Advertisement
০৭ মে ২০২৪
স্বাধিকারে হস্তক্ষেপ নিয়ে প্রশ্ন

যাদবপুরে শিক্ষাকর্মী নিয়োগ নিয়ে আপত্তি পার্থর

ফের বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধিকারে হস্তক্ষেপ। এ বার বিতর্ক যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাকর্মী নিয়োগকে ঘিরে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে রয়েছে, অনুমোদিত পদে প্রার্থী নিয়োগ করতে শিক্ষা দফতরের ছাড়পত্রের কোনও প্রয়োজনই পড়ে না। কর্মী নিয়োগের অধিকার রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষেরই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০১৬ ০৪:১৮
Share: Save:

ফের বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধিকারে হস্তক্ষেপ। এ বার বিতর্ক যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাকর্মী নিয়োগকে ঘিরে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে রয়েছে, অনুমোদিত পদে প্রার্থী নিয়োগ করতে শিক্ষা দফতরের ছাড়পত্রের কোনও প্রয়োজনই পড়ে না। কর্মী নিয়োগের অধিকার রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষেরই। সেইমতো যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ ২১১ জন শিক্ষাকর্মী নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। এর পরেই হস্তক্ষেপ করে শিক্ষা দফতর। তারা জানিয়ে দেয়, অনুমোদিত পদেও কর্মচারী নিয়োগ করতে শিক্ষা দফতরের সিলমোহর লাগবে। কেন বিকাশ ভবনকে না জানিয়ে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় স্বয়ং।

অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী, নিজেদের প্রয়োজনমতো শিক্ষাকর্মী নিয়োগ করতে পারবেন কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, সেইমতো গত ৪ ফেব্রুয়ারি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাকর্মী নিয়োগের একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়। তাতে ২১১ জন শিক্ষাকর্মী নিয়োগের কথা উল্লেখ করা হয়। সেই ফর্ম জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল ১ মার্চ। কিন্তু ২৩ ফেব্রুয়ারি একটি সংশোধনী এনে ফর্ম জমা দেওয়ার দিন বাড়ানো হয় ১১ মার্চ পর্যন্ত।

কিন্তু এক রকম হঠাৎ করেই শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানিয়ে দেন, ওই পদে কোনও নিয়োগ এখনই সম্ভব নয়। উচ্চ শিক্ষা দফতরের কর্তারা বলেন, হঠাত্ একসঙ্গে এত জন শিক্ষাকর্মী নিয়োগের কী প্রয়োজন দেখা দিল, সেটা খতিয়ে দেখার প্রয়োজন রয়েছে।

কিন্তু শিক্ষামন্ত্রী এ ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধিকারে নাক গলালেন কেন ?

রাজ্য সরকার বেতন দেয়, তাই তাদের হস্তক্ষেপ করার অধিকার রয়েছে— নিজের পুরনো তত্ত্বেই স্থির রয়েছেন পার্থবাবু। তাঁর বক্তব্য, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয় যদি নিজেরা মাইনে দেয়, তবে নিয়োগ করুক। সরকারের মাইনে নিতে গেলে তো সরকারের বাজেটকে মাথায় রাখতে হবে।’’ কিন্তু ওই সব পদ তো পূর্ব নির্ধারিত। সেগুলির ক্ষেত্রে তো আগেই টাকা ধার্য রয়েছে। তা হলে? পার্থবাবুর মন্তব্য, ‘‘পূর্ব নির্ধারিত তো কী হয়েছে? দ্বিতীয় বার কিংবা যত বারই হোক, নিয়োগের আগে রাজ্য সরকারের অনুমতি নিতেই হবে।’’ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ২১১ জন কর্মী নিয়োগ বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়ে দেন শিক্ষামন্ত্রী।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অবশ্য শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানাচ্ছেন, যে ২১১টি পদে শিক্ষাকর্মী নিয়োগের কথা বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে তা পূর্ব-অনুমোদিত। কোনও পূর্ব-অনুমোদিত পদে যদি বিশ্ববিদ্যালয় কর্মচারী নিয়োগ করতে চায়, সে ক্ষেত্রে সরকারের কাছে নতুন করে অনুমোদন প্রয়োজন কি না, সে বিষয়ে আইনে কোনও উল্লেখ-ই নেই। তবে বিশ্ববিদ্যালয় যদি নতুন করে কোনও পদ তৈরি করে নিয়োগ করতে চায়, সে ক্ষেত্রে অবশ্যই সরকারের অনুমতি প্রয়োজন রয়েছে বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে উল্লেখ রয়েছে।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, আপাতত কর্মী নিয়োগের ফর্ম বিলি বন্ধ রয়েছে। তবে কি শিক্ষা দফতর বিশ্ববিদ্যালয়কে চিঠি দিয়ে ফর্ম বিলি বন্ধ করতে বলেছে? বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রদীপকুমার ঘোষ জানিয়েছেন, শিক্ষা দফতর থেকে এখনও কোনও নির্দেশিকা এসে পৌঁছয়নি বিশ্ববিদ্যালয়ে। তবে চিঠি এলে বিষয়টি ভেবে দেখবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। তা হলে ফর্ম বিলি বন্ধ কেন? বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা হয়ে যাওয়ায় আপাতত ফর্ম জমা নেওয়া বন্ধ রয়েছে ।

শিক্ষাবিদেরা অবশ্য জানাচ্ছেন, শিক্ষামন্ত্রীর এ হেন হস্তক্ষেপ স্বাধিকার ভঙ্গেরই সামিল। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অশোকনাথ বসু বলেছেন, ‘‘শিক্ষামন্ত্রী যা বলছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে তার কোনও উল্লেখ নেই। আইন তো সরকারই পাশ করে। কোনটা ঠিক, কোনটা ভুল তা তো তাদেরই ভাল জানার কথা।’’ প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ অমল মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সরকারের অনুমোদিত পদে নিয়োগের জন্য ফের সরকারের অনুমতি নিতে হবে শুনে আমার আশ্চর্য লাগছে। শিক্ষামন্ত্রী কি মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয় তাঁর দফতরের অংশ? এটা অনৈতিক কাজ।’’ নিজেকে ‘সরকারের লোক’ বলে দাবি করা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য সুগত মারজিতের বক্তব্য, ‘‘অনুমোদিত শূন্যপদে সাধারণত সরকারের অনুমতি লাগে না।’’ তা হলে যাদবপুরের ক্ষেত্রে শিক্ষামন্ত্রীর ভূমিকা কি ঠিক? এ ব্যাপারে সুগতবাবুর মন্তব্য, ‘‘নির্দিষ্ট করে যাদবপুরের বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না। কারণ সে ক্ষেত্রে কী হয়েছে তা আমার জানা নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

education minister state Jadavpur university
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE