Advertisement
E-Paper

আওয়ামি সম্মেলনে যাচ্ছেন মমতার দূত পার্থ

আবহে তিস্তা নিয়ে জটিলতা। তবু সৌজন্যে খামতি থাকবে কেন! তাই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার দলের সম্মেলন ঘিরে দীপাবলিতে যেন সেই বার্তাই দিতে চাইলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:৩৫
 —ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

আবহে তিস্তা নিয়ে জটিলতা। তবু সৌজন্যে খামতি থাকবে কেন! তাই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার দলের সম্মেলন ঘিরে দীপাবলিতে যেন সেই বার্তাই দিতে চাইলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

সূত্রের খবর, হাসিনার আমন্ত্রণে তাঁর দল আওয়ামি লিগের ২০তম জাতীয় পরিষদের সম্মেলনে প্রতিনিধি পাঠাচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস। হাসিনা চেয়েছিলেন, সেই মহাসম্মেলনে যোগ দিতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীই ঢাকায় আসুন। কিন্তু ওই সময়ে পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি থাকায় মমতা যেতে পারছেন না। পরিবর্তে শিক্ষামন্ত্রী তথা দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে লিগের দু’দিনব্যাপী মহাসম্মেলনে পাঠাচ্ছেন তিনি। শনিবার পার্থবাবু বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর দূত হিসেবে যাচ্ছি। তাঁর বার্তাই পৌঁছে দেব সে দেশে। সদ্ভাব আর শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানেই যে উন্নয়ন সম্ভব, সে কথাই ও পার বাংলায় বলে আসব। আওয়ামি লিগের নেতা-কর্মীদের কাছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক সংগ্রামের কথাও জানাব।’’

তিস্তা নিয়ে বিতর্কের জেরে এক সময়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সঙ্গে ঢাকা যেতে রাজি হননি মমতা। সেই তিনিই কেন এখন হাসিনার দলের রাজনৈতিক সম্মেলনে পার্থবাবুকে দূত হিসেবে পাঠাতে রাজি হলেন— তা নিয়ে কূটনৈতিক মহলের আগ্রহ চরমে। যদিও মুখ্যমন্ত্রী তাঁর ঘনিষ্ঠমহলে জানিয়ে রেখেছেন, হাসিনার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ব্যক্তিগতস্তরে মধুর। উভয়ের মধ্যে সৌজন্যেও কোনও কমতি নেই। তাই এর সঙ্গে তিস্তা চুক্তিকে গুলিয়ে ফেলা ঠিক নয়। কিন্তু রাজ্যের স্বার্থের পরিপন্থী কোনও চুক্তি যে তিনি মানবেন না, তা-ও স্পষ্ট করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

নবান্নের খবর, তিস্তা নিয়ে এখনও কোনও রকম নরম মনোভাব দেখাতে রাজি নন মুখ্যমন্ত্রী। উত্তরবঙ্গকে শুখা রেখে দিল্লি-ঢাকা একতরফা কোনও চুক্তি করলে তিনি যে ফের রুখে দাঁড়াবেন, তাঁর সরকারের প্রশাসনিক কর্তাদের কাছেও সেই বার্তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন মমতা।

তবে সৌজন্যের ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রী বরাবর অকৃপণ, বলছেন দলের শীর্ষ নেতারা। দ্বিতীয়বার জিতে রেড রোডে সরকার গঠনের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে উপস্থিত থাকার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন মমতা। হাসিনা সে দিন নিজে না থাকলেও তাঁর দূত হিসেবে পাঠিয়েছিলেন সে দেশের বাণিজ্যমন্ত্রী আমির হোসেন আমুকে। আর মুখ্যমন্ত্রীর জন্য ঢাকা থেকে সৌজন্যের মোড়কে এসেছিল ২০ কিলোগ্রাম পদ্মার ইলিশ। কলকাতায় বাংলাদেশ উপদূতাবাস তা পরম যত্নে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছিল শপথের আগের সন্ধ্যাতেই।

আবার, ঢাকার গুলশনে ‘হোলি আর্টিসান বেকারি’তে জঙ্গি হানার পরে হাসিনাকে ফোন করে পাশে থাকার কথা জানিয়েছিলেন এই বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। ওই ঘটনায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার কথা ভেবে তিনি যে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন, সে কথাও জানাতে ভোলেননি মমতা। পরে নবান্নে পাঠানো এক চিঠিতে এই নিয়ে নিজের কৃ়ত়জ্ঞতার কথা জানান মুজিব-কন্যা। সঙ্কটের সময়ে মুখ্যমন্ত্রী পাশে দাঁড়ানোর কথা জানানোয় তাঁকে ধন্যবাদও জানান তিনি। পুজোর আগেও দু’পক্ষের মধ্যে ইলিশ-সৌজন্য হয়েছে।

সৌজন্যের এই বাতাবরণের মাঝেই এসেছে ঢাকা যাওয়ার আমন্ত্রণ। আওয়ামি লিগের তরফে দাবি করা হয়েছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কী ভাবে সমস্ত প্রতিবন্ধকতার মোকাবিলা করে দ্বিতীয় বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হলেন, সেই রাজনৈতিক সংগ্রামের কথা নিজের মুখেই আওয়ামি প্রতিনিধিদের বলুন নেত্রী— চেয়েছিলেন হাসিনা। সেই কারণেই লিগের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সম্মেলনে তাঁকে আমন্ত্রণ জানানোর সিদ্ধান্ত নেন তিনি। কিন্তু মমতা না গেলেও পার্থবাবু যাচ্ছেন জেনে খুশি ঢাকার শাসকদল।

আওয়ামি লিগের ২০তম জাতীয় পরিষদের সম্মেলনে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রায় ৭০০০ প্রতিনিধি অংশ নেবেন। ২২-২৩ অক্টোবরের সম্মেলনকে ঘিরে এখন থেকেই সেজে উঠেছে ঢাকা। লিগ সূত্রের খবর, এর আগে তাদের জাতীয় সম্মেলন হয়েছিল ২০১২ সালের ডিসেম্বরে। সেই সম্মেলন থেকেই শেখ হাসিনা আরও তিন বছরের জন্য লিগের সভানেত্রী নির্বাচিত হন।

লিগের নেতাদের মতে, এ বারের সম্মেলনের গুরুত্ব অন্য একটি কারণে বেশি। লিগের প্রতিষ্ঠাতা, প্রয়াত মুজিবর রহমানের দুই নাতি হাসিনার ছেলে সজীব আহমেদ ওয়াজেদ জয় এবং রেহেনার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি প্রথমবারের জন্য জাতীয় পরিষদের সম্মেলনে প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ অগস্ট মুজিবের পরিবারের উপর যে আত্মঘাতী হামলা হয়, তাতে প্রায় সকলেই মারা যান। হাসিনা এবং রেহেনা বিদেশে থাকায় তাঁরা বেঁচে গিয়েছিলেন। পরবর্তী কালে হাসিনাই লিগের রাজনীতিকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন। এ বার জয় ও ববিকে জাতীয় পরিষদে সামিল করে মুজিবের তৃতীয় প্রজন্মকে সামনে নিয়ে আসছে আওয়ামি লিগ।

Partha Chatterjee Bangladesh Mamata Banerjee
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy