Advertisement
১৭ জুন ২০২৪
Kurmi Community

রাজ্যের রিপোর্টে আপত্তি, উঠল না কুড়মি বিক্ষোভ

খেমাশুলিতে কুড়মিদের বিক্ষোভে সেই মঙ্গলবার থেকে অবরুদ্ধ কলকাতা-মুম্বই জাতীয় সড়কও। সেখানে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে ভিন্‌ রাজ্যের ট্রাক। অত্যাবশ্যকীয় পণ্যবাহী কিছু ট্রাককে ঘুরপথে ঝাড়গ্রামে পাঠিয়েছে পুলিশ।

এই অবরোধ শুক্রবার চতুর্থ দিনে পড়ল।

এই অবরোধ শুক্রবার চতুর্থ দিনে পড়ল। ছবি: সংগৃহীত।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৬:৩৬
Share: Save:

কলকাতায় অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরের সচিবের ডাকা বৈঠকে গেলেন না কুড়মি সমাজের প্রতিনিধিরা। আদিবাসী কুড়মি সমাজের দাবি ছিল, কেন্দ্রের কাছে বিস্তারিত সিআরআই-এর (কালচারাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট) রিপোর্ট পাঠাবে রাজ্য সরকার। তার প্রতিলিপি হাতে পেলে তবেই তাঁরা আন্দোলন প্রত্যাহার করবেন। শুক্রবার প্রতীক্ষিত সেই রিপোর্টের কপি জেলা প্রশাসন মারফত আন্দোলনকারীদের হাতে পৌঁছয়। কিন্তু আন্দোলনের নেতৃত্বের দাবি, রিপোর্টে ভুল আছে। কী ভুল, সেটা শুধু সংশ্লিষ্ট দফতরের সচিব সশরীর তাঁদের কাছে এলে তাঁকেই বলা হবে। তত দিন অবরোধ-বিক্ষোভ চলবে বলেই দাবি। ফলে সাধারণ মানুষের হয়রানিও বন্ধ হবে না।

কুড়মিদের তফসিলি জনজাতি তালিকাভুক্ত করার দাবিতে খড়্গপুরের খেমাশুলি ও পুরুলিয়ার কুস্তাউর স্টেশনে এই অবরোধ শুক্রবার চতুর্থ দিনে পড়ল। এ দিন সকালে শালবনিতেও স্টেশনের কাছে রেললাইনে অবরোধ শুরু করেন কুড়মিরা। তবে খবর পেয়ে পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক আয়েষা রানির নির্দেশে সেখানে পৌঁছন মেদিনীপুরের (সদর) মহকুমাশাসক কৌশিক চট্টোপাধ্যায়। তাঁর অনুরোধে কিছু ক্ষণ পরে অবরোধ তুলেও নেওয়া হয়। তবে এ দিনও খড়্গপুর রেল ডিভিশনে স্টিল, বরবিল জনশতাব্দী, রাঁচী ইন্টারসিটি, ইস্পাত-সহ আপে ১২টি ও ডাউনে ৯টি ট্রেন বাতিল হয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব রেল জানিয়েছে, সারা জ়োনে ২০৫টি ট্রেন বাতিল করা হয়েছে, ৭৪টি ট্রেনের যাত্রাপথ সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে, ৮৯টি ট্রেন ঘুরপথে চালানো হচ্ছে।

ভোগান্তি হবে জেনে অনেকেই আর স্টেশনমুখী হচ্ছেন না। তবে না জেনে স্টেশনে পৌঁছে ট্রেন না পেয়ে বিপাকে পড়েছেন— এমন লোকের সংখ্যাও কম নয়। খড়্গপুর স্টেশনে টাটাগামী ট্রেন ধরতে আসা রামনগরের বাসিন্দা অরুণ দাস বলেন, “টাটানগরে কাঠের মিস্ত্রির কাজ করি। বিশ্বকর্মা পুজোয় বাড়ি এসেছিলাম। শুনছি ওই দিকে কোনও ট্রেন যাচ্ছে না। কী ভাবে কাজের জায়গায় ফিরব, বুঝতে পারছি না।”

খেমাশুলিতে কুড়মিদের বিক্ষোভে সেই মঙ্গলবার থেকে অবরুদ্ধ কলকাতা-মুম্বই জাতীয় সড়কও। সেখানে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে ভিন্‌ রাজ্যের ট্রাক। অত্যাবশ্যকীয় পণ্যবাহী কিছু ট্রাককে ঘুরপথে ঝাড়গ্রামে পাঠিয়েছে পুলিশ। তবে ঝাড়খণ্ডগামী বহু ট্রাক পথের ধারেই দাঁড়িয়ে রয়েছে। দুর্ভোগে পড়েছেন চালকেরা। রাতে নিরাপত্তার অভাব তো রয়েছেই। খাবার, পানীয় জল পেতেও সমস্যা হচ্ছে। ফুরিয়ে আসছে টাকা।

দাবি মতো সিআরআই-এর রিপোর্ট তো কেন্দ্রকে পাঠিয়েছে রাজ্য। তবু কেন আন্দোলন? আদিবাসী কুড়মি সমাজের মূল মানতা অজিত মাহাতোর বক্তব্য, ‘‘আমাদের বিশেষজ্ঞেরা রিপোর্ট খতিয়ে দেখেছেন। তাতে ত্রুটি আছে। বিষয়টি শুধু সংশ্লিষ্ট দফতরের সচিব আমাদের এখানে এলে তাঁকেই বলব।’’

এই আন্দোলন নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হয়েছে। বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষের দাবি, কেন্দ্রকে হেয় করতে এই আন্দোলনে মদত দিচ্ছে তৃণমূল। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম অভিযোগ করেন, রাজ্য ও কেন্দ্র, সকলেই আদিবাসীদের ব্যাপারে নিষ্ক্রিয়। তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র তাপস রায়ের পাল্টা বক্তব্য, ‘‘কেন্দ্র দিল্লির কৃষক আন্দোলন সম্পর্কে যে মনোভাব নিয়েছিল, রাজ্য সরকার তা নিতে পারে না। আদিবাসীদের বক্তব্যকে সম্মান দিয়ে আলোচনার মাধ্যমেই এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kurmi Community Protest
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE