ঘোড়ার পিঠে ডোমকলের সিআই জ্যোতির্ময় বাগচী ও রানিনগরের ওসি অরূপ রায় (ডান দিকে)। রানিনগরে। ছবি: সাফিউল্লা ইসলাম।
চরের বালি ভেঙে টগবগিয়ে ছুটছে রবার্ট আর ব্রাউনি।
মুখে টিক-ডিগ-টিক-ডিগ আওয়াজ তুলে পিছু নিচ্ছে কচিকাঁচার দলও। সীমান্তের লোকজন বার বার সাবধান করছেন, ‘‘ওরে, পুলিশের সামনে আর ঘোড়ার পিছনে
থাকতে নেই!’’
কিন্তু সে কথা শুনছে কে? কচিকাঁচারা তো বটেই, গাঁয়ের কিশোর-যুবকেরাও ভয়-ডর ভুলে পুলিশের সামনে গিয়েই জানতে চাইছে, ‘‘ও স্যর, আবার কবে ঘোড়া ছোটাবেন বলুন তো?’’
গত কয়েক দিন ধরে মুর্শিদাবাদের রানিনগর যেন ঘোড়া-রোগে আক্রান্ত। থানায় অভিযোগ জানাতে এসে সীমান্তের এক প্রৌঢ় চেনা সিভিক ভলান্টিয়ারকে ডেকে বলছেন, ‘‘আরিব্বাস, এ জোড়া পেলে কোথায়?’’ থানার পাঁচিল ঘেঁষে দাঁড়ানো ভিড়টাও নিজেদের মধ্যে বলাবলি করছে, ‘‘কী কালার!’’
চোর-পুলিশ সামলে ডিউটি অফিসারও মাঝেমধ্যে গলা চড়াচ্ছেন, ‘‘কী রে, দু’টোকে খেতে-টেতে দিয়েছিস তো?’’ সাদা ঘোড়ার নাম রাখা হয়েছে রবার্ট, বাদামিটা ব্রাউনি। গাঁ-গঞ্জ উজিয়ে এই ঘোড়া-কাহিনি পৌঁছে গিয়েছে পুলিশকর্তাদের কানেও।
আরও পড়ুন: বাড়ুক গেট খুলে রাখার সময়, চায় সীমান্তের গ্রাম
তাঁরাও আবদার করছেন, ‘‘সেই ট্রেনিং পিরিয়ডে ঘোড়া ছুটিয়েছি। পুরনো অভ্যাসটা আর এক বার ঝালিয়ে নিলে কেমন হয়! কবে যাব বলো তো?’’ কখনও আবার ফোন করছেন পড়শি থানার ওসি, ‘‘কী হে, আমাদের কথাটাও একটু মনে রেখো।’’
রানিনগরের ওসি অরূপ রায়ও কাউকে নিরাশ করছেন না। ইতিমধ্যে ঘোড়ার পিঠে সওয়ার হয়েছেন ডোমকলের সিআই জ্যোতির্ময় বাগচী। তিনি বলছেন, ‘‘বহু বছর পরে ঘোড়া ছোটালাম!’’ রবার্ট আর ব্রাউনিকে নিয়ে উৎসাহ দেখিয়েছেন খোদ জেলার পুলিশ সুপার মুকেশ কুমারও।
অরূপবাবু জানাচ্ছেন, মাস দু’য়েক আগে রানিনগরের কাতলামারি সীমান্ত দিয়ে ঘোড়া দু’টি পাচারের চেষ্টা চলছিল। পুলিশের গাড়ি দেখে ঘোড়া ফেলে চম্পট দেয় পাচারকারীরা। এ দিকে, খোয়াড়ের মালিক জানিয়ে দেন, গরু-মোষ হলেও কথা ছিল। কিন্তু ঘোড়া রাখার পরিকাঠামো তাঁদের নেই।
অগত্যা ঘোড়া দু’টিকে নিয়ে আসা হয় থানায়। ছোলা, গুড়ের ব্যবস্থা করছে পুলিশ। প্রাণিসম্পদ দফতর পাঠিয়েছে ওষুধ। কৃষি দফতর দিয়েছে ঘাসের বীজ। মেরামত করা হয়েছে থানারই এক কোনে অবহেলায় পড়ে থাকা ১২০ বছরের পুরনো আস্তাবল (থানার পুরনো নথি জানাচ্ছে, এখানেই এক সময় পুলিশের ঘোড়া রাখা হতো)।
জোড়া ঘোড়ার সৌজন্যে পুলিশ ঝালিয়ে নিচ্ছে পুরনো অভ্যাস। রানিনগর থানাও খুঁজে পেল ভুলে যাওয়া আস্তাবলের ইতিহাস।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy