Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
লরি-ভ্যানে মানুষ বহনে রাশ
Deaths

Nabadwip: লরি-ভ্যানে মানুষ বহনে রাশ, নবদ্বীপে দাহের প্রথা রদের দাবি

‘পুণ্যক্ষেত্র’ নবদ্বীপে দাহ করে গঙ্গায় অস্থি ভাসানোর রীতি এ বার বদল করা যায় কি না, তা নিয়ে ভাবছেন সকলেই।

হাঁসখালির দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত গাড়ি।

হাঁসখালির দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত গাড়ি। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০২১ ০৬:০৩
Share: Save:

দুর্ঘটনা দুর্ঘটনাই। তবে শনিবার রাতে এক মৃত মহিলাকে নিয়ে শ্মশানযাত্রার পথে দুর্ঘটনায় শ্মশানবন্ধু-সহ মোট ১৭ জনের মৃত্যুর পরে উত্তর ২৪ পরগনার পারমাদনে মৃতার গ্রামের অনেকেই একটি প্রাচীন প্রথার অবসান চাইছেন। গ্রামের বহুকালের সেই প্রথাটি হল, কেউ মারা গেলে সৎকার হবে নবদ্বীপের শ্মশানেই। যেমন মধ্য ও উত্তর ভারতের আবহমান কালের প্রথা, মৃতের অন্ত্যেষ্টি হবে কাশী-বারাণসীতেই। পারমাদনে মৃত বৃদ্ধাকে নবদ্বীপের শ্মশানে নিয়ে যাওয়ার পথে দুর্ঘটনার পরে ওই এলাকার অনেকেই মনে করছেন, প্রথা যত পুরনোই হোক, এ বার তা বন্ধ হওয়া দরকার।

শিবানী মণ্ডল নামে পারমাদন এলাকার নবতিপর এক বৃদ্ধার দেহ ম্যাটাডর ভ্যানে ৬০ কিলোমিটার দূরের নবদ্বীপের সেই শ্মশানেই নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল সৎকারের জন্য। পথে পাথর বোঝাই লরির সঙ্গে সেই ভ্যানের ধাক্কায় প্রাণ হারিয়েছেন পারমাদন এলাকার ১৩ জন। সব মিলিয়ে মৃতের সংখ্যা ১৭। আট জনের দেহ রবিবার রাতে পারমাদনে ফিরেছিল, তাঁদের দেহ দাহ করা হয় ২১ কিলোমিটার দূরে বনগাঁ শ্মশানেই। সোমবার আরও দু’জনকে বনগাঁ শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হয়। রবিবার রাতে শ্মশানে হাজির ছিলেন পুরপ্রশাসক গোপাল শেঠ, বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। শ্মশানে দু’টি বৈদ্যুতিক চুল্লির একটি খারাপ ছিল। রাতেই সেটি সারানো হয়। সেই জন্য শ্মশান সংলগ্ন এলাকায় খানিক ক্ষণ বিদ্যুৎ-সংযোগও বন্ধ রাখতে হয়েছিল। গ্রামের বাসিন্দা নমিতা মণ্ডলের স্বামী প্রশান্ত বছরখানেক আগে মারা গিয়েছেন। নবদ্বীপেই দাহ হয়েছিল। ‘পুণ্যক্ষেত্র’ নবদ্বীপে দাহ করে গঙ্গায় অস্থি ভাসানোর রীতি এ বার বদল করা যায় কি না, তা নিয়ে ভাবছেন সকলেই। নমিতাদেবী বলেন, ‘‘এর পরে গ্রামের মানুষ আর নবদ্বীপে দেহ নিয়ে যেতে সাহস পাবেন না।’’

শনিবারের দুর্ঘটনায় মৃত বৃন্দাবন মুহুরি এবং তাঁর স্ত্রী জয়ন্তীর দেহ সৎকার হয়েছে সোমবার। তাঁদের মেয়ে মণিকা মণ্ডল বিবাহিতা। তিনি দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ছেলে শুভঙ্কর কর্মসূত্রে দুবাইয়ে থাকেন। এ দিন দুপুরে ফিরেছেন। রবিবার রাতে উঠোনে বরফের উপরে মুহুরি দম্পতির দেহ রাখা ছিল। আগলে বসে ছিলেন পড়শিরাই। সোমবার স্বামী-স্ত্রীর সৎকার হয়েছে বনগাঁ শ্মশানে।

জখম স্বপন মুহুরি এবং তাঁর স্ত্রী অর্চনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁদের মেয়ে, নাতনি ও বৌমার মৃত্যু হয়েছে ওই দুর্ঘটনায়। ছেলে অমিত হাসপাতালে বাবা-মায়ের দেখভাল করছেন। পারমাদনের বাড়িতে তালা দেওয়া। গরু-বাছুর, মুরগিদের খাবার দিচ্ছেন পড়শিরা। বাড়ির ভিতরে অ্যাকোরিয়ামে মাছেরা খাবার পায়নি। তা নিয়েও চিন্তিত পাড়াপড়শিরা।

স্বপনের মেয়ে শ্রাবণীর মৃত্যুর পর থেকে তাঁর বান্ধবী মঞ্জু মণ্ডল খাওয়াদাওয়া ছেড়েছেন। মা নমিতাদেবী বলেন, ‘‘মঞ্জুর বাবা গত বছর মারা যাওয়ার পর থেকে অনেকটা সময় কাটাত শ্রাবণীর সঙ্গে। বৃহস্পতিবারেও দু’জনে একসঙ্গে কলেজে গেল। সেলফি তুলল। এ ভাবে ওর চলে যাওয়াটা আমরা কেউ মেনে নিতে পারছি না।’’

এ দিকে, যে-লরির সঙ্গে শববাহী ভ্যানের মুখোমুখি ধাক্কায় ১৭ জনের প্রাণ গিয়েছে, তার চালককে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতের নাম সুদীপ্ত ঘোষ। বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনার বাগদায়। তাঁকে তিন দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন রানাঘাট আদালতের বিচারক। পুলিশি সূত্রের খবর, জেরায় চালক জানান, তিনি স্বাভাবিক গতিতেই কৃষ্ণনগর থেকে দত্তফুলিয়ার দিকে যাচ্ছিলেন। উল্টো দিক থেকে ভ্যানটি আসছিল। হঠাৎই সেটি ডান দিকে ঘুরে লরির সামনে এসে ধাক্কা মারে। ভ্যানের গতি খুব বেশি ছিল বলে জানিয়েছেন সুদীপ্ত।

ঘটনাস্থলেই ১০ জনের মৃত্যু হয়। শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে তিন জন মারা যান। হাসপাতালে পৌঁছে চার জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানায় পুলিশ। সাত জন জেলা হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। তাঁদের মধ্যে তিন জনকে কলকাতার নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। এনআরএস হাসপাতাল সূত্রের খবর, এক জনকে শল্য এবং অন্য এক জনকে অস্থিরোগ বিভাগে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁদের অবস্থা স্থিতিশীল। তৃতীয় জনের খবর জানা যায়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Deaths Custom Nadia Accident
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE