এনআরসি নিয়ে গোর্খাদের আশ্বস্ত করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: এএফপি।
দুপুরে শিলিগুড়ির কাওয়াখালি সভাস্থল থেকে জাতীয় নাগরিকপঞ্জী বা এনআরসি নিয়ে গোর্খাদের আশ্বস্ত করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বললেন, ‘‘এনআরসি নিয়ে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। আমি বলছি, এর জন্য গোর্খা ভাইবোনদের কোনও লোকসান হবে না। মোদী শরণার্থীদের পাশে থাকবে। কিন্তু অনুপ্রবেশকারীদের ছাড়বে না।’’
বিকেলে এর জবাবে কোচবিহারের দিনহাটার সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পাল্টা আক্রমণ করলেন মোদীকে। বললেন, ‘‘অসমে ২২ লক্ষ হিন্দু এবং ২৩ লক্ষ মুসলিমকে আপনি ঘরছাড়া করেছেন। আবার নানা কথা বলছেন। তালিকায় বাদ পড়াদের ছ’বছর নাগরিকত্বের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। ততদিনে কি আপনি থাকবেন!’’
গত কয়েক দিন যাবৎ পাহাড়ের প্রচারে এনআরসি প্রসঙ্গ তুলতে শুরু করেছে তৃণমূল ও বিনয় তামাংয়ের মোর্চা। বিনয় নিজে যুক্তি দিয়ে বুঝিয়েছেন, কেন এনআরসি হলে পাহাড়ের গোর্খারা বিপদে পড়বেন। তিনি দেখিয়েছেন, পাহাড়ে ৮০ শতাংশ মানুষের জমির পাট্টা বা কোনও রকম কাগজপত্র নেই। নেপাল থেকে আসা অনেকেই রয়েছেন সেই তালিকায়। বিনয়ের যুক্তি, পশ্চিমবঙ্গে এনআরসি চালু হওয়ার পরে সেই সব মানুষের বিপদে পড়ার সমুহ সম্ভাবনা। তৃণমূল প্রার্থী অমর সিংহ রাই বলেছেন, ‘‘অসমে যে ডি ভোটার বা সন্দেহজনক ভোটারের তালিকা করা হয়েছে, তাতে বেশ কিছু গোর্খা আছেন। তা হলে পশ্চিমবঙ্গেই বা তার অন্যথা হবে কী ভাবে?’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
তৃণমূলের এই লাগাতার প্রচার যে কিছুটা হলেও অস্বস্তিতে ফেলেছে দলকে, সেটা ঘরোয়া আলোচনায় মেনে নিয়েছেন বিজেপির কোনও কোনও নেতা। এমন প্রচার ঠিক নয়— এই বার্তা দিয়েছিলেন দার্জিলিঙে বিজেপি প্রার্থী রাজু বিস্তাও। এ বারে প্রধানমন্ত্রীর মুখেও শোনা গেল আশ্বাসবাণী। উত্তরের রাজনৈতিক শিবির মনে করছে, চাপ যে রয়েছে, সেটা এ দিন মোদীর ঘোষণা থেকেই স্পষ্ট।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য শুধু পাহাড় নয়, এনআরসি-র ফলে গোটা রাজ্যে যে দু’টি ভাগ তৈরি হতে পারে, সেই আশঙ্কা করেছেন। সম্প্রতি বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ জানিয়েছিলেন, কেন্দ্রে ক্ষমতায় এলে তাঁরা পশ্চিমবঙ্গেও এনআরসি চালু করবেন। সেখানে শরনার্থীদের ছোঁয়া না হলেও অনুপ্রবেশকারীদের ছাড় মিলবে না। এ দিনও একই কথা বলেন প্রধানমন্ত্রীও। তার পরে বিকেলে মমতা যা বলেন তার নির্যাস: শুধু সংখ্যালঘুই নয়, এনআরসি থেকে ছাড় পায়নি হিন্দুরাও। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পরে যাঁরা ভারতে এসেছেন, তাঁরা প্রকৃত নাগরিক। তাঁদের কেন বিপাকে ফেলা হচ্ছে, সেই প্রশ্নও তোলেন তিনি।
নিয়ম বলছে, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিতে বাংলাদেশ থেকে আসা বেআইনি অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করার জন্যই এনআরসি চালু করা হয়েছে। ১৯৭১ সালের মধ্যরাত ১২টা পরে যাঁরা এ দেশে ঢুকেছেন তাদের নথিপত্র দেখে বাছাই করে নাগরিকত্বের তালিকা থেকে নাম কাটা হয়েছে। অসমে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে কিছুটা তালিকা প্রকাশের পর
২০১৮ জুলাই মাসে পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ হয়েছে। তাতে লক্ষাধিক মানুষ বাদ পড়ায় অসমে তীব্র বিক্ষোভের মুখে পড়েছে বিজেপি। বিশেষ করে, এবার অসমে ভোটে বিজেপি কতটা ভাল ফল করবে, তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। এই অবস্থায় ভোটের আগে অসমের পর দার্জিলিঙে এনআরসি প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠায় দল কিছুটা চাপেই বলে দলের একাংশ নেতারা জানাচ্ছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy