Advertisement
E-Paper

শুভা-প্রশ্নেও কুণালের কথা চাপা দিতে পুলিশের বাদ্যি

মুখ্যমন্ত্রী কিংবা শাসক দলের নেতা নয়। এ বার কুণালের মুখে মমতা-ঘনিষ্ঠ শিল্পী শুভাপ্রসন্নর নাম আটকাতেও তৎপর পুলিশ! বৃহস্পতিবার সারদা ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলসের মামলায় নগর দায়রা আদালতে হাজির করানো হয়েছিল সাসপেন্ড হওয়া তৃণমূল সাংসদ কুণাল ঘোষকে। আদালত লক-আপ থেকে বেরিয়ে জেলে যাওয়ার জন্য গাড়িতে ওঠার মুখে তাঁকে শুভাপ্রসন্নর আত্মগোপন করা নিয়ে প্রশ্ন করা হয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:৪৫
ব্যাঙ্কশাল কোর্টে দেবযানী মুখোপাধ্যায়, সুদীপ্ত সেন এবং কুণাল ঘোষ। বৃহস্পতিবার বিশ্বনাথ বণিকের তোলা ছবি।

ব্যাঙ্কশাল কোর্টে দেবযানী মুখোপাধ্যায়, সুদীপ্ত সেন এবং কুণাল ঘোষ। বৃহস্পতিবার বিশ্বনাথ বণিকের তোলা ছবি।

মুখ্যমন্ত্রী কিংবা শাসক দলের নেতা নয়। এ বার কুণালের মুখে মমতা-ঘনিষ্ঠ শিল্পী শুভাপ্রসন্নর নাম আটকাতেও তৎপর পুলিশ!

বৃহস্পতিবার সারদা ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলসের মামলায় নগর দায়রা আদালতে হাজির করানো হয়েছিল সাসপেন্ড হওয়া তৃণমূল সাংসদ কুণাল ঘোষকে। আদালত লক-আপ থেকে বেরিয়ে জেলে যাওয়ার জন্য গাড়িতে ওঠার মুখে তাঁকে শুভাপ্রসন্নর আত্মগোপন করা নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। গাড়িতে ওঠার ঠিক আগে এমন প্রশ্ন শুনে মুচকি হাসেন কুণাল। কিছু বলার আগেই পুলিশ কার্যত ঠেলে গাড়ির ভিতরে পাঠিয়ে দেয় তাঁকে। তার পরেই শুরু হয় মুখ আটকাতে পুলিশের সম্মিলিত প্রয়াস! সেটা কী?

কুণাল যাতে পুলিশ ভ্যানের জানলা দিয়েও যাতে সংবাদমাধ্যমকে কিছু বলতে না পারেন, তার জন্য অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার প্রদীপ দামের নেতৃত্বে এক দল পুলিশকর্মী গাড়ির গায়ে থাপ্পড় মারতে শুরু করেন। আদালত চত্বর ভরে ওঠে বিকট ‘দুম দুম’ শব্দে। এ সময় কুণালকে বলতে শোনা যায়, “এটা কী হচ্ছে!” দুম দুম শব্দের মধ্যেই পুলিশের ভ্যান রওনা দেয় প্রেসিডেন্সি জেলের দিকে।

সিবিআই সারদা মামলার তদন্তভার নেওয়ার পর থেকেই আদালতের ভিতর-বাইরে বারবার বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন কুণাল। আদালতের ভিতরে কিছু করতে না পারলেও বাইরে তাঁর মুখ আটকাতে ‘হা রে রে রে’ করে চেঁচাত পুলিশ। তা নিয়ে আদালতে কুণাল বলেছিলেন, “ছোটবেলায় শুনেছি, বর্গিরা হা রে রে রে করে চেঁচাত। এখন দেখি পুলিশও তাই করছে।” পুলিশের এমন আচরণে কেউ কেউ বলেছিলেন, আগে ধনীরা মারা গেলে দলবেঁধে কান্নার (রুদালি) জন্য লোক ভাড়া করে আনা হতো। এখন শাসক দলের জন্য পুলিশও একই কাজ করছে।

তার পরে দেখা গেল, শুধু কুণাল নন, অন্যদের বেলাতেও একই পথ নিচ্ছে পুলিশ। প্রাক্তন তৃণমূল নেতা আসিফ খানকেও একই শব্দের মুখে পড়তে হয়। তিনি অভিযোগের ব্যাপারে কুণালকেও ছাপিয়ে গিয়েছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীকে ‘ডাকাতরানি’ বলতেও পিছপা হননি। এই অবস্থায় তাঁর কথা চাপা দিতে গাড়িতে ধাঁই ধপাধপ বাজনা বাজিয়েছিল পুলিশ।

বৃহস্পতিবার কুণালের বেলাতেও দেখা গেল একই দৃশ্য। হা রে রে রে হাঁকা পুলিশ গাড়ি বাজাল দুম দুম করে।

সব দেখেশুনে পুলিশের একাংশ প্রশ্ন তুলেছে, ব্যাপার কী? এত দিন মুখ্যমন্ত্রী বা রাজ্যের অন্য কোনও মন্ত্রী সম্পর্কে কুণাল যাতে কিছু বলতে না পারে, সে জন্য পুলিশ আওয়াজ করত। কিন্তু শুভাপ্রসন্ন তো কোনও মন্ত্রী-আমলা নন। তা হলে তাঁর নাম প্রকাশ্যে এলে পুলিশের এত অস্বস্তি কেন?

শুভাপ্রসন্নকে কেন্দ্রীয় সংস্থা ইডি বারবার তলব করায় এবং তাঁর বয়ানে অসঙ্গতি ধরা পড়ার খবর প্রকাশ্যে আসার পর থেকে কিছুটা দূরত্ব রাখতে চাইছেন খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। পরপর কয়েকটি জনসভায় দলের নেতাদের বিরুদ্ধে সিবিআই ও বিজেপির চক্রান্তের কথা বললেও শাসক দল ঘনিষ্ঠ শিল্পীর নাম মুখে আনেননি মমতা। প্রশ্ন উঠেছে, তার পরেও কেন আচরণ পুলিশের?

এ নিয়ে কোনও ব্যাখ্যাই দিতে পারছেন না লালবাজারের পুলিশকর্তারা। তাঁদের অনেকেই বলছেন, সরকারি ভাবে এমন কোনও নির্দেশ দেওয়া হয়নি। তবে ব্যক্তিগত স্তরে কোনও কোনও পুলিশকর্তা এমন নির্দেশ দিতে পারেন। তবে শুভার বেলাতেও এমন কোনও ‘ব্যক্তিগত’ নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল কি না, তা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারেনি।

রাজনীতিকদের ব্যাখ্যা, কুণাল কী নিয়ে মুখ খুলছেন, সেটা বড় নয়। তিনি মুখ খুললেই বাজনা বাজানোর পথ নিচ্ছে পুলিশ। হয়তো তেমনই কোনও ‘নির্দেশ’ রয়েছে তাদের উপরে। তাই কোনও ঝুঁকি নিতে চাইছে না তারা। বলা তো যায় না, শুভা প্রসঙ্গেও কুণাল হয়তো মমতাকে টেনে আনলেন। রিস্ক নেওয়া কি ঠিক!

এ দিনই আবার সারদা মামলার চার্জ গঠন হওয়ার কথা ছিল। তবে নগর দায়রা আদালতের সিবিআই বিচারক অরবিন্দ মিশ্র ছুটিতে থাকায় তা আর হয়নি। বিচারক মিশ্রের জায়গায় এ দিন শুনানির ভার দেওয়া হয়েছিল বিচারক বরুণ রায়কে। আদালতে সুদীপ্ত সেন ও কুণাল ঘোষের আইনজীবীরা জানান, তাঁরা জামিনের আর্জি জানাচ্ছেন না। তবে দেড় বছর ধরে আটকে থাকা দেবযানী মুখোপাধ্যায়ের জন্য জামিনের আর্জি জানানো হয়। তাঁর কৌঁসুলির যুক্তি, পুরনো মামলাগুলির ভিত্তিতেই নতুন এফআইআর দায়ের করেছে সিবিআই। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা অবশ্য এর বিরোধিতা করে। জামিনের আবেদন জানান সারদার অন্যতম শীর্ষ কর্তা মনোজ নাগেলও।

দু’পক্ষের আদালত রায় দিয়েছে, আগামী ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত সুদীপ্ত, কুণাল, দেবযানী জেল হেফাজতেই থাকবেন। সে দিনই ওই মামলার পরবর্তী শুনানি।

kunal ghosh TMC saradha scam cbi Subhaprasanna state news online state news saradha scam issue state government mamat banerjee police kolkata police tricks
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy