সিমলাপালের আশ্রমে যৌন নিগ্রহের ঘটনায় চার্জশিট জমা দিল পুলিশ। ঘটনার ৮৬ দিনের মাথায় মঙ্গলবার মঙ্গলবার বাঁকুড়ার বিশেষ আদালতে চার্জশিট জমা দেয় পুলিশ। এতে মূল অভিযুক্তের জামিন আটকে দ্রুত বিচারপ্রক্রিয়া শেষ হবে বলেই মত আইনজীবীদের।
চলতি ফেব্রুয়ারিতে সিমলাপালের ওই আশ্রমে আবাসিক পড়ুয়াদের যৌন নিগ্রহের অভিযোগ ওঠে। ঘটনায় গ্রেফতার হন আশ্রমের তিন কর্মকর্তা দয়ানন্দ ওরফে দিনু মহারাজ, অজয় মহারাজ ও শঙ্কর মহারাজ। ধৃতদের মধ্যে অজয় মহারাজ ও শঙ্কর মহারাজ জামিন পেয়ে গেলেও দয়ানন্দ মহারাজ জামিন পাননি। ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসতেই জানা যায়, এত দিন প্রশাসনিক কোনও অনুমতি ছাড়াই ওই আবাসিক আশ্রম চালানো হচ্ছিল। শুধু তাই নয়, সরকারি নানা সুযোগ সুবিধাও পেয়েছিল আশ্রমটি। রাজ্যের দুই বিদায়ী মন্ত্রী
সুকুমার হাঁসদা ও শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ওই আশ্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন।
বাঁকুড়া কোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটর রীনা চক্রবর্তী জানান, চার্জশিটে দিনু মহারাজের পাশাপাশি ওই আশ্রমের শিক্ষক বিভাস মাহাতো ও জিতেন্দ্রনাথ মাহাতোর বিরুদ্ধে আবাসিক ছেলেদের মারধর ও জামিন-অযোগ্য ধারায় শিশুদের যৌন নিগ্রহের অভিযোগও এনেছে পুলিশ। এ ছাড়া, অজয় ও শঙ্কর মহারাজের উপরেও আবাসিকদের মারধরের অভিযোগ রয়েছে। তবে, এই ধারা জামিনযোগ্য। দিনু মহারাজ গ্রেফতার হলেও বিভাস ও জিতেন্দ্রনাথ ফেরার। রীনাদেবী বলেন, “দ্রুত চার্জশিট জমা পড়ায় আবাসিকদের উপর যৌন নির্যাতন চালানোয় অন্যতম মূল অভিযুক্ত দিনু মহারাজের জামিন আটকানো সম্ভব হবে। এবং বিচারপ্রক্রিয়াও নিষ্পত্তি হওয়া সম্ভব।’’
প্রশাসনিক মহল ও এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছিল, ২০০২ সাল থেকে সিমলাপাল থানার আমডাঙা গ্রামে ‘আমডাঙা যুগাচার্য বিবেকানন্দ সেবা সমিতি’ নামের ওই আশ্রম চালু হয়। গ্রামবাসীদের একাংশ জানান, প্রথমে এলাকায় গোশালা ও পশু চিকিৎসালয় গড়া হবে বলে গ্রামবাসীদের জমি দান করতে বলেন আশ্রম কর্তৃপক্ষ। কিন্তু, জমি পেয়ে গোশালা না গড়ে আশ্রম ও কোচিং সেন্টার চালু করা হয়। জেলায় বিভিন্ন এলাকায় ২৩টি কোচিং সেন্টার গড়ে তুলেছিল ওই সংস্থা। সেখানে বিনামূল্যেই ছাত্রছাত্রীদের পড়ানো হত। গরিব পড়ুয়াদের বিনামূল্যে থাকার ব্যবস্থা করা হবে জানিয়ে আশ্রমের আবাসনে নিয়ে আসা হত। আমডাঙার এই আবাসনেই ঝাড়খণ্ড-সহ এ রাজ্যের নানা প্রান্তের ৫৩ জন ছাত্র থাকত। আমডাঙা থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে একটি ছাত্রীদের আবাসনও ছিল এই সংস্থার। সেখানে ন’জন ছাত্রী ছিল। এ ছাড়া রাইপুরেও একটি আবাসন গড়েছিল সংস্থাটি। সেখানেও বেশ কিছু ছাত্রকে রাখা হত বলে প্রশাসনিক আধিকারিকেরা জানিয়েছেন। যৌন নিগ্রহের অভিযোগ ওঠার পর প্রশাসনিক ভাবে সংস্থার সবকটি আশ্রমকেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ও ছাত্রছাত্রীদের উদ্ধার করে হোমে পাঠানো হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy