Advertisement
০৩ মে ২০২৪

মালদহ-তদন্তেও পুলিশি গাফিলতির অভিযোগ

বর্ধমানের পরে মালদহেও বিস্ফোরণের পরে পুলিশের বিরুদ্ধে তদন্তে গাফিলতির অভিযোগ উঠল। রবিবার দুপুরে মালদহের বৈষ্ণবনগর থানা থেকে বড় জোর ৬০০ মিটার দূরে বাজারতি গ্রামে কামাল শেখ নামে এক তৃণমূলকর্মীর বাড়িতে মজুত বোমা, বিস্ফোরক ফেটে কেঁপে ওঠে চারদিক। বাসিন্দারা থানায় খবর দেন। কিন্তু পুলিশ পৌঁছতে বিকেল গড়িয়ে যায়। ইতিমধ্যে বিস্ফোরণে আহত ও এই ঘটনায় অভিযুক্তেরা সকলেই পালিয়ে যায় বলে বাসিন্দাদের একাংশের দাবি।

রবিবার মালদহে এখানেই বিস্ফোরণ ঘটে। সোমবার সকালে ইট সাজিয়ে প্রাচীর তুলে অভিযুক্তেরা পালিয়ে যায় বলে অভিযোগ। বুজিয়ে দেওয়া হয় গর্তও। সোমবার দুপুরে সিভিক ভলান্টিয়াররা গিয়ে ফের গর্ত খুঁড়ে সাজানো প্রাচীর ভেঙে দেন। ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায়

রবিবার মালদহে এখানেই বিস্ফোরণ ঘটে। সোমবার সকালে ইট সাজিয়ে প্রাচীর তুলে অভিযুক্তেরা পালিয়ে যায় বলে অভিযোগ। বুজিয়ে দেওয়া হয় গর্তও। সোমবার দুপুরে সিভিক ভলান্টিয়াররা গিয়ে ফের গর্ত খুঁড়ে সাজানো প্রাচীর ভেঙে দেন। ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায়

পীযূষ সাহা
বৈষ্ণবনগর শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৪ ০২:৫৯
Share: Save:

বর্ধমানের পরে মালদহেও বিস্ফোরণের পরে পুলিশের বিরুদ্ধে তদন্তে গাফিলতির অভিযোগ উঠল। রবিবার দুপুরে মালদহের বৈষ্ণবনগর থানা থেকে বড় জোর ৬০০ মিটার দূরে বাজারতি গ্রামে কামাল শেখ নামে এক তৃণমূলকর্মীর বাড়িতে মজুত বোমা, বিস্ফোরক ফেটে কেঁপে ওঠে চারদিক। বাসিন্দারা থানায় খবর দেন। কিন্তু পুলিশ পৌঁছতে বিকেল গড়িয়ে যায়। ইতিমধ্যে বিস্ফোরণে আহত ও এই ঘটনায় অভিযুক্তেরা সকলেই পালিয়ে যায় বলে বাসিন্দাদের একাংশের দাবি। তাঁদের অভিযোগ, পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার সুযোগেই বিস্ফোরণের পরে রাতেই ঘটনাস্থলে গিয়ে গর্ত বুজিয়ে, জিনিসপত্র নিয়ে দুষ্কৃতীরা গা ঢাকা দিয়েছে।

ওই এলাকার কংগ্রেস বিধায়ক ইশা খান চৌধুরীর অভিযোগ, সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে না পৌঁছে দুষ্কৃতীদের একরকম সাহায্যই করেছে পুলিশ। তিনি বলেন, “বাসিন্দাদের কয়েকজন যা বলেছেন, তা সত্যি হলে পুলিশের মদতেই রাতের অন্ধকারে প্রমাণ লোপাটের সাহস পয়েছে দুষ্কৃতীরা।” সিপিএমের জেলা সম্পাদক অম্বর মিত্র বলেন, “বর্ধমানের মতোই মালদহের জেলা পুলিশ সুপারও বৈষ্ণবনগরের বিস্ফোরণ কাণ্ড ধামাচাপা দিতে চাইছেন।” এলাকার তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য মনিরুল শেখও পুলিশের ভূমিকায় সন্দিহান। তাঁর দাবি, ঘটনার পরে রক্তাক্ত কয়েকজনকে এলাকা থেকে বার করে নিয়ে যেতে দেখা গিয়েছে কিন্তু কেউ ধরা পড়েনি।

কয়েকজন বাসিন্দা জানান, পুলিশ ছিল না বলেই রাতের অন্ধকারে গর্ত বোজানোর চেষ্টা করে দুষ্কৃতীরা। ভেঙে পড়া পাঁচিলও ইট সাজিয়ে মেরামত করার চেষ্টা হয়। বাড়ির ভিতরে রক্তের দাগও মুছে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, সোমবার সিভিক ভলান্টিয়ারদের পাঠিয়ে ফের কামাল শেখের বাড়ির বিস্ফোরণস্থলের মাটি তুলে ফেলে গর্তটি বার করতে চেষ্টা করেছে পুলিশ। পাঁচিলটিও ফের ভেঙে দেয় সিভিক ভলান্টিয়াররা। লাঠি হাতে জনা দশেক সিভিক ভলান্টিয়ার বাড়ির সামনে বসেছিলেন সারা দিন। কিন্তু বিস্ফোরণ হলে সিআইডি-র বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞেরা না যাওয়া পর্যন্ত এলাকাটি ঘিরে রাখার দায়িত্ব পুলিশের। তা হল না কেন?

মালদহের এসপি প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ের যুক্তি, “সারাক্ষণ বিস্ফোরণ স্থল পাহারা দেওয়া সম্ভব নয়। বিস্ফোরণ স্থলের ছবি তুলে রাখা হয়েছে।” সেই সঙ্গেই তাঁর দাবি, “তা ছাড়া বিস্ফোরণে কেউ হতাহত হননি।” এর পরে এসপি-র দাবি, “হতাহতের নাম কেউ জানলে জানান। পুলিশ তাদের খুঁজে বের করবে।” পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত ভাবেই এই ঘটনায় মামলা করেছে। তবে কামাল পলাতক। তাঁর স্ত্রীকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।

এই অবস্থায়, বর্ধমানের মতো মালদহেও পুলিশের পাশে দাঁড়িয়েছেন তৃণমূলের জেলা স্তরের নেতৃত্ব। এক মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু চৌধুরীর প্রতিক্রিয়া, “পুলিশ ঠিক পথেই চলছে।” অভিযুক্ত কামালকে তাঁরই আত্মীয়েরা মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্রের অনুগামী বলে দাবি করেছেন। সাবিত্রীদেবীর অবশ্য বক্তব্য, “কামাল আমাদের দলের কেউ না। ও কংগ্রেসের সমাজবিরোধী।” কংগ্রেস সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

এ নিয়ে তৃণমূলের অন্দরেও বিতর্ক শুরু হয়েছে। দলীয় সূত্রে খবর, জেলা তৃণমূল সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেনের অনুগামী বর্তমানে বীরনগর ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য মনিরুল শেখের সঙ্গে কামাল শেখের বিরোধ প্রায় এক বছরের। মনিরুলের সন্দেহ, তাঁকে জব্দ করতেই কামাল বোমা বানিয়েছিলেন, তড়িঘড়ি তা সরাতে গিয়েই বিপত্তি ঘটেছে। মোয়াজ্জেম দাবি করেছেন, “বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় যুক্ত সকলকে গ্রেফতার করা উচিত।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE