জলপাইগুড়ি সফরের ৪৮ ঘণ্টা আগে সার্কিট বেঞ্চকে সবুজ সঙ্কেত দিয়ে দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বুধবার তাঁর নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার এক বৈঠকে কলকাতা হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়। মনে করা হচ্ছে, এ বারে এই সংক্রান্ত রাষ্ট্রপতির সিলমোহরও দ্রুত পড়ে যাবে। শুক্রবার ময়নাগুড়ির সভামঞ্চ থেকে এই ঘোষণা করে প্রধানমন্ত্রী লোকসভা ভোটের আবহে নতুন উত্তাপ সঞ্চার করতে পারবেন বলে মনে করছে জলপাইগুড়ির সব রাজনৈতিক শিবিরই।
উত্তাপ যে এর মধ্যেই এই জেলা সদরে লেগে গিয়েছে, তা রাতেই স্পষ্ট হয়ে যায়। যে জলপাইগুড়ির পথঘাট রাত ন’টা-সাড়ে ন’টার পরে সুনসান হয়ে যায়, সেখানে রাত দশটার পরে হঠাৎ মাইক নিয়ে বিজেপির প্রচার শুরু হয়ে যায়। জেলা বিজেপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা আর অপেক্ষা করতে রাজি নয়। তাদের আরও দাবি, শুধু এই একটি সিদ্ধান্ত জলপাইগুড়ি আসনেও বিজেপিকে অনেক কদম এগিয়ে দিল।
বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক বাপি গোস্বামী বলেন, ‘‘তৃণমূল এত দিন ধরে ভুল পদ্ধতিতে বেঞ্চ উদ্বোধন করতে চাইছিল। কেন্দ্রীয় সরকার সব সমস্যা সমাধান করে ঠিক ভাবে সার্কিট বেঞ্চ উদ্বোধনের বন্দোবস্ত করেছে।’’
তৃণমূল অবশ্য বলছে, দীর্ঘদিন ধরে আটকে যাওয়া সার্কিট বেঞ্চকে এত দূর নিয়ে এসেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই যাবতীয় কৃতিত্ব ওঁরই প্রাপ্য। জেলা সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘বেঞ্চ তো রাষ্ট্রপতির বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী হবে। যদি রাষ্ট্রপতির বিজ্ঞপ্তি জারি হয়ে থাকে, তা হলে রাজ্য সঠিক সময়ে বেঞ্চ উদ্বোধন করবে।’’
সার্কিট বেঞ্চ দাবি আদায় সমন্বয় কমিটির সম্পাদক কমলকৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সার্কিট বেঞ্চ উদ্বোধনের যে কোনও ইতিবাচক পদক্ষেপকেই স্বাগত।’’
চূড়াভাণ্ডার।
ব্লক ময়নাগুড়ি, জেলা জলপাইগুড়ি
বিশেষ আমন্ত্রিত
আলিপুরদুয়ার জেলা
আরও থাকবেন
কোচবিহার, দার্জিলিং জেলার কর্মীদের
সভা এলাকার আয়তন ৯৬ বিঘা
মূল সভামঞ্চ
৪০ ফুট চওড়া, ২৪ ফুট লম্বা
পাশেরটি
৩০ ফুট চওড়া, ২০ ফুট লম্বা
কে কোথায়
মূল মঞ্চে প্রধানমন্ত্রী। সঙ্গে দলের কেন্দ্রীয়, রাজ্য ও জেলার বাছাই করা নেতা। পাশের মঞ্চে অন্য নেতারা।
হেলিপ্যাড
মঞ্চ থেকে ১৪০ মিটার দূরে তিনটে হেলিপ্যাড। এই দুইয়ের মধ্যে তৈরি হচ্ছে গাড়ি চলাচলের রাস্তা।
নিরাপত্তা
মঞ্চের সামনে ৬০ মিটার পর্যন্ত প্রথম ব্যারিকেড তথা ডি জোন
১২০ মিটার অবধি দ্বিতীয় ডি জোন
ডি জোনে শুধু প্রধানমন্ত্রী এসপিজি
দ্বিতীয় ডি জোনের পরে ভিআইপি ব্লক
কর্মী-সমর্থকদের জন্য মোট ৬টি ব্লক
২৫০টি ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা
ভিআইপি ব্লকে পাঁচস্তরীয় তল্লাশি
কেন্দ্রীয় সরকারের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানা গিয়েছে, কলকাতা হাইকোর্টের এই সার্কিট বেঞ্চে দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি (আলিপুরদুয়ার-সহ) জেলার মামলার বিচার হবে। আলিপুরদুয়ার নতুন জেলা হয়ে গেলেও এখনও বিচারবিভাগীয় ভাগাভাগি হয়নি। তাই তাকেও জলপাইগুড়ি জেলার মধ্যেই ধরা হয়। মালদহ ও দুই দিনাজপুর এই বেঞ্চের অধীনে আসছে না।
মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই সিদ্ধান্তের খবর পাওয়ার পরে জলপাইগুড়ি শহর স্বাভাবিক ভাবেই খুশি। অনেকেই স্মৃতি রোমন্থন করছেন। বলছেন, আড়াই দশকের বেশি সময় ধরে আন্দোলন চলেছে। তার পরে এই ফল নিশ্চয়ই মিষ্টি। তবে স্থানীয় অনেকের মতে, সার্কিট বেঞ্চে যে রাজনীতির রং লেগে গিয়েছে। বিশেষ করে হাইকোর্টের মামলার পরে যখন জানা গেল, মূল ছাড়পত্র দেওয়ার ক্ষমতা রাজ্যের নয়, কেন্দ্রের, তখন থেকেই টক্করের ক্ষেত্র প্রস্তুত হচ্ছিল। উদ্বোধনের দিনক্ষণ ঠিক করেও বাতিল করতে হয়। মুখ্যমন্ত্রীও বিষয়টি নিয়ে বিশেষ কিছু বলতে চাননি তখন। তার পরে বিষয়টি হাত থেকে যাতে বেরিয়ে না যায়, সে জন্য ধর্নামঞ্চ তৈরি করে লাগাতার আন্দোলন শুরু করে তৃণমূল।