Advertisement
E-Paper

রুক্ষ জমিতে ধান-পাট হটিয়ে চাষ আনারসের

আনারস চাষের জন্য ক্রমশ পরিচিত হয়ে উঠেছে শিলিগুড়ি লাগোয়া বিধাননগর। আনারস চাষে লাভ বেশি হওয়ায় গত কয়েক বছরে এই চাষে উৎসাহ বেড়েছে এতটাই যে বিধাননগর এলাকায় চাষযোগ্য জমির অভাব দেখা দিয়েছে। চাষের জন্য নতুন জায়গা খুঁজতে বিধাননগর লাগোয়া বিহারের দিকেও জমি লিজ নিয়ে চাষ করছেন কেউ কেউ। আগে যে সব জমিতে ধান বা পাট চাষ হত, সেখানে বিঘার পর বিঘা জমিতে আনারস উৎপাদন হচ্ছে।

সংগ্রাম সিংহ রায়

শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০১৫ ০২:১৮

আনারস চাষের জন্য ক্রমশ পরিচিত হয়ে উঠেছে শিলিগুড়ি লাগোয়া বিধাননগর। আনারস চাষে লাভ বেশি হওয়ায় গত কয়েক বছরে এই চাষে উৎসাহ বেড়েছে এতটাই যে বিধাননগর এলাকায় চাষযোগ্য জমির অভাব দেখা দিয়েছে। চাষের জন্য নতুন জায়গা খুঁজতে বিধাননগর লাগোয়া বিহারের দিকেও জমি লিজ নিয়ে চাষ করছেন কেউ কেউ। আগে যে সব জমিতে ধান বা পাট চাষ হত, সেখানে বিঘার পর বিঘা জমিতে আনারস উৎপাদন হচ্ছে।

কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, পাঁচ বছর আগে পর্যন্ত ৭০০-৮০০ একরে আনারস চাষ হত। চাষ করতেন হাজার খানেক চাষি। চলতি ২০১৪-১৫ মরসুমের হিসেব, চাষির সংখ্যা পাঁচ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে।

প্রধানত দু’ধরনের আনারস চাষ হয় এই এলাকায়। ‘কিং’ এবং ‘কুইন’। তবে কুইনের আকার ছোট হওয়ায় এর চাহিদা কম। তাই মূলত কিং প্রজাতির আনারসই চাষ হচ্ছে। কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বিধাননগরের প্রায় ৩ হাজার হেক্টর এলাকায় কিং আনারস চাষ হচ্ছে। আনারসগুলি এক থেকে দেড় কেজি ওজনের হয়। একটি আনারস তৈরি করতে খরচ পড়ে ৯ টাকার মতো। পাইকারি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১৮-২০ টাকায়। যা খোলা বাজারে ২৫ টাকার বেশিতে বিক্রি হচ্ছে। একটি আনারস বিক্রি করে চাষিদের গড়ে ১০ টাকা লাভ থাকছে।

আনারস চাষিদের স্থানীয় সংগঠন ‘আচাষ’-এর সম্পাদক অরুণ মণ্ডল বলেন, ‘‘এখানকার জমি রুক্ষ্ম হওয়াতে ধান, পাটের মতো চাষ এখানে ভাল হয় না। লাভ বেশি বলে আনারসই সেরা বিকল্প।’’ তিনি জানান, এক বিঘায় প্রায় চার হাজার আনারস তৈরি হওয়া সম্ভব। খড়িবাড়ি-ফাঁসিদেওয়া ব্লকের সহ-কৃষি অধিকর্তা মেহফুজ আলম বলেন, ‘‘আনারস চাষে খরচের দ্বিগুণ লাভ উৎসাহ বাড়াচ্ছে।’’

কোথায় ভাল হয় আনারস চাষ? কৃষিবিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, রুক্ষ, বালি-প্রধান মাটিতেও ভাল চাষ হয় আনারস। একটু ঢালু জমি হলে ভাল। রোদ বেশি পেলে ফলে রং ধরে ভাল। মাটি একটু আলগা করে নিতে হবে। দু’বছর পর ফসল ফলে, তাই দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা দরকার। সময় নিয়ে রোপণ করা যায়। তাই মজুর বেশি লাগে না। বৃষ্টি বেশি না হলে সেচের দরকার হতে পারে।

কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এখানকার আনারসের উৎপাদন ও সরবরাহ গোটা রাজ্যের মধ্যে এক তৃতীয়াংশ জায়গা দখল করে রেখেছে। দেশের মধ্যে দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, কর্ণাটক-সহ বিভিন্ন রাজ্যে যাচ্ছে। উত্তরববঙ্গের ব্যবসায়ী সংগঠন ফোসিনের সম্পাদক বিশ্বজিৎ দাস মনে করেন, এখানকার আনারস ঠিক মতো বিপণন করতে পারলে বিদেশেও পাঠানো সম্ভব। তিনি বলেন, ‘‘এই মুহূর্তে চায়ের পরে আনারস উত্তরবঙ্গের দ্বিতীয় অর্থকরী ফসল। ঠিক মতো এর প্রচার ও বিপণন একে এক নম্বরে নিয়ে যেতে পারে।’’

তবে চাষিদের কিছু সমস্যা এখনও থেকে যাচ্ছে। মজুত রাখার জায়গা এবং সংরক্ষণ ব্যবস্থার অভাবে বেশ কিছু ফল প্রতি বছরই নষ্ট হয়, জানালেন বিধাননগরের চাষি বিনোদ দাস। ‘‘তবে তা সত্ত্বেও চাষ থেকে যা লাভ থাকে, তাতে নতুন চাষের খরচ বাদ দিয়েও হাতে কিছু থেকে যায়।’’ একই কথা বললেন ‘ফোসিন’-এর সম্পাদক বিশ্বজিৎ দাস। তাঁর বক্তব্য, ‘‘বিপণনে ঘাটতি থাকায় লাভ কিছু কম হলেও, ধান বা পাট চাষের চাইতে আনারস অনেক লাভজনক আমাদের চাষির কাছে।’’

sangram singha roy pineapple farming siliguri adjacent areas siliguri pineapple farming
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy