Advertisement
১১ মে ২০২৪

অ্যাসিড-ক্ষতে মলম হাজার হাতে

দিনমজুরির নগদ ৩৫০ টাকা এখনও হাতে আসেনি ঠিকই। তবে স্টেশনধারের ঝুপড়িঘরে অবশেষে পৌঁছে গিয়েছে দরকারি মলম, অন্যান্য ওষুধপত্র আর বেশ খানিকটা দরকারি নগদ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৬ ০২:১৪
Share: Save:

দিনমজুরির নগদ ৩৫০ টাকা এখনও হাতে আসেনি ঠিকই। তবে স্টেশনধারের ঝুপড়িঘরে অবশেষে পৌঁছে গিয়েছে দরকারি মলম, অন্যান্য ওষুধপত্র আর বেশ খানিকটা দরকারি নগদ।

বিরাটি স্টেশনের লাগোয়া এলাকায় দিনমজুর ঘরের অ্যাসিড-আক্রান্ত মা-ছেলের খবর আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার পরে নড়েচড়ে বসেছে রাজ্য প্রশাসন। এবং শুধু প্রশাসন নয়, সাহায্যের হাত বা়ড়িয়ে দিয়েছেন বহু সাধারণ মানুষও।

ব্যারাকপুরের মহকুমাশাসক পীযূষ গোস্বামী জানান, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী মা ও ছেলের ক্ষতিপূরণের (মাথাপিছু তিন লক্ষ হিসেবে মোট ছ’লক্ষ) টাকা দেওয়ার প্রক্রিয়াও তাঁরা শুরু করে দিয়েছেন। রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতর এবং জেলা প্রশাসন মারফত কয়েক দিনের মধ্যেই টাকাটা চলে আসার কথা।

২৬ অগস্ট নিজেদের ঝুপড়িঘরে অ্যাসিড-হামলার শিকার হন গীতা কামাল এবং তাঁর ১০ বছরের ছেলে সুরজিৎ। লক্ষ্য ছিলেন গীতাদেবীই। পল্টু কর্মকার নামে এক যুবক তাঁকে উত্ত্যক্ত করত বলে অভিযোগ। তাকে গ্রেফতার করা হলেও গীতাদেবী আর সুরজিতের যন্ত্রণার কোনও উপশম হয়নি। ওষুধপত্রটুকু মিলছিল না নগদ টাকার অভাবে।

মঙ্গলবার বিরাটি স্টেশনধারের ঝুপড়িতে এত লোক দেখে মা ও ছেলে অবাক হয়ে যান। গীতার স্বামী মন্টুবাবু রোজকার মতোই কাজে বেরিয়েছিলেন। বিকেলে ফিরে এসে দেখেন, অ্যাসিড-আক্রান্ত ছেলের জন্য ৮৫ টাকার যে-মলম কিনতে জেরবার হয়ে যাচ্ছিলেন, তা বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছেন স্থানীয় প্রশাসনের কর্তারাই। একটু-আধটু ওষুধ নয়, একসঙ্গেই পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বেশ কয়েক দিনের মলম।

জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, উত্তর দমদম পুরসভার স্বাস্থ্য আধিকারিকদের সহায়তায় রোজ নিখরচায় সুরজিতের ড্রেসিংয়ের বন্দোবস্ত করা হচ্ছে। সে এখনও নিজের পায়ে ঠিকঠাক দাঁড়াতে পারে না। কোনও সরকারি হাসপাতালের আধিকারিকদের বিরাটিতে ওদের বাড়িতে
পাঠিয়ে শুশ্রূষা করা হবে বলে সরকারি কর্তারা জানিয়েছেন।

রাজমিস্ত্রির জোগাড়ে মন্টু এখনও তাঁর মজুরি নগদে পাননি। তবে তাঁদের বাড়িতে এসে অনেকেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। সল্টলেকের সেক্টর ফাইভের একটি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার কয়েক জন কর্মীও পরিবারটির পাশে দাঁড়াতে উদ্যোগী হয়েছেন। খিদিরপুরের এক ব্যবসায়ীও পরিবারটিকে সাহায্য করতে ইচ্ছুক। সোদপুরের এক অবসরপ্রাপ্ত সরকারি অফিসারের ৬৭ বছরের বৃদ্ধা স্ত্রী ভাঙা পা নিয়ে চলে আসেন পরিবারটির কাছে। কাঁদতে কাঁদতে সেই মহিলা বললেন, ‘‘কাগজে ওদের কথা পড়ে বুক ভেঙে যাচ্ছিল।’’ সাহায্যকারীদের কাছ থেকে আপাতত নগদে কয়েক হাজার টাকা এসেছে। তাতে খানিকটা স্বস্তি পেয়েছে কামাল পরিবার। ইতিমধ্যে এক শুভানুধ্যায়ীর মাধ্যমে ওঁদের নামে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলারও তোড়জোড় চলছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

acid attacked people
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE