Advertisement
০৭ মে ২০২৪

দাপট থাকলেও শব্দাসুরের তীব্রতা কমল অনেকটাই

রবিবার সন্ধ্যায় লালবাজারের এক শীর্ষকর্তা আক্ষেপ করছিলেন, ‘‘সব জায়গায় আমাদের ফোর্স শব্দবাজি ঠেকাতে সমান ভাবে কাজ করল না। করলে শব্দদানবকে আরও বেশি আটকে দিতে পারতাম।’’

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:৪৮
Share: Save:

রবিবার সন্ধ্যায় লালবাজারের এক শীর্ষকর্তা আক্ষেপ করছিলেন, ‘‘সব জায়গায় আমাদের ফোর্স শব্দবাজি ঠেকাতে সমান ভাবে কাজ করল না। করলে শব্দদানবকে আরও বেশি আটকে দিতে পারতাম।’’

পুলিশের শীর্ষকর্তা যখন লালবাজারে বসে ওই আক্ষেপ করছেন, তার ঘণ্টা দেড়েক আগে থেকেই বৌবাজার ও হেয়ার স্ট্রিট থানার আশপাশে বোতল থেকে বেরিয়ে প্রবল দৌরাত্ম্য শুরু করেছে শব্দদৈত্য। চকলেট বোমা, দোদমা, শেল-এর মতো মামুলি শব্দবাজির সঙ্গে এমন বোমাও ফাটছে, যার রেশ থেকে যাচ্ছে অনেক ক্ষণ।

অথচ গড়িয়াহাট, বালিগঞ্জ, টালিগঞ্জ, রিজেন্ট পার্ক, লেক এলাকার বিস্তীর্ণ তল্লাট তখন তুলনায় শান্ত। বাসিন্দাদের বক্তব্য, শব্দবাজি একেবারেই ফাটছে না, এমন নয়। তবে তুলনায় কম। গড়িয়াহাটের বাসিন্দা, কলেজছাত্রী ঋতুপর্ণা দাসের কথায়, ‘‘গত কয়েক বছর কালীপুজো আর দীপাবলিতে সন্ধ্যা থেকে প্রায় মাঝরাত পর্যন্ত শব্দবাজি ফেটেছে। এ বার দু’দিনই রাত সাড়ে ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত সেই উৎপাত ছিল। তার আগে-পরে শান্ত।’’

পরিবেশকর্মীদের বক্তব্য, শব্দবাজি একেবারেই ফাটবে না, এমনটা কেউই ভাবেননি। তা সত্ত্বেও আগের বছরগুলোয় যতটা এলাকা জুড়ে, যত বেশি সময় ধরে ও যে ভাবে নাগাড়ে বাজি ফাটত, সেটা এ বার হয়নি। মোটামুটি গোটা রাজ্য জুড়ে ছবিটা এমনই। রবিবার রাতে চন্দননগরের অবাঙালি প্রভাবিত তল্লাটগুলোয় নাগাড়ে শব্দবাজি ফাটলেও বাঙালি পাড়া তুলনায় শান্ত ছিল। আবার ব্যতিক্রমও আছে। যেমন, শিলিগুড়ি। শনিবার তা-ও কিছুটা রাশ ছিল। রবিবার সন্ধ্যা হতেই এমন শব্দ-তাণ্ডব শুরু হয় যে, সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে যান।

তবু এ বছরের পরিস্থিতি দেখে রাজ্য পুলিশের এক কর্তার আশা, ‘‘এখন থেকেই সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিতে হবে। তা হলে আগামী বছর থেকে শব্দদৈত্যকে আমরা অনেক বেশি নিয়ন্ত্রণ করতে পারব।’’

নজরদারির চাপে বহু এলাকায় কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও খাস কলকাতার কিছু কিছু জায়গায় ছিপি একটু আলগা হতেই শব্দদৈত্য কিন্তু পুরোদমে তাণ্ডব চালিয়েছে। চাঁদনি চক ও আশপাশের তল্লাটে শনিবার, কালীপুজোর দিন সে তেমন সক্রিয় ছিল না। কিন্তু দীপাবলিতে, ওই তল্লাটে সে বেরিয়ে পড়ে সন্ধ্যা ৬টাতেই! রবিবার দুপুর থেকে সে আভাসও ছিল, যখন দু’-একটা করে নিষিদ্ধ বাজি ফাটতে শুরু করে। অনেকেই মনে করছেন, তখনই পুলিশ সক্রিয় হলে হয়তো ওই সব তল্লাটে পুরোপুরি বাগে আনা যেত শব্দদৈত্যকে।

শনিবার বিকেল থেকে পুলিশের এমন সক্রিয়তার কিছু নমুনাও দেখা গিয়েছে। যেমন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু রোডে, রানিকুঠি মোড়ে। জংলা পোশাক পরা, ইনস্যাস হাতে কমব্যাট ফোর্স-এর জওয়ান। সঙ্গে সাদা পোশাকের দু’জন কনস্টেবল। জওয়ান অটোরিকশা, গাড়ি দাঁড় করাচ্ছেন, আর ওই দুই কনস্টেবল স্বয়ংক্রিয় রাইফেলের নলের সামনে যাত্রীদের দাঁড় করিয়ে তল্লাশি করে দেখছেন, কেউ শব্দবাজি নিয়ে যাচ্ছেন কি না। এ দিন দুপুরেও ওই এলাকার অশোকনগরে পুলিশের টহলদার গাড়ি দেখা গিয়েছে।

পরিবেশকর্মী ও পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের অবসরপ্রাপ্ত মুখ্য আইন আধিকারিক বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘সরকারি নির্দেশ কার্যকর করতে গেলে ভয় পাইয়ে দেওয়াটা কোনও কোনও ক্ষেত্রে জরুরি। বিশেষ করে শব্দবাজির ক্ষেত্রে। যে সব জায়গায় এটা করা হয়েছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সাফল্য মিলেছে এ বার।’’

সল্টলেকের পূর্বাচলে শব্দবাজির তাণ্ডব ঠেকাতে শনিবার রাতে পুলিশ মাইকে প্রচার করে সাবধান করে। এর ফলও মিলেছে। সল্টলেকের বাসিন্দাদের একাংশ জানাচ্ছেন, অন্যান্য বার এই এলাকায় যেমন উৎপাত হয়, সেই তুলনায় এ বার ‘নিস্তব্ধ’!

যদিও রবিবার রাত সাড়ে আটটার পরে সল্টলেকের ১ থেকে ৩ নম্বর সেক্টরের আট-দশটি ব্লকে শব্দবাজির দৌরাত্ম্য শুরু হয়। তবে পুলিশ ও বাসিন্দাদের বক্তব্য, আগের বছরগুলোর তুলনায় এটা কিছুই না।

রাজ্যের আর এক পরিবেশকর্মী নব দত্ত-র আবার অভিযোগ, স্থানীয় থানার পুলিশ তেমন সক্রিয় হয়নি বলেই রবিবার সন্ধের পর থেকে যাদবপুর, বেহালা, কসবা, হালতু, গাঙ্গুলিবাগান, বেলেঘাটায় তাণ্ডব চালিয়েছে শব্দদৈত্য। এর মধ্যে বেহালায় সব চেয়ে বেশি।

কলকাতা এবং শহরতলি মিলিয়ে সবাইকে অবশ্য টেক্কা দিয়েছে বাগুইআটি। শনিবারের পরে রবিবারও। বাগুইআটির জগৎপুরে শনিবার রাত ১১টা নাগাদ শব্দবাজি আটকাতে গিয়ে বাঁশপেটা খেয়েছেন এক এসআই ও এক এএসআই। পুলিশ পরে ছ’জনকে গ্রেফতার করে। লেকটাউন, দক্ষিণদাড়ি, দমদম পার্ক, বাঙুর, কেষ্টপুরের খালপাড়েও বিপুল শব্দবাজি ফেটেছে।

এ বার কালীপুজোর দিন দশেক আগে থেকে শব্দবাজির বিরুদ্ধে পুলিশ-প্রশাসনের প্রচার সাধারণ মানুষের একাংশকে সচেতন করেছে বলে মনে করছেন পরিবেশকর্মীরা। তাতে অনেকটা কাজ হয়েছে। বিশ্বজিৎবাবুর মতে, ‘‘এ বার খোদ পরিবেশমন্ত্রী বার্তা দিয়েছেন, শব্দবাজি ব্যবহার করলে কঠোর আইনি ব্যবস্থার মুখে পড়তে হবে। খোদ মন্ত্রী এ কথা বলার পর ধরে নিতে হয়, এটা রাজনৈতিক বার্তাও। না হলে এত পরে মাঠে নেমেও এতটা কাজ হওয়ার কথা কিন্তু ছিল না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

sound crackers
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE