Advertisement
E-Paper

লটারিতে দেড় কোটি টাকা জিতেও এখন ফকির আজিজ

২০০২ সালের এক শীতের সকালে একটি ‘দীপাবলি বাম্পার’ যে তাঁকে দেড় কোটি টাকার পুরস্কার পাইয়ে দেবে, স্বপ্নেও ভাবেননি হাসনাবাদের মুরারিশা গ্রামের বাসিন্দা আজিজ মোল্লা।

নির্মল বসু

শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৩:৫৯
আজিজ মোল্লা। নিজস্ব চিত্র

আজিজ মোল্লা। নিজস্ব চিত্র

ছিলেন গাড়ির খালাসি। রাতারাতি হন ‘রাজা’। এখন হদ্দ বেকার!

স্ত্রী বিড়ি বাঁধেন। আর তিনি ঘরে বসে থাকেন। লোকজন এলে পরামর্শ দেন, ‘‘লটারি কখনও মানুষের কপাল বদলাতে পারে না। সর্বনাশের পথে পা বাড়িয়ো না।’’

২০০২ সালের এক শীতের সকালে একটি ‘দীপাবলি বাম্পার’ যে তাঁকে দেড় কোটি টাকার পুরস্কার পাইয়ে দেবে, স্বপ্নেও ভাবেননি হাসনাবাদের মুরারিশা গ্রামের বাসিন্দা আজিজ মোল্লা। ছিলেন ম্যাটাডরের খালাসি। আগের দিন বিকেলে বসিরহাটের ত্রিমোহনীতে গিয়ে একটি দোকানে চা খেতে ঢুকেছিলেন। সেখানে এক জনের অনুরোধে ১০০ টাকা দিয়ে ওই লটারির টিকিট কেনেন। পরের দিনই ‘রাজা’!

মুরারিশা গ্রামের সেই ‘রাজকাহিনি’ এখনও লোকের মুখে ফেরে। সে দিন আজিজকে একটি বার দেখার জন্য বাড়ির সামনে জনসমুদ্র! আজিজের কাছ থেকে টিকিট কেড়ে নেওয়ারও চেষ্টা হয়। পুলিশ এসে তাঁকে উদ্ধার করে। সরকারি রাজস্ব কাটার পরে আজিজের হাতে আসে ৬৮ লক্ষ টাকা। এক বার তাঁর দেখা পেতে, তাঁর ছোঁয়া লটারির টিকিট কাটতে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। স্থানীয় বাজারে রাতারাতি গজিয়ে ওঠে একাধিক লটারির দোকান। ঝড়ের গতিতে টিকিটও বিক্রি হতে থাকে।

অলঙ্করণ: তিয়াসা দাস।

পুরস্কারের অর্থে আজিজ মোটরবাইক, বাস, গাড়ি এবং নতুন আসবাব কিনে ফেলেন। বন্ধুদের নিয়ে ঘনঘন কলকাতার হোটেলে যাতায়াত শুরু হয়। অঢেল আমোদ-প্রমোদে মেতে ওঠেন আজিজ। বাবা-মা এবং আট ভাইবোনকেও এক লক্ষ টাকা করে বিলিয়ে দেন। আর একটা কাজও শুরু করেন। ফের লটারির টিকিট কাটা। আজিজের কথায়, ‘‘তখন অন্তত ৮-১০ লক্ষ টাকার টিকিট কিনেছি।’’

কিন্তু না। আর কোনও টিকিট আজিজকে ‘রাজা’ করেনি। উল্টে লোভে পড়ে আরও টিকিট কাটার নেশা বেড়ে যায় আজিজের। বছর খানেকের মধ্যে পুরস্কারের সব টাকা শেষ হয়। তার পর পরিবারের জমানো টাকা, স্ত্রীর অলঙ্কারেও হাত পড়ে। বাড়তে থাকে ধার। সুখের দিন দ্রুত শেষ হয়। এমনকি, তাঁকে দেখে এলাকার দু’এক জনও রাতারাতি বড়লোক হওয়ার স্বপ্নে লটারির টিকিট কিনতে ঘরবাড়ি, ব্যবসা— সব খুইয়ে বসেন বলে এলাকার লোকজন জানান।

ভাঙা গ্রিল দেওয়া রং-চটা ঘরে এখন স্ত্রী সাফিনুর বিবি এবং তিন ছেলেমেয়েকে নিয়ে কোনও মতে দিন গুজরান করেন আজিজ। স্ত্রীর বাঁধা বিড়িতে টান দেন। তাঁর খেদ, ‘‘অনেক টাকা উড়িয়েছি। তখন ভাবিনি, এমন দিন আসবে। কয়েক মাস আগেও একটা মাংসের দোকানে কাজ করতাম। সেটাও গিয়েছে। জানি না কী হবে!’’ সাফিনুরের আক্ষেপ, ‘‘স্বামী গাড়িতে কাজ করত। আমি বিড়ি বাঁধতাম। সংসার চলে যাচ্ছিল। এই লটারিই সর্বনাশ করে দিল।’’

গ্রামের কেউ কেউ লটারিকে ভাল চোখে দেখেন না। তাঁদেরই একজন সরিফুল গাজি। তাঁর কথায়, ‘‘লটারি যে মানুষকে কোথায় নামাতে পারে, তা আজিজ এবং গ্রামের দু’এক জনকে দেখে বোঝা যায়। পাওনাদারেরা আজিজের আসবাব, গাড়ি, এমনকি, শান বাঁধানো পুকুর ঘাটের ইট পর্যন্ত খুলে নিয়ে গিয়েছে। তবু এখনও অনেকে গোছা গোছা লটারির টিকিট কিনে চলেছেন!’’ আর আজিজ-সরিফুলেরা প্রশ্ন করেন, ‘‘এই লটারিতে কার যে আসল লাভ হয়, কে জানে?’’

Lottery Hasnabad
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy