কেএলও-র প্রধান জীবন সিংহ। ছবি সংগৃহীত।
উত্তরবঙ্গে পৃথক রাজ্যের দাবিতে উস্কানি দেওয়া, পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে নানা ধরনের মন্তব্যের জন্য কামতাপুরী লিবারেশন অর্গানাইজেশন বা কেএলও-র প্রধান জীবন সিংহের বিরুদ্ধে ইউএপিএ, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র-সহ বিভিন্ন ধারায় মামলা দায়ের করল রাজ্য পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)। বিচ্ছিন্নতাবাদী জঙ্গি নেতা জীবন শনিবার একটি ভিডিয়ো বার্তায় (আনন্দবাজার পত্রিকা যার সত্যতা যাচাই করেনি) বলেছিলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘বহিরাগত’; অবৈধ ভাবে দখলদারি চালাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার; পৃথক রাজ্যের দাবিতে লড়াই করতে তাঁদের আপত্তি নেই ইত্যাদি। সেই বার্তার পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ শনিবার রাতেই স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে বিধাননগর কমিশনারেটের ইলেকট্রনিক কমপ্লেক্স থানায় ওই মামলা রুজু করে।
পুলিশি সূত্রের খবর, শনিবার বিকেলে প্রথম ওই ভিডিয়োটি নজরে আসে গোয়েন্দাদের। তাতে একাধিক বার মুখ্যমন্ত্রীকে ‘বহিরাগত’ বলা হয়েছে এবং উত্তরবঙ্গে দখলদারি চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। বিজেপি সাংসদ ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জন বার্লা পৃথক রাজ্যের যে-দাবি তুলেছেন, তা সমর্থন করেছেন জঙ্গি নেতা জীবন। ভিডিয়োয় তাঁর দাবি, পৃথক রাজ্য গড়া হলে ‘বহিরাগত সরকারের নির্যাতন’ থেকে উত্তরবঙ্গের বাসিন্দারা মুক্তি পাবেন।
গোপন ডেরা থেকে ভিডিয়ো বার্তায় জীবনের মন্তব্য, ‘এই এলাকা কখনও বঙ্গের অংশ ছিল না। কোচ-কামতা আলাদা রাষ্ট্র ছিল। পরে ভারত-ভুক্তি চুক্তি অনুসারে কোচবিহার ভারতের অংশ হয়। সেই হিসেবে এটা ‘গ’ শ্রেণির রাজ্য হবে।’ ওই বার্তায় তিনি আরও দাবি করেন, পৃথক রাজ্য গঠন করা হবে, নাকি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল, ভারত সরকার ও কোচ-কামতা জনগণই সেটা বুঝবেন। তাতে হস্তক্ষেপের অধিকার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেই। বার্লা পৃথক রাজ্য গঠনের ‘উচিত কথা’ বলার জন্য ‘ওরা (মমতার সরকার) ক্ষুব্ধ হয়েছে’ বলেও মন্তব্য করেছেন জীবন। তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘প্রয়োজনে কোচ-কামতাপুরের লক্ষ লক্ষ বাসিন্দা জীবন উৎসর্গ করবেন, কিন্তু এই মাটিকে বঙ্গ হিসেবে মেনে নেওয়া হবে না। এই যুদ্ধে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন, যে-কোনও অশুভ শক্তি আমাদের পথে দাঁড়ালে ছারখার করে দেব।’
পৃথক উত্তরবঙ্গ রাজ্যের দাবি ওঠার সঙ্গে সঙ্গে এই নিয়ে তিন বার ভিডিয়ো বার্তায় নিজের দাবি জানালেন দীর্ঘদিন ধরে লুকিয়ে থাকা জীবন। গোয়েন্দাদের অনুমান, উত্তর-পূর্ব ভারতের কোনও গোপন আস্তানা থেকে এই ধরনের বার্তা দিয়ে নিজের অস্তিত্বের কথা জানাচ্ছেন জীবন। পৃথক উত্তরবঙ্গ রাজ্যের দাবি সামনে রেখে কোচ-কামতাপুরের কথা বলছেন তিনি। যা থেকে গোয়েন্দারা মনে করছেন, নতুন করে এ রাজ্যে সংগঠন সাজাতে চাইছেন ওই নেতা।
২০০৩ সালের ‘অপারেশন ফ্লাশআউট’-এর পরে এ রাজ্যে কেএলও আধিপত্য বা কার্যকলাপ কার্যত শূন্য হয়ে যায়। সঙ্গীদের নিয়ে জীবন আশ্রয় নেন মায়ানমার ও বাংলাদেশে। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, কেএলও পশ্চিমবঙ্গে নতুন করে নিজেদের প্ৰভাব বিস্তার করতে পৃথক রাজ্যের দাবিকে সামনে রেখে আবার লোক নিয়োগের কাজ শুরু করেছে।
রাজ্য পুলিশের এক কর্তা জানান, জীবন কোথা থেকে এই ভিডিয়ো বার্তা দিচ্ছেন, তা জানার চেষ্টা চলছে। কোচবিহারের পুলিশ সুপার কে কান্নন বলেন, “জেলার সব থানাকেই সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy