এফআইআর-এ কিশোরীর বিকৃত নাম লেখার প্রতিবাদে মুচিপাড়া থানার বাইরে বিক্ষোভ। সোমবার। নিজস্ব চিত্র
নারীদিবসকে মনে রেখে পথে নেমে মিছিল করবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ রাজ্যের পুলিশমন্ত্রী তিনি। কিন্তু এফআইআরে কিশোরীর নাম ‘ধর্ষিতা চক্রবর্তী’ লিখে ফেলার ঘটনায় পুলিশমন্ত্রী বা তাঁর দফতরের এখনও অবধি কোনও হেলদোল নেই। খবরটি প্রকাশিত হওয়ার ৪৮ ঘণ্টা পরেও পুলিশ-প্রশাসনের কর্তারা ছিটেফোঁটা দুঃখপ্রকাশের পথে হাঁটেননি।
অভিযুক্ত সাব-ইনস্পেক্টর অতনু পাণিগ্রাহী যেমন বলে চলেছেন, নিয়ম মেনে অভিযোগপত্রটি হুবহু এফআইআরে তুলে দিয়ে তিনি কোনও অন্যায় করেননি। থানা স্তরে তাঁর বেশ কিছু সহকর্মী থেকে শুরু করে লালবাজারের শীর্ষকর্তারাও খাতায়-কলমে সেই অবস্থানই বজায় রাখছেন। সোমবার রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব মলয় দে থেকে শুরু করে কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার, কেউই এ বিষয়ে কিছু বলতে চাননি। তাঁদের সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও সাড়া মেলেনি। লালবাজারে সাংবাদিকদের সঙ্গে বৈঠকে যুগ্ম কমিশনার (সদর) সুপ্রতিম সরকারের মুখেও কুলুপ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক লালবাজারের এক শীর্ষকর্তা তো অতনুবাবুকে কার্যত সমর্থন জানিয়েই দাবি করলেন, ‘‘এফআইআরে ধর্ষিতা লিখে ফেলা কোনও গর্হিত অপরাধ নয়। বড়জোর ভুল বলা যেতে পারে।’’ ওই পুলিশকর্তা বলেন, অভিযোগপত্রে যা লেখা আছে সাব-ইনস্পেক্টর তা হুবহু লিখতেই পারেন। তাঁর কথায়, ‘‘অভিযোগপত্রে যা লেখা আছে সেটাই এফআইআরে লিখতে হয়। পরে না-হয় তিনি তদন্ত করে দেখবেন, পুরোটা ঠিক কিনা।’’
রাজ্য মহিলা কমিশন কিন্তু গোটা ঘটনায় রীতিমতো ক্ষুব্ধ। কেন এমন হল, লালবাজারের কর্তাদের কাছে জানতে চেয়েছে তারা। আজ, মঙ্গলবার পুলিশের তরফে কমিশনকে রিপোর্ট জমা দেওয়ার কথা। লালবাজার সূত্রের খবর, কলকাতা পুলিশের সেন্ট্রাল ডিভিশনের এক অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনারকে দিয়ে ঘটনাটির অভ্যন্তরীণ তদন্ত করাচ্ছে পুলিশ। সেই রিপোর্টই মহিলা কমিশনকে দেওয়া হবে। এখনও পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশ অফিসারকে কোনও রকম শাস্তি দেওয়ার পক্ষপাতী নয় লালবাজার। কলকাতা পুলিশের উঁচুতলার এক আইপিএস-কর্তা এ দিন বলেন, ‘‘ওই সাব-ইনস্পেক্টরকে বড়জোর ভর্ৎসনা করা যেতে পারে। অপরাধ এর বেশি গুরুতর নয়।’’
প্রাক্তন পুলিশ কর্তাদের অনেকে যদিও এই বক্তব্যের সঙ্গে আদৌ একমত নন। কিশোরীর নাম ‘ধর্ষিতা’ লেখার অপরাধে সংশ্লিষ্ট পুলিশ অফিসারকে সাসপেন্ড করা উচিত ছিল বলে মনে করছেন অনেকেই। প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার প্রসূন মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘একেবারে মাছি-মারা কেরানির কাজ। অভিযোগকারীর চিঠি পড়ে কারও নাম ‘ধর্ষিতা’ মনে হলে একটুও খটকা লাগবে না!’’ আর এক অবসরপ্রাপ্ত আইপিএস সন্ধি মুখোপাধ্যায়ও মনে করছেন, ‘‘যা ঘটেছে, তাতে পুলিশের ন্যূনতম সংবেদনশীলতার খামতি রয়েছে।’’ তাঁর মতে, এফআইআরে কোনও নাম লিখতে ভুল হলে আদালতে বিষয়টি জানিয়ে ভুল শুধরে নেওয়ার সুযোগ থাকে।
অথচ যার ‘ধর্ষিতা’ নামকরণ নিয়ে বিভ্রাট, সেই মেয়েটির বাবার দাবি, ভুলটা পুলিশকে জানানোর পরে তদন্তকারী অফিসার অতনুবাবু তাঁকে ‘তোর মেয়ের একটা নতুন নাম দিলাম’ বলে বিদ্রূপ করেছিলেন। অতনুবাবুকে এ দিন প্রশ্ন করা হয়, তিনি নামের ভুল শুধরে নিতে আদালতে বিষয়টি জানিয়েছিলেন কি না! তাতে ওই পুলিশ অফিসার জবাব দেন, ‘‘মাসখানেক আগের ঘটনা! ঠিক মনে নেই। তা ছাড়া আমি এখন হরিবেদবপুর থানায় বদলি।’’
রাজ্য মহিলা কমিশন থেকে শুরু করে বিভিন্ন গণসংগঠন এই গোটা প্রক্রিয়ায় পুলিশের তরফে ‘নিষ্ঠুর রসিকতা’র ছাপ খুঁজে পাচ্ছেন। এ দিন সিপিআই (এমএল)-এর শাখা সংগঠন এআইপিডব্লিউএ, গণতান্ত্রিক অধিকাররক্ষা সমিতি ও যৌন হিংসা-বিরোধী একটি মঞ্চ একযোগে মুচিপাড়া থানা ঘেরাও করেছিল। সংশ্লিষ্ট পুলিশ অফিসারের ক্ষমাপ্রার্থনা ও শাস্তির দাবিতে তাঁরা স্মারকলিপি জমা দেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy