরে ছবি তুলতে হবে শ্রেণিকক্ষ, ছাত্র ও ছাত্রীদের পৃথক শৌচালয়, খেলার মাঠ, সীমানা-পাঁচিল ও রান্নাঘরের। পৃথক ভাবে ফোল্ডার তৈরি করে সেখানে ছবিগুলি সংরক্ষণ করতে হবে। ছাত্রদের শৌচালয়ের ফোল্ডারে ইংরেজিতে লিখতে হবে ‘বিটি’ বা ‘বয়েজ টয়লেট’। খেলার মাঠের ছবির ফোল্ডারের ক্ষেত্রে লিখতে হবে ‘পিগ্রাউন্ড’, রান্নাঘরের ক্ষেত্রে ‘কেশেড’ এবং গোটা স্কুলভবনের ক্ষেত্রে ‘বিআইডিজি’। এই ধরনের মোট ন’দফা নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
স্কুলশিক্ষা দফতরের এক কর্তা জানান, এ বার থেকে ওয়েবসাইটে স্কুলের নাম লিখলেই তাদের ছবির ফোল্ডার এবং ইউ-ডাইস নম্বর দেখা যাবে। তিনি জানান, যে-সব স্কুলের কর্তৃপক্ষ সহযোগিতা করবেন না, তাঁদের বিরুদ্ধে সিবিএসই বা আইএসসিই-র কাছে অভিযোগ জানানো হবে। প্রয়োজনে নেওয়া হবে কড়া ব্যবস্থাও। ওই শিক্ষাকর্তা বলেন, ‘‘এই রাজ্যে স্কুল চলবে অথচ তার পর্যাপ্ত তথ্য স্কুলশিক্ষা দফতরে থাকবে না, এটা চলতে পারে না।’’
শিক্ষা শিবিরের একাংশের বক্তব্য, সরকারি, সরকার পোষিত এবং সরকারি সাহায্যপুষ্ট অধিকাংশ স্কুলেরই কোড নম্বর বা কমবেশি তথ্য সরকারের ঘরে আছে। কেননা ওই সব স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বেতন থেকে সব কিছুই চলে সরকারের টাকায়। তাই নতুন নির্দেশের নিশানা কার্যত বেসরকারি স্কুল। বিশেষ করে সেই সব স্কুল, যাদের নিজস্ব কোড নম্বর নেই এবং যারা সরকারকে নিজেদের তথ্য জানায় না।
এই উদ্যোগকে সমর্থন করে বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির কর্তা স্বপন মণ্ডল বলেন, ‘‘এই নির্দেশ যদি পড়ুয়াদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করে, তা হলে সেটা সমর্থনযোগ্য।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy