পাশাপাশি: সবে স্কুলে এসেছে মাধ্যমিকের ফল। তা দেখতেই হুড়োহুড়ি জলপাইগুড়িতে। ছবি: সন্দীপ পাল।
মেধা তালিকায় নাম রয়েছে ১৩ জনের। কিন্তু পাশের হারে এখনও অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে উত্তরবঙ্গে বেশির ভাগ জেলা। যেখানে কলকাতা, দুই ২৪ পরগনা, বাঁকুড়া বা পূর্ব মেদিনীপুর, কেউ নব্বইয়ের কোঠায়, কেউ বা নব্বই ছুঁই ছুঁই, সেখানে এর ধারেকাছে নেই উত্তরের কোনও জেলা। একমাত্র মালদহ কিছুটা হলেও এগিয়ে রয়েছে। কিন্তু উল্টো দিকে জলপাইগুড়ি বা উত্তর দিনাজপুরের অবস্থা বেশ খারাপ।
এর ফলে প্রশ্ন উঠেছে, কেন উত্তরের প্রায় সব জেলারই এই হাল? এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে মূলত দু’টি কারণ তুলে ধরেছেন শিক্ষক ও শিক্ষাবিদেরা। প্রথমত, ছাত্রছাত্রীর তুলনায় উত্তরে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সংখ্যা অনেক কম। দ্বিতীয়ত, অধিকাংশ স্কুলে ক্লাসরুমের সংখ্যাও পড়ুয়াদের অনুপাতে যথেষ্ট নয়। শিক্ষাবিদদের একটা বড় অংশের বক্তব্য, উত্তরে শিক্ষার পরিকাঠামো নিয়ে এত দিন যে বঞ্চনার অভিযোগ ছিল, সেটাকেই ফের সামনে নিয়ে এল এই দুই কারণ।
যেখানে সুষ্ঠু পঠনপাঠনের জন্য নূন্যতম ৪০ জন পড়ুয়া পিছু একজন শিক্ষক-শিক্ষিকা থাকার কথা, সরকারি তথ্য বলছে, উত্তর দিনাজপুরে সেখানে এক এক জন শিক্ষককে সামলাতে হয় গড়ে ৬০ জন করে ছাত্রছাত্রীকে। তা-ও আবার এই অনুপাতে শিক্ষক রয়েছে শহরের স্কুলগুলিতে। গ্রামের দিকে ছবিটা আরও বেশি খারাপ।
ঘাটতির এই জেলায় রায়গঞ্জের করোনেশন হাইস্কুল অন্যতম ব্যতিক্রম। তাদের থেকে এ বার প্রথম দশে স্থান করে নিয়েছে স্নেহাশিসকুমার গুপ্ত ও শোভন দেব। ২৪৫ জন পরীক্ষার্থীর সকলেই পাশ করেছে। কিন্তু পরিকাঠামোর বিষয়টি যে তাদেরও উদ্বেগের মধ্যে রেখেছে, মেনে নিয়েছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক শুভেন্দু মুখোপাধ্যায়।
জেলার বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) নারায়ণচন্দ্র সরকার বলেন, ‘‘এ বছর দেখা গিয়েছে শহরের তুলনায় গ্রামের স্কুলগুলিতে ফল খারাপ হয়েছে। তার অন্যতম কারণ হল, গ্রামের পড়ুয়ারা নিয়মিত স্কুলে যায় না। বেশির ভাগ সময়ে তাদের জমিতে কাজ করতে হয়। সেটাও বিবেচনায় রাখতে হবে।’’
জলপাইগুড়িও কয়েক বছর ধরে পাশের হারে একেবারে নীচের দিকে। জলপাইগুড়ি জেলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক ধীরাজ মোহন ঘোষ বলেন, ‘‘পড়ুয়া পিছু শিক্ষক উত্তরবঙ্গের সব জেলাতেই কম। উপরন্তু, ক্লাশরুমে গাদাগাদি। পড়ার পরিবেশ, পরিকাঠামো জোরদার না করলে প্রতিযোগিতায় টেকা মুশকিল।’’
জলপাইগুড়ি জেলায় গড়ে ৭০ জন ছাত্র পিছু একজন শিক্ষক রয়েছেন বলে প্রশাসন সূত্রের খবর। এই ছবিটা আরও খারাপ ধূপগুড়ি, বানারহাটের মতো এলাকায়। সেখানে আবার একটি ক্লাসঘরে গাদাগাদি করে বসতে হয় পড়ুয়াদের। গরমের দিনে ঘেমে-নেয়ে একশা হয় পড়ুয়ারা। পড়ায় মন দেবে কী করে?
শিলিগুড়ির ছবিও এর থেকে খুব বেশি আলাদা নয়। শিলিগুড়ি গার্লস স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা শেফালি সিংহ তাই বলেন, ‘‘পাঁচ বছর আগে শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগ হলেও এর মধ্যে অনেক শিক্ষক-শিক্ষিকাই অবসর নিয়েছেন। যেমন, আমাদের স্কুলেই অন্তত ৬ জন অবসর নিয়েছেন। তাতে বিজ্ঞান বিভাগে সমস্যা হচ্ছে।’’
জনান্তিকে অনেকেই বলছেন, উত্তরের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ শহরেই যদি এমন হয়, তা হলে অন্যত্র কী হবে বোঝাই যাচ্ছে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy