Advertisement
E-Paper

এ বার ডাক্তারকে হুমকি সেই রামপুরহাটে

এক ডাক্তার মার খেয়েছেন। তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই আর এক ডাক্তার পেলেন নাক ফাটিয়ে দেওয়ার হুমকি। বীরভূমের রামপুরহাট হাসপাতালে মঙ্গল ও বুধবার রোগীর পরিজনদের বিরুদ্ধে ওঠা এই অভিযোগগুলোর পরিণাম—চাকরি ছাড়তে চেয়েছেন দু’জন ডাক্তার।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০২:৫১

এক ডাক্তার মার খেয়েছেন। তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই আর এক ডাক্তার পেলেন নাক ফাটিয়ে দেওয়ার হুমকি। বীরভূমের রামপুরহাট হাসপাতালে মঙ্গল ও বুধবার রোগীর পরিজনদের বিরুদ্ধে ওঠা এই অভিযোগগুলোর পরিণাম—চাকরি ছাড়তে চেয়েছেন দু’জন ডাক্তার। গণ-ইস্তফার হুমকি দিয়েছেন শিশু বিভাগের চিকিৎসকেরা। ডাক্তারদের সংগঠন, এমনকী, অনেক স্বাস্থ্যকর্তাও ধন্দে পড়েছেন—গ্রামেগঞ্জে যেখানে ডাক্তার পাওয়াই দুষ্কর, সেখানে এ ধরনের ঘটনায় সমস্যা আরও বেড়ে যাবে না তো!

এ দিন ভোরে শ্বাসকষ্ট হওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় মাড়গ্রামের মাস দুয়েকের এক শিশুকে। হাসপাতালের শিশুবিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক আশিস সাহা তাকে পরীক্ষা করে আত্মীয়দের একটি ওষুধ কিনে আনতে বলেন। আশিসবাবুর দাবি, হাসপাতালে সব সময় মজুত থাকে না বলে কম দামী ওই ওষুধটি বাইরে থেকে কিনে আনতে বলেছিলেন তিনি।

তাঁর অভিযোগ, বাইরে থেকে কেন ওষুধ কিনতে হবে সে প্রশ্ন তুলে শিশুটির এক আত্মীয় চেঁচিয়ে হাসপাতাল মাথায় করেন। আশিসবাবুর কথায়, ‘‘ভদ্রলোককে শান্ত হতে বলে অন্য ওষুধ লেখার জন্য ওঁর কাছে প্রেসক্রিপশন চাইতে, উনি আমাকে মারতে আসেন। মেরে নাক ফাটিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন!’’

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনাস্থলে উপস্থিত অন্য রোগীদের আত্মীয়েরা ওই পরিবারটিকে শান্ত করেন এবং বোঝান ডাক্তার আপত্তিকর কিছু বলেননি। তখন হম্বিতম্বি বজায় রাখলেও কিছু পরে পরিবারটি আশিসবাবুর কাছে এসে ক্ষমা চেয়ে বাচ্চাটিকে নিয়ে চলে যায়। তবে তাতে চিঁড়ে ভেজেনি।

আশিসবাবু সন্ধ্যায় হাসপাতাল সুপারের কাছে ঘটনার বিবরণ দিয়ে বিশদে অভিযোগ করেন। অভিযোগ যায় পুলিশের কাছেও। আশিসবাবু বলেন, ‘‘আমাকে যে ভাবে মারার হুমকি দেওয়া হল, তাতে খুবই অপমানিত বোধ করছি। এই পরিবেশে চাকরি করা সম্ভব নয়।’’

মঙ্গলবার আক্রান্ত হওয়া ডাক্তার হীরককান্তি দাসও এ দিন বলেন, ‘‘নিজের কাজটুকু ঠিকঠাক করেও হামলার মুখে পড়লে কোন ডাক্তার এ কাজ করতে চাইবে?’’

সরকারি হাসপাতালে ডাক্তারদের প্রতি রোগীর পরিজনদের এমন অসহিষ্ণু মনোভাব দেখে উদ্বিগ্ন অনেকেই। এমনিতেই রাজ্যে ডাক্তারের আকাল।
গ্রাম-মফস‌্সলে গিয়ে অনেকেই চিকিৎসা করতে চান না। রাজ্য সরকার নানা আঁটোসাটো নিয়ম বানানোর পরেও পরিস্থিতি যে তেমন বদলায়নি, নানা জেলার স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও হাসপাতালে শূন্য পদের তালিকা দেখলেই মালুম হয়।

হালের সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালগুলির জন্য ডাক্তার নিয়োগ করতেও হিমশিম খাচ্ছে স্বাস্থ্য দফতর। সরকারি চাকরিতে কম বেতন এবং গ্রামে বা জেলায় বদলির কারণে বারবার বিজ্ঞাপন দিয়েও লোক পাওয়া যাচ্ছে না। চিকিৎসকেরা যাতে বাধ্যতামূলক ভাবে গ্রামে কাজ করেন, সে জন্য তাঁদের বন্ড-এ সই করানো হচ্ছে। সেই পরিস্থিতিতে রামপুরহাটে ডাক্তারদের উপরে জোড়া হামলা চিন্তায় ফেলেছে স্বাস্থ্য-কর্তাদের।

সরকারি চিকিৎসকদের অন্যতম সংগঠন ‘অ্যাসোসিয়েশন অফ হেলথ সার্ভিস ডক্টর্স’-এর তরফে গৌতম মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘জেলায় এমনিতেই ডাক্তারদের ঠিকঠাক কাজ চালানোর মতো উন্নত পরিকাঠামো নেই। রয়েছে রাজনৈতিক চাপ। তার উপরে যদি এই হারে অহেতুক হেনস্থা যোগ হয়, তা হলে পরিষেবা মাথায় উঠবে। কেউ গ্রামে যাবেন না।’’

এই পরিস্থিতিতে নিগ্রহের এই সব ঘটনা চিকিৎসকদের মধ্যে (বিশেষ করে যাঁরা তরুণ) আরও বিরূপ ছাপ ফেলবে বলেই মনে করছেন স্বাস্থ্য-কর্তারা। স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী ঘটনা সম্পর্কে খোঁজ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। রামপুরহাট হাসপাতালের রোগীকল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান তথা রাজ্যের মন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘পুলিশকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছি। পরিস্থিতি সামাল দিতে খুব তাড়াতাড়ি বৈঠকে বসব।’’

তবে সরকারি হাসপাতালের সঙ্গে জড়িত ডাক্তারদের একটা বড় অংশের বিশ্বাস— শুধু পুলিশ নয়, হাসপাতালের পরিকাঠামোর সার্বিক উন্নতি না হলে এ ধরনের হামলা ঠেকানো কঠিন। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘কর্তাদের সঙ্গে ডাক্তারদের সরাসরি আলোচনায় বসার সময় এসেছে। এ ভাবে চলতে পারে না।’’

Rampurhat doctors
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy