Advertisement
০৯ মে ২০২৪

পড়শিই মাদক চক্রী, অবাক মহল্লা

এক জনকে এলাকা চেনে গুঁড়ো সাবানের ব্যবসায়ী বলে। অন্য জনের পরিচিতি বৈদ্যুতিন জিনিসপত্রের মিস্ত্রি হিসেবে। হাটজনবাজার কলোনির বাসিন্দা সমীর মল্লিক আর মানিক বিশ্বাসকে আন্তর্জাতিক মাদক পাচারচক্রে জড়িত সন্দেহে দিল্লি পুলিশ গ্রেফতার করার খবর ছড়ানোর পরে, চোখ কপালে উঠেছে বীরভূমের সিউড়ি শহরের।

চক্রের চাঁই সন্দেহে ধৃত সমীর মল্লিকের বাড়ি। সিউড়ির হাটজনবাজার কলোনিতে।ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়।

চক্রের চাঁই সন্দেহে ধৃত সমীর মল্লিকের বাড়ি। সিউড়ির হাটজনবাজার কলোনিতে।ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়।

দয়াল সেনগুপ্ত
সিউড়ি শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০১৬ ০৩:৫৬
Share: Save:

এক জনকে এলাকা চেনে গুঁড়ো সাবানের ব্যবসায়ী বলে। অন্য জনের পরিচিতি বৈদ্যুতিন জিনিসপত্রের মিস্ত্রি হিসেবে। হাটজনবাজার কলোনির বাসিন্দা সমীর মল্লিক আর মানিক বিশ্বাসকে আন্তর্জাতিক মাদক পাচারচক্রে জড়িত সন্দেহে দিল্লি পুলিশ গ্রেফতার করার খবর ছড়ানোর পরে, চোখ কপালে উঠেছে বীরভূমের সিউড়ি শহরের। এলাকাবাসীর একটা বড় অংশের কথায়, ‘‘ওরা মাদক কারবারে যুক্ত, ভাবা যাচ্ছে না!’’

মালদহের ফরাক্কা লাগোয়া সাহেবগঞ্জে আদি বাড়ি সমীরদের। বাংলাদেশ থেকে এ রাজ্যে এসে ফরাক্কার চরে থাকতেন। একই চরের বাসিন্দা ছিল মানিকের পরিবারও। বুধবার সমীরের বড় দিদি ভারতী তালুকদার জানালেন, তাঁরা চার বোন, একমাত্র ভাই বছর বত্রিশের সমীর। বিয়ে হয়ে ভারতীদেবী আসেন হাটজনবাজারে। পরে তিনিই বাপেরবাড়ির লোকেদের সেখানে ডেকে নেন।

প্রায় ১৫ বছর আগে হাটজনবাজারে বাড়ি করেন সমীরের বাবা। বছর দশেক আগে সমীর সেই বাড়িতেই শুরু করেন গুঁড়ো সাবানের ব্যবসা। আগে বড় সংস্থার সাবান পাইকারি দরে কিনে এলাকায় বেচতেন। পরে নিজেই সাবান বানানো শুরু করেন। স্থানীয় সূত্রের খবর, সমীরের বাড়িতে বহিরাগত লোকজনের যাতায়াত ছিল।

ভারতীদেবীর দাবি, ‘‘ভাইয়ের বানানো সাবানের গুঁড়ো সিউড়ির বাইরের পাইকারি ব্যবসায়ীরা বাড়িতে এসে নিয়ে যেত। বাইরের লোক বলতে তারাই। সমীর নির্বিবাদী ব্যবসায়ী।’’ কিন্তু সমীর মল্লিককে যে হেরোইন পাচার চক্রের চাঁই বলে দাবি করছে দিল্লি পুলিশের স্পেশ্যাল সেল? ভারতীদেবী বলেন, ‘‘এ কথা সত্যি নয়।’’ সমীরদের বাড়িতে এ দিন ঢোকা যায়নি। আপত্তি করেন তাঁর মা এবং ছোট বোন (‌কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণারত)। তাঁরা জানান, সমীরের দুই সন্তান এবং স্ত্রী বাড়িতে নেই। বলেন, ‘‘খুব অশান্তিতে আছি। কিছু বলব না।’’

সমীরদের বাড়ির ডান দিক ঘেঁষা রাস্তাটা ধরে কিছুটা এগোলেই সাড়ে ছ’কাঠা জমিতে টিনের ছাউনি দেওয়া বাড়ি বছর চব্বিশের মানিক বিশ্বাসের। মানিকের মা যমুনাদেবী জানান, টোস্টার, মাইক্রোওয়েভ আভেনের মিস্ত্রি হিসেবে কলকাতা ও বহরমপুরের দু’টি কোম্পানির হয়ে কাজ করতেন তাঁর ছেলে। দিন দশেক হল তিনি বাড়ি ফেরেননি। সঙ্গে মোবাইল থাকলেও কোনও ভাবেই তাঁর সঙ্গে যোগাযোগও করতে পারেনি পরিবার। যমুনাদেবীর কথায়, ‘‘মাঝেমধ্যে ছেলে কাজে বাইরে যেত। কিন্তু টানা দিন দশেক ওর খবর না পেয়ে চিন্তায় ছিলাম। পরে শুনলাম, ও দিল্লি পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে। কী ভাবে, কী হল বুঝতে পারছি না!’’ পড়শি হিসেবে পরিচিতি ছাড়া সমীর মল্লিকের সঙ্গে মানিকের কোনও যোগাযোগ ছিল না বলেই দাবি যমুনাদেবীর।

স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ বলছেন, মানিকের সঙ্গে সমীরকে ঘোরাফেরা করতে দেখা যেত। কিন্তু এলাকার বাসিন্দা তথা কেন্দুয়া পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য দিলীপ মজুমদার বলেন, ‘‘দু’টো ছেলেকেই অনেক দিন চিনি। দু’জনেরই ভদ্র ব্যবহার। ওদের দেখে সন্দেহ করার কারণ আছে বলে কখনও মনে হয়নি।’’ এলাকা ঘুরে এ দিন শোনা গিয়েছে, বিধানসভা ভোটের আগে সমীর শাসকদলের হয়ে মোটা টাকা খরচ করেছিলেন। সে জন্যই কি এই ‘সার্টিফিকেট’?

দিলীপবাবুর জবাব, ‘‘ড্রাগ পাচারে জড়িতদের আড়াল করার মতো কাজ তৃণমূল করে না। ওরা যদি জড়িত হয়, তা হলে আদালত শাস্তি দিক।’’

হাটজনবাজারের বাসিন্দা সরকারি কর্মী, কলেজপড়ুয়া, শিক্ষকদের প্রশ্ন, ‘‘সমীরকে চাঁই বলে দাবি করছে পুলিশ। মানিককে বলছে পাচারকারী। ওরা সিউড়ি থেকে দীর্ঘদিন নির্বিঘ্নে ড্রাগ পাচার করে গেল, আর জেলা পুলিশ কিছু জানতে পারল না—এটা কী করে হয়!’’ বীরভূম পুলিশ কি তেমন কিছু আদৌ জানত? জেলার পুলিশ সুপার মুকেশ কুমারকে একাধিক বার ফোন করেও এ প্রশ্নের জবাব পাওয়া যায়নি। জবাব আসেনি ‘হোয়াটস অ্যাপ’ মেসেজেরও।

নিষ্ক্রিয় পুলিশ

দিল্লি পুলিশ মাদক-সহ মালদহের বাসিন্দা গণেশ হালদার ও মানিক বিশ্বাসকে গ্রেফতার করার পরেও জেলা পুলিশ সক্রিয় হয়নি বলে অভিযোগ। ধৃতদের কোনও পরিচিতের সঙ্গে মাদক চক্রের যোগ রয়েছ কিনা পুলিশ তারও খোঁজ নেয়নি বলে অভিযোগ। এতে পুলিশের ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে। অভিযোগ, পুলিশি উদাসীনতার জন্যই জেলা থেকে ভিন রাজ্যে পাচার হচ্ছে মাদক। জেলা পুলিশ জানিয়েছে দিল্লির তরফে তাদের সরকারি ভাবে কিছুই জানানো হয়নি। যোগাযোগ করলে খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Detergent Neighbour Drug trafficin
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE