মুম্বই হামলার অন্যতম চক্রী জাকিউর রহমান লকভিকে নিয়ে ইসলামাবাদ-নয়াদিল্লি উত্তেজনার পারদ এখনও পুরোটা থিতু হয়নি। তার মধ্যেই কাল তিন দিনের জন্য কলকাতা সফরে যাচ্ছেন ভারতে পাক হাইকমিশনার আব্দুল বাসিত। পাক হাইকমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, এই সফরে নবান্নে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও দেখা করবেন বাসিত। ওই বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে পাকিস্তানের চারটি প্রদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক গড়ে তোলা নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা।
নরেন্দ্র মোদী সরকারের সম্মতি ছাড়া বাসিতের এই সফর সম্ভব নয়। সেটাই কূটনীতির দস্তুর। কিন্তু কূটনীতিকদের মতে, এ ক্ষেত্রে রাজনীতির বার্তাটাই তাৎপর্যপূর্ণ। তা হল, নরেন্দ্র মোদী চান ভারত-পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক মজবুত হোক। যে কারণে সম্প্রতি সার্কভুক্ত রাষ্ট্রগুলির সফরে বেরিয়ে ইসলামাবাদ গিয়েছিলেন বিদেশসচিব এস জয়শঙ্কর। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বাড়াতে পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফেরও আগ্রহ রয়েছে বলে কূটনীতিকদের অনেকে মনে করেন। তাঁদের মতে, দুই প্রধানমন্ত্রীর এই আগ্রহে বার বার যতিচিহ্ন বসাতে চাইছে পাক মৌলবাদীরা। তাদের সঙ্গে পাক প্রশাসনের একটি অংশের গভীর যোগ আছে বলে মনে করে নয়াদিল্লি। কূটনীতিকদের মতে, সেই অংশের চাপেই লকভির বিরুদ্ধে ঠিক মতো মামলা সাজানো হয়নি। ফলে, সে জামিন পেয়ে যায়। মোদী সরকারের কর্তারা জানাচ্ছেন, বাসিতকে বিদেশ মন্ত্রকে ডেকে লকভির জামিন নিয়ে কড়া বার্তা দেওয়া হয়। তার পরে লকভিকে আপাতত জেলে রাখারই সিদ্ধান্ত নেয় ইসলামাবাদ। এই বিষয়টিও মনে রাখা প্রয়োজন। ইসলামাবাদের এই সিদ্ধান্ত ঘরোয়া রাজনীতিতে স্বস্তি দিয়েছে মোদীকে।
হাইকমিশন সূত্রে জানানো হয়েছে, কলকাতায় বাসিত একটি বণিকসভার অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। সেই সঙ্গে বক্তৃতা দেবেন মৌলানা আবুল কালাম আজাদ ইনস্টিটিউটে। সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে বর্তমান ও প্রাক্তন ছাত্রদের সঙ্গে আলোচনাতেও অংশ নেবেন পাক দূত।
পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যটাই এখন প্রায় থমকে রয়েছে। তবে উভয় তরফই চাইছে তা আবার শুরু হোক। কলকাতার বণিকসভার অনুষ্ঠানে বাসিতের যোগ দেওয়া সে দিক থেকে প্রাসঙ্গিক। নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত এক পাক কূটনীতিক আজ জানান, আলোচনার মাধ্যমে দু’দেশের মধ্যে বিরোধ মীমাংসা অপরিহার্য বলেই মনে করে ইসলামাবাদ। যেহেতু দু’টি দেশই যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় চলে তাই রাজ্য বা প্রদেশের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। সেই যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকে মর্যাদা দিয়েই কলকাতা সফরে যাচ্ছেন বাসিত। পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে চার পাক প্রদেশের সম্পর্ক গড়তে উদ্যোগী হওয়াও সেই ভাবনারই অঙ্গ। যদিও কী ধরনের সম্পর্ক ও আদানপ্রদান ইসলামাবাদ চাইছে তা আজ স্পষ্ট করা হয়নি।