Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ধর্মঘট সফল করতে পথেও রামধনু জোট

রেললাইনের উপরে দলবল নিয়ে শুয়ে পড়েছিলেন কংগ্রেসের এক নেতা। পুলিশ তাঁকে সরিয়ে, অবরোধ তুলে এলাকা ছাড়তেই সিপিএমের লোকজন এসে শুয়ে পড়ল লাইনের উপরে প্রায় একই জায়গায়। ধর্মঘট-বিরোধী শাসক দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মারপিটে জড়িয়ে বিজেপি-র এক সমর্থকের গাল ফেটেছিল। রক্তাক্ত ওই সমর্থককে সঙ্গে নিয়ে দেগঙ্গা থানার সামনে রাস্তায় শুয়ে পড়ে বিক্ষোভ শুরু করে বিজেপি। সেখানে গিয়ে হামলাকারীদের গ্রেফতারের দাবি জানাতে, এমনকী, অবরোধে সামিল হতেও দেখা যায় সিপিএম-কে।

নির্মল বসু
বসিরহাট শেষ আপডেট: ০১ মে ২০১৫ ০৩:২৭
Share: Save:

রেললাইনের উপরে দলবল নিয়ে শুয়ে পড়েছিলেন কংগ্রেসের এক নেতা। পুলিশ তাঁকে সরিয়ে, অবরোধ তুলে এলাকা ছাড়তেই সিপিএমের লোকজন এসে শুয়ে পড়ল লাইনের উপরে প্রায় একই জায়গায়।

ধর্মঘট-বিরোধী শাসক দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মারপিটে জড়িয়ে বিজেপি-র এক সমর্থকের গাল ফেটেছিল। রক্তাক্ত ওই সমর্থককে সঙ্গে নিয়ে দেগঙ্গা থানার সামনে রাস্তায় শুয়ে পড়ে বিক্ষোভ শুরু করে বিজেপি। সেখানে গিয়ে হামলাকারীদের গ্রেফতারের দাবি জানাতে, এমনকী, অবরোধে সামিল হতেও দেখা যায় সিপিএম-কে।

বৃহস্পতিবার, বন্‌ধের দিন এমন কিছু টুকরো ঘটনার সাক্ষী থাকল উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট, দেগঙ্গা, বেড়াচাঁপা। কংগ্রেস, সিপিএম এবং বিজেপি-র লোকজনকে ধর্মঘটের সমর্থনে প্রায় কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পথে নামতে দেখা গিয়েছে।

বিরোধীদের ‘দহরম-মহরম’ নজর এড়ায়নি শাসক দলের। তৃণমূলের জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের মন্তব্য, ‘‘কিছু ধান্দাবাজ দল অসাধু জোটের পরিকল্পনা শুরু করেছে। মানুষই ওদের যোগ্য জবাব দেবেন।’’ শাসক দলের নিচুতলার নেতা-কর্মীদের কথায়, ‘‘রামধনু জোট তো ওরা পুরভোটেও করেছে!’’ তবে বসিরহাট, দেগঙ্গার বাসিন্দাদের একটা বড় অংশ এমন ‘জোট’ আগে দেখেছেন বলে মনে করতে পারছেন না।

শিলিগুড়িতে বিরোধী শিবিরের নেতা-কর্মীদের কাছে বার্তা পৌঁছে দিয়ে অলিখিত জোট গড়ে সাধারণ মানুষের নির্বিঘ্নে ভোট দেওয়া নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছেন বামেরা। ভোটের দিন কয়েকটি ওয়ার্ডে ‘বর্গি হানা’র আশঙ্কা রুখতে সব বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের জোট বেঁধে থাকার কৌশল (নয়া শিলিগুড়ি মডেল) এখন বহুল চর্চিত। পশ্চিম মেদিনীপুরের রামজীবনপুরে বিরোধী দলগুলি স্থানীয় স্তরে আসন সমঝোতায় গিয়ে তৃণমূলকে রুখে দিয়েছে। বন্‌ধের বসিরহাটও কি নতুন ‘মডেল’-এর ইঙ্গিত দিচ্ছে?

বসিরহাট দক্ষিণের বিধায়ক তথা বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্যের মন্তব্য, ‘‘বাঁচার তাগিদে সহাবস্থান হয়। তৃণমূল বাঁচার অধিকার কেড়ে নিচ্ছে। সে জন্যই এ দিন মানুষ দলমত নির্বিশেষে গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন।’’ সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য নিরঞ্জন সাহাও বিরোধীদের এককাট্টা হওয়ার কারণ হিসেবে টেনেছেন, ‘দলের থেকে জীবন বড়’র প্রসঙ্গ।

সরাসরি ধর্মঘটের ডাক না দেওয়া কংগ্রেস কেন এ জোটে? উত্তর ২৪ পরগনা জেলা কংগ্রেস সভাপতি (গ্রামীণ) অমিত মজুমদার বলেন, ‘‘পুরভোটের দিন যে ভাবে দলীয় কর্মীরা তৃণমূলের বহিরাগতদের সন্ত্রাস দেখেছেন, তা তাঁরা ভুলতে পারছেন না। সেই তিক্ত অভিজ্ঞতাই নিচুতলার কর্মীদের একাংশকে এ দিনের আন্দোলনের শরিক করেছে।’’

কংগ্রেস এ দিন সকাল থেকে বসিরহাটে রেল অবরোধ শুরু করে। বেলা ৮টা নাগাদ বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিতে ভ্যাবলা স্টেশনে হাজির হয় পুলিশ। কিছু সঙ্গীকে নিয়ে কংগ্রেস নেতা শান্তি হালদার রেললাইনে শুয়ে পড়েন। পুলিশ তাঁকে চ্যাংদোলা করে সরিয়ে দেয়। শান্তিবাবু-সহ কয়েকজনকে গ্রেফতারও করা হয়। কিন্তু পুলিশ সরতেই এক দল সিপিএম সমর্থক হাজির হন একই জায়গায়। তাঁরাও রেললাইনে শুয়ে পড়েন। কংগ্রেসেরও কিছু লোকজন পরে ফিরে এসে যোগ দেন তাঁদের সঙ্গে। সিপিএমের এক বর্ষীয়ান নেতাকে বলতে শোনা যায়, ‘‘তৃণমূলের বিরুদ্ধে এমন এককাট্টা ভাবে আন্দোলনে নামতে না পারলে, কিচ্ছু হবে না।’’ শেষ পর্যন্ত বেলা ১০টা নাগাদ অবরোধ তোলে পুলিশ।

দেগঙ্গা বাজারে বিক্ষোভ দেখানোর সময়ে প্রকাশ সাধুখাঁ নামে এক বিজেপি সমর্থককে মারধরের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। থানার সামনে টাকি রোডে শুয়ে পড়ে অবরোধ শুরু করেন বিজেপি-র লোকজন। গুটি গুটি পায়ে সেখানে ভিড়তে দেখা যায় সিপিএম সমর্থকদেরও। বেড়াচাঁপা ও হামাদামা বাজারে সিপিএমের সঙ্গে গোলমাল বাধে তৃণমূলের। কয়েক জনকে গ্রেফতারও করে পুলিশ। সেই খবর পেয়ে সিপিএম এবং বিজেপি বেড়াচাঁপায় যৌথ ভাবে টাকি রোড অবরোধ করে। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের কয়েক জনকে গ্রেফতার করে প্রায় ঘণ্টা দেড়েকের চেষ্টায় রাস্তা অবরোধমুক্ত করে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE