Advertisement
১৮ মে ২০২৪

আক্রমণের মুখে ভুল ব্যাখ্যার যুক্তি পার্থর

শিক্ষাক্ষেত্রে শাসকের দাপট চলে, জানাই ছিল। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বশাসনে হস্তক্ষেপ করার পক্ষে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় প্রকাশ্যে যে যুক্তি হাজির করেছেন, তাতে সমালোচনায় ঝড় উঠেছে সব মহলে! কর্মীদের বেতন বা অন্য রকমের আর্থিক সহায়তা সরকার বহু ক্ষেত্রেই দিয়ে থাকে। কিন্তু বেতন দেওয়ার যুক্তিকে ব্যবহার করে শিক্ষামন্ত্রী যে ভাবে শিক্ষায় সরকারি হস্তক্ষেপকে উচিত কাজ বলে প্রমাণ করতে চেয়েছেন, তাতে ক্ষুব্ধ এবং বিস্মিত শিক্ষা জগত্।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ মে ২০১৫ ০১:৫৫
Share: Save:

শিক্ষাক্ষেত্রে শাসকের দাপট চলে, জানাই ছিল। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বশাসনে হস্তক্ষেপ করার পক্ষে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় প্রকাশ্যে যে যুক্তি হাজির করেছেন, তাতে সমালোচনায় ঝড় উঠেছে সব মহলে! কর্মীদের বেতন বা অন্য রকমের আর্থিক সহায়তা সরকার বহু ক্ষেত্রেই দিয়ে থাকে। কিন্তু বেতন দেওয়ার যুক্তিকে ব্যবহার করে শিক্ষামন্ত্রী যে ভাবে শিক্ষায় সরকারি হস্তক্ষেপকে উচিত কাজ বলে প্রমাণ করতে চেয়েছেন, তাতে ক্ষুব্ধ এবং বিস্মিত শিক্ষা জগত্। রাজনৈতিক বিরোধীরাও সরব হয়েছেন শিক্ষামন্ত্রীর ‘প্রভুসুলভ’ মানসিকতার বিরুদ্ধে।

সমালোচনার মুখে শিক্ষামন্ত্রী পার্থবাবু অবশ্য শুক্রবার দাবি করেছেন, তাঁর বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। স্বশাসিত মানেই কোনও বিশ্ববিদ্যালয় সরকারের দৃষ্টিভঙ্গির সম্পূর্ণ বাইরে যেতে পারে না, এ কথাই তিনি বলতে চেয়েছিলেন। বেতন দিই, তাই যা বলব করতে হবে— এমন কোনও ‘প্রভুসুলভ’ আচরণ তিনি করেননি।

বৃহস্পতিবার বিরোধীদের ডাকা ধর্মঘটের মধ্যেও বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে পরীক্ষা নিতে হবে বলে নির্দেশ দিয়েছিল শিক্ষা দফতর। পড়ুয়ারা কী ভাবে পরীক্ষা হলে পৌঁছবেন, তা নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যেই পরীক্ষার সূচি বজায় রাখার যুক্তি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। সেই সঙ্গেই প্রশ্ন উঠেছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বশাসনে সরকার হস্তক্ষেপ করে কী করে? জবাবে শিক্ষামন্ত্রী যা বলেছেন, তার তীব্র বিরোধিতা করেছেন বিরোধীরা। বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু এ দিন বলেন, ‘‘উচিত শিক্ষা হওয়া উচিত শিক্ষামন্ত্রীর!’’ বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ বলেছেন, ‘‘শিক্ষামন্ত্রীর কথা শুনে মনে হচ্ছে, তিনি প্রভু! শিক্ষক-শিক্ষিকা আর অশিক্ষক কর্মচারীরা সবাই ভৃত্য!’’ সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সুজন চক্রবর্তীরও কটাক্ষ, ‘‘শিক্ষামন্ত্রীর গলায় প্রভুর সুর শোনা যাচ্ছে!’’ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেছেন, ‘‘যে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মনে করেন, ধর্মঘট ডাকার গণতান্ত্রিক অধিকার ভাঙার জন্য বিরোধীদের পুলিশ এবং নিজের দলের ক্যাডার দিয়ে পেটানো যায়, যিনি মনে করেন ধর্মঘটের দিনেই জোর করে পরীক্ষা নিতে হবে, তাঁদের মানসিকতা তো স্বৈরতান্ত্রিকই! তাই সেই সরকারের শিক্ষামন্ত্রীও এমন বলেছেন।’’

শিক্ষাবিদদের অনেকে আগের দিনই বলেছিলেন, বাম জমানায় শিক্ষা ক্ষেত্রে রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণকে প্রাতিষ্ঠানিক চেহারা দিয়েছিল ‘অনিলায়ন’। কিন্তু সিপিএমের প্রয়াত প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক অনিল বিশ্বাস কখনও এমন মন্তব্য করেছেন বলে মনে করতে পারবেন না কেউ। দল এবং সরকারের কর্তৃত্বকে বেআব্রু করে দেওয়ার ক্ষেত্রে তৃণমূল জমানার শিক্ষামন্ত্রী সব নজির ছাপিয়ে গিয়েছেন! প্রাক্তন উপাচার্য আনন্দদেব মুখোপাধ্যায়, অশোকনাথ বসু-সহ একাধিক শিক্ষা ব্যক্তিত্ব এ দিনও সুর নরম করেননি। ‘পরিবর্তনপন্থী’ শিক্ষাবিদ বলে পরিচিতরা অবশ্য মন্তব্য এড়িয়ে গিয়েছেন। অভিরূপ সরকার যেমন ব্যস্ততার জন্য এ দিন কথা বলতে পারেননি। তৃণমূলের শিক্ষাবিদ-সাংসদ সুগত বসু ছিলেন দিল্লিতে। রাতে ফিরে আনন্দবাজারকে তিনি জানিয়েছেন, শিক্ষামন্ত্রী ঠিক কী বলেছেন, ভাল করে না জেনে কোনও মন্তব্য করতে চান না। তবে সুগতবাবুকে যাঁরা চেনেন, তাঁরা বলছেন, তিনি বরাবরই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বশাসনের পক্ষে। সেখানে কোনও আপসের পরিপন্থী তিনি নন।

পার্থবাবু অবশ্য এ দিন দাবি করেন, তাঁকে ‘ভুল নিশানা’ করা হচ্ছে। তাঁর দাবি, তাঁর মন্তব্যের অপব্যাখ্যা করা হয়েছে। পার্থবাবুর কথায়, ‘‘সরকার শিক্ষানীতি ঠিক করে দেয়, মাইনেও দেয়। আরও নানা সাহায্য করে। তার পরেও সরকারের কিছু বলার অধিকার থাকবে না? স্বশাসন মানেই কি যা খুশি করার স্বাধীনতা? আমি এই কথাই বলেছিলাম। কিন্তু আমার কথা যে ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, তাতে অনেকে সম্পূর্ণ ভুল ভেবে সমালোচনা করছেন!’’ স্বশাসন মানেই বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও কাজে সরকারের ভূমিকা থাকবে না, এটা হতে পারে না— এমন কথা যাদবপুর-কাণ্ডের সময়েও একাধিক বার বলেছেন শিক্ষামন্ত্রী। পার্থবাবুর বক্তব্য, ‘‘এখনও তা-ই বলছি। যেখানে শুধু পঠন-পাঠনের বাইরে বৃহত্তর স্বার্থ জড়িত, সেখানে সরকারকে তো ভূমিকা নিতে হয়ই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE